Thank you for trying Sticky AMP!!

আফগানিস্তানে ছেলের কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে তাঁকে

ছেলের ছদ্মবেশে জীবনসংগ্রাম চালান সিতারা ওয়াফাদার। ছবি: এএফপি

মেয়ে হয়েও তিনি ছেলের ভূমিকায় কাজ করে যাচ্ছেন। আর এটা করতে তাঁকে বাধ্য করছেন তাঁর বাবা-মা।

তাঁর নাম সিতারা ওয়াফাদার। ১৮ বছর বয়সের তরুণী। এক দশকের বেশি সময় ধরে সিতারার বাবা-মা তাঁকে ছেলের বেশ ধরতে বাধ্য করছেন। কারণ, তাঁদের কোনো পুত্রসন্তান নেই।

সিতারারা পাঁচ বোন। বাড়িতে মেয়ে আর বাইরে ছেলে এমন দ্বৈত ভূমিকার জন্য তিনি ‘বাছা পোশি’ হিসেবে পরিচিত। অবশ্য ছেলের ছদ্মবেশ ধরায় পিতৃতান্ত্রিক দেশটিতে তিনি নিরাপদে সব কাজ করতে পারেন।

গতকাল সোমবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়, আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলে নাঙ্গারহার প্রদেশে একটি গ্রামের দরিদ্র পরিবারে বসবাস করেন সিতারা ওয়াফাদার। তিনি স্থানীয় একটি ইটভাটায় কাজ করেন। জীবনের বেশির ভাগ সময় সিতারা নকল ছেলে সেজে পার করেছেন। রোজ সকালে অন্য আট-দশটা ছেলের মতো শার্ট ও ট্রাউজার পরে কাজে যান। মাঝেমধ্যে ছোট করে ছাঁটা বাদামি রঙের চুল ঢেকে রাখেন স্কার্ফে। আর নিজের পরিচয় গোপন রাখার জন্য অনেক সময় পুরুষালি গলায় কথা বলেন।

এএফপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সিতারা বলেন, ‘আমি কখনো চিন্তা করতে পারি না আমি মেয়ে। আমার বাবা সব সময় বলেন, সিতারা আমার বড় ছেলের মতো। মাঝেমধ্যে আমি তাঁর বড় ছেলের মতো সমাজের কোনো কোনো শেষকৃত্যানুষ্ঠানেও যোগ দিই।’ কখনো মেয়ে হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার অনুমতি পাবেন না বলেও মনে করেন সিতারা।

রক্ষণশীল আফগানিস্তানে সিতারার এই দ্বৈত চরিত্রের পেছনে গভীর বেদনার ইতিহাস আছে। দেশটিতে মেয়েদের চেয়ে ছেলেদের কদর বেশি। নারীদের বেশির ভাগ সময় নিজ বাড়ির গণ্ডির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে হয়। বাবা ছাড়া তাঁদের পরিবারের কোনো পুরুষ মানুষ নেই। বাইরের সমাজে মেয়েদের পদে পদে সমস্যা সৃষ্টি হয়, যৌন হয়রানির শিকার হতে হয়। কিন্তু ছেলে হলে আর এসব সমস্যা স্পর্শ করতে পারে না। মূলত মেয়েদের জটিলতা এড়াতে এবং দরিদ্র পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা করতেই তাঁর এই ছদ্মবেশী জীবনযুদ্ধ।

অবশ্য দেশটিতে যেসব নারী দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে বিবেচিত হন, তাঁরা ছেলেদের মতো স্বাধীনতা উপভোগ করতে পারেন। অধিকাংশ ‘বাছা পোশি’ বা পরিবারের আদুরে শিশুরা বয়ঃসন্ধির পর ছেলের পোশাক পরা বন্ধ করে দেয়। সিতারা বলেন, ‘ইটভাটায় নিজেকে রক্ষা করতেই তিনি ছেলের পোশাক পরেন। যখন আমি কাজে যাই, বেশির ভাগ মানুষ বুঝতেই পারে না, আমি একজন মেয়ে।’

দিনমজুর সিতারা ওয়াফাদার বলেন, ‘যদি তারা বুঝতে পারত আমি ১৮ বছরের তরুণী, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ইটভাটায় কাজ করি, তাহলে আমাকে অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে হতো। এমনকি আমি অপহরণের শিকার হতাম।’

সিতারার বয়স যখন আট বছর, তখন থেকে তিনি ইটভাটায় কাজ শুরু করেন। তাঁর বড় চার বোনের বিয়ে হওয়ার আগ পর্যন্ত স্কুলে যাওয়ার পরিবর্তনে ইটভাটায় ইট তৈরির কাজই করেছিলেন। আর সেই পথেই এখন আছেন সিতারা। সকাল সাতটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত দিনে প্রায় ৫০০ ইট তৈরি করেন তরুণের ছদ্মবেশী এই তরুণী। তিনি বলেন, ‘এই কাজ করে আমি লজ্জিত নই। কিন্তু মানুষ আমার বয়স নিয়ে কথা বলে। তারা বলে, তুমি সাবালক হয়ে গেছ এবং এখন তোমার ইটভাটায় কাজ করা ঠিক নয়।’

এবার সিতার প্রশ্ন ছুড়ে বলেন, ‘কিন্তু আমার কী করা উচিত, আমার বিকল্প কোনো পথ নেই।’

সিতারার বাবা নূর বলেন, ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহ আমাকে কোনো পুত্রসন্তান দেননি। তাই তাকে (সিতারা) ছাড়া আমার কোনো বিকল্প পথ নেই।’

এএফপিকে নূর বলেন, ‘যদি আমার একটি ছেলে থাকত, আমাকে এই ধরনের সমস্যা মুখোমুখি হতে হতো না। আমার মেয়ের জীবন শান্তিপূর্ণ ও সুন্দর হতো।’ তিনি আরও বলেন, ‘পরিবারের ভরণপোষণ এবং ঋণ পরিশোধের সব দায়িত্ব আমার ও কন্যার কাঁধে।’

সিতারার মা ফাতিমা প্রত্যাশা করেন তাঁর মেয়ে বাড়িতে নারীদের পোশাক পরবেন। কিন্তু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সিতারাকেই আনতে হয় এবং মাকে চিকিৎসকের কাছে নিতে হয়। সংসারের অন্যান্য কাজ করতে হয়। কারণ ফাতিমার স্বামী নূর বৃদ্ধ হয়ে গেছেন।

অনেক বছর ছেলের ছদ্মবেশে সংসার চালিয়েছেন। আর কত? তাই একটি ভাইয়ের শূন্যতা তিনি ভীষণভাবে অনুভব করেন। ভাই থাকলে তাঁর চুলগুলো লম্বা হতে পারত, তিনি স্কুলে যেতে পারতেন। সিতারা আফসোস করে বলেন, ‘আমার যদি একটি ভাই থাকত!’