Thank you for trying Sticky AMP!!

গণবিক্ষোভে দ্বিতীয় দিনের মতো অচল হংকং বিমানবন্দর

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিক্ষোভকারীদের অবস্থানে ফ্লাইট বাতিলের আগে এক যাত্রী তাঁর ব্যাগেজ নিয়ে বের হওয়ার চেষ্টা করছেন। ছবি: এএফপি

সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের বিক্ষোভে অচল হয়ে পড়েছে হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। এশিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই বিমানবন্দরে গতকাল মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনের মতো বিক্ষোভকারীরা অবস্থান নিলে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন উড়োজাহাজের ফ্লাইট বাতিল হয়ে যায়। পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের এলোপাতাড়ি ধাক্কাধাক্কি, মারামারি চলতে থাকে। এর আগে গত সোমবার বিক্ষোভকারীদের কারণে দেড় শতাধিক ফ্লাইট বাতিল হয়ে যায়।

আজ বুধবার বিবিসি অনলাইনের খবরে বলা হয়েছে, গতকাল মধ্যরাতের আগে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী আবারও বিমানবন্দরের টার্মিনাল ভবনগুলোয় অবস্থান নিলে সেখানে অল্প সময়ের মধ্যে দাঙ্গা পুলিশ উপস্থিত হয়। বিমানবন্দরের ভেতরে অন্তত তিনজনের ওপর হামলা চালায় বিক্ষোভকারীরা। বলা হচ্ছে, ওই তিনজনের কাছে থাকা পরিচয়পত্র থেকে জানা যায়, তাঁরা মূল ভূখণ্ড চীন থেকে আসা পুলিশ কর্মকর্তা।

এর আগে গত রোববারের বিক্ষোভ ঠেকাতে মিছিলে ছদ্মবেশী পুলিশ পাঠানোর তথ্য এক ভিডিওর মাধ্যমে প্রকাশ হয়ে পড়ে। পরদিন সোমবার ঘটনাটি স্বীকার করে পুলিশ জানায়, পাথর ও পেট্রলবোমা ছুড়ছে—এমন সহিংস বিক্ষোভকারীদের গ্রেপ্তার করতে ছদ্মবেশী পুলিশ পাঠানো হয়েছিল।

তবে চীনের গ্লোবাল টাইমস পত্রিকার সম্পাদক দাবি করেছেন, হামলার শিকার হওয়া তিনজনের একজন তাঁর পত্রিকার প্রতিবেদক। শুধু খবর সংগ্রহের জন্যই তিনি সেখানে ছিলেন।

খবরে বলা হয়, হংকং বিমানবন্দর বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ত বিমানবন্দর। গত শুক্রবার থেকে সেখানেও বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। দুই মাস ধরে হংকংয়ে সরকারবিরোধী গণ–আন্দোলন চলছে। এ আন্দোলন শেষ হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। সবশেষ বিমানবন্দরকে ঘিরে বিক্ষোভ শুরু করেছে আন্দোলনকারীরা। গত জুন মাসে প্রস্তাবিত প্রত্যর্পণ বিলের প্রতিবাদে ব্যাপক পরিসরে সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু হয়। বিলটি স্থগিত করা হলেও আন্দোলন থামেনি। গণতন্ত্রের পক্ষে আরও বেশি দাবিদাওয়া নিয়ে বিক্ষোভ চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। চীনের বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল হিসেবে হংকং যে স্বাধীনতা ভোগ করছে, তা খর্ব হচ্ছে বলে আশঙ্কা রয়েছে বিক্ষোভকারীদের।

হংকংয়ের নেতা ক্যারি ল্যাম শুরুতে বিক্ষোভকারীদের সতর্ক করে বলেছিলেন, হংকং ‘বিপজ্জনক একটি পরিস্থিতিতে পৌঁছেছে’ এবং বিক্ষোভের সময়ের সহিংসতা এটাকে নিচের দিকে নামিয়ে দিচ্ছে, যা থেকে ফেরার পথ নেই।

এর মধ্যে চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম সীমান্ত শহর শেনঝেনে সামরিক বাহিনী জড়ো করার ছবি প্রকাশ করেছে। রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সিনহুয়ার খবরে বলা হয়েছে, হংকংয়ের রাস্তায় ‘দস্যুরা সন্ত্রাসের পরিস্থিতি’ তৈরি করেছে।

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের ধাক্কাধাক্কি ও মারামারি। ছবি: রয়টার্স

পুলিশের কড়া সতর্কবার্তা সত্ত্বেও বিক্ষোভকারীরা গতকাল বিমানবন্দরে অবস্থান নেয়। তারা লাগেজ ট্রলি জড়ো করে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে এবং মেঝেতে গণহারে বসে পড়ে। পুরো এলাকায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। অনেক যাত্রীকে এ নিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায়। পরে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ফ্লাইট বাতিলের ঘোষণা দেয়। বিমানবন্দরের ওয়েবসাইটে দেওয়া এক বিবৃতিতে যাত্রীদের ‘যত দ্রুত সম্ভব’ টার্মিনাল ভবন ত্যাগ করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

আজ বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিমানবন্দরের কর্মকাণ্ড পরিচালনায় হস্তক্ষেপ করে বা প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে—এমন বিক্ষোভকারীদের দমনে তাদের বিশেষ হুকুম জারির ক্ষমতা রয়েছে। তবে এটা কীভাবে কার্যকর হবে, তা স্পষ্ট করা হয়নি।

সহিংস পরিস্থিতির ব্যাপারে গতকাল আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে হংকং নেতা ক্যারি ল্যাম সজল চোখে বলেন, ‘এক মিনিট ভেবে বলুন, শহরের দিকে তাকান, আমাদের বাড়ি...আপনারা কি সত্যি এটাকে এভাবে অতল গহ্বরের দিকে ঠেলে দেওয়া দেখতে চান?’ ওই সময় তিনি স্থানীয় সাংবাদিকদের প্রশ্নবাণের মুখে পড়েন। অনেকে বিক্ষোভ নিয়ে তাঁর ভূমিকার নিন্দা জানান। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ক্যারি ল্যাম বলেন, গত সপ্তাহের বিক্ষোভের সময় গুরুতর আহত ব্যক্তিদের খবর জেনে তিনি ‘মর্মাহত’ হয়েছেন। তবে পুলিশের মারমুখী আচরণের সমালোচনার জবাবে তিনি পুলিশের পক্ষ সমর্থন করে বলেন, তারা ‘চরম পরিস্থিতির’ মধ্যে কাজ করেছে।

হংকংয়ের আন্দোলনের প্রতিক্রিয়ায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প টুইটারে বলেছেন, সীমান্তে চীনের সেনা মোতায়েনের বিষয়টি সম্পর্কে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা তাঁকে অবহিত করেছে। তিনি বলেন, প্রত্যেকের শান্ত ও নিরাপদ থাকা উচিত। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, এটা শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হবে বলে তিনি আশা করেন।

জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনার মিশেল বাচলেট বিক্ষোভকারীদের দমনে পুলিশের ভূমিকা তদন্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন।