Thank you for trying Sticky AMP!!

জরুরি অবস্থা কীভাবে সামলাবে জাপান

জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে জরুরি অবস্থার ঘোষণা দিতে পারেন। ছবি: রয়টার্স

জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে স্থানীয় সময় আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে রাজধানী টোকিওসহ দেশের আরও ছয়টি জনবহুল এলাকায় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন। ধারণা করা হচ্ছে আজ মধ্যরাত, অর্থাৎ ৮ এপ্রিল প্রথম প্রহর থেকে এই আদেশ কার্যকর হবে। এক মাসের জন্য তা বলবৎ থাকবে।

টোকিওসহ জরুরি অবস্থার আওতায় আসা অন্যান্য স্থানীয় প্রশাসন এর মধ্যে নিজ নিজ এলাকায় পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে। টোকিওর গর্ভনর ইয়ুরিকো করাতে এক সংবাদ সম্মেলনে জরুরি অবস্থার অধীনে রাজধানীর জন্য কার্যকর হতে যাওয়া পদক্ষেপের রূপরেখা সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরছেন। স্থানীয় সরকার এর আগেই নাইট ক্লাব, পানশালা, বিনোদন কেন্দ্র, বিশ্ববিদ্যালয় ও থয়িটোর হল বন্ধ রাখার আহ্বান জানানোর ঘোষণা দিয়েছিল।

টোকিওর গর্ভনর বলছেন, এর বাইরে স্কুল, নার্সারি, শরীরর্চচা কেন্দ্র, শপিংমল, চুলকাটার দোকান, জাপানি স্টাইলের ইজাকায়া বার, পাচিঙ্কো পনিবল র্পালার ও আরও কিছু স্থাপনা বন্ধ রাখার অনুরোধ করা হবে। মেট্রোপলিটন সরকার এ ছাড়া দুজন বা তার বেশি লোকজনের সমাগম হওয়া ব্যক্তিগত সব রকম অনুষ্ঠান বন্ধ রাখার অনুরোধও নাগরিকদের জানাবে। প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে না যাওয়ার পরার্মশ দেওয়া হবে।

অন্যদিকে হাসপাতাল, ক্লিনিক, ফার্মেসি, সুপারমার্কেট, রেস্টুরেন্টের মত খাওয়াদাওয়া করার জায়গা, গণ পরিবহন ব্যবস্থা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং কারখানার মতো দৈনন্দিন জীবনে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত সুযোগ সুবিধাগুলো চালু রাখার অনুমতি দেওয়া হবে। তবে সে রকম জায়গায় যাওয়ার প্রয়োজন হলে ব্যক্তিগত সুরক্ষা নিশ্চিত করে নেওয়ার অনুরোধ নাগরিকদের প্রতি মেট্রোপলিটন সরকার জানাতে শুরু করেছে।

আগামীকাল থেকে জাপানে নিয়ন্ত্রিত জীবন নাগরিকদের জন্য শুরু হতে যাচ্ছে। তবে করোনাভাইরাসের বিস্তারের কারণে এ রকম আদেশ সবাই মেনে নিয়েছেন। গতকাল পর্যন্ত জাপানে প্রমোদ তরী ডায়মন্ড প্রিন্সেসের ৭০০ জনসহ মোট ৪ হাজার ৮০০ এর বেশি মানুষের করোনাভাইরাস সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়া নিশ্চিত করা হয়েছে। এ পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা হচ্ছে ১০৮।

জরুরি অবস্থা জারির অর্থনৈতিক প্রভাব কী হতে পারে, বিশেষজ্ঞরা ইতিমধ্যে সেই হিসাব কষতে শুরু করেছেন। অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করে দিয়েছেন যে, ভোক্তা ব্যয় ও উৎপাদন কর্মকাণ্ডের ওপর মারাত্মক আঘাত হয়ে এটা দেখা দিতে পারে। এর ফলে ভোক্তা ব্যয় সংকুচিত হবে। উৎপাদন প্রক্রিয়া মন্থর হয়ে আসবে।

দাই-ইচি লাইফ রিসার্চ ইন্সটিটিউটের গবেষক হিদেও কুমানো মনে করছেন, জরুরি অবস্থা কার্যকর হওয়া জেলাগুলোতে কেনাকাটা কমে আসবে। স্থানীয় অনেক এলাকায় কলকারখানায় উৎপাদন সীমিত হয়ে যাবে। জাপানের শ্রমবাজারে চাপ সৃষ্টি হবে। আঞ্চলিক অর্থনীতি সচল রাখতে কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণের জন্য তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

মিজুহো রিসার্চ ইন্সটিটিউটের প্রধান অর্থনীতিবিদ কাৎসুইয়ুকি হাসেগাওয়া বলেছেন, পর্যটকের সংখ্যা ব্যাপকভাবে হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি রাজধানী টোকিও ও আশপাশের এলাকাগুলোতে পাঠানো পণ্যের চালান কমে যাবে। এ অবস্থায় আঞ্চলিক অর্থনীতি মারাত্মক চাপের মধ্যে পড়বে। অর্থনৈতিক উদ্ধার পরিকল্পনা সরকারের ঠিক করে নেওয়া প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।

লকডাউনে টোকিওর অর্থনৈতিক খাতে কেমন প্রভাব পড়বে বিশেষজ্ঞরা সে হিসাবও শুরু করেছেন। টোকিও মেট্রোপলিটন সরকারের হিসাব অনুযায়ী জাপানের রাজধানীর বার্ষিক মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের পরিমাণ হচ্ছে শত লাখ ইয়েনের কাছাকাছি। ডলারের হিসাবে যা হচ্ছে আনুমানিক ৯১ হাজার ৭০০ কোটি ডলার। দেশের মোট জাতীয় উৎপাদনের ২০ শতাংশের প্রতিনিধিত্ব এটা করছে।
এর আগে মনে করা হচ্ছিল করোনাভাইরাস সংক্রমণের ফলে বিশেষ করে রাজধানী টোকিওতে ভোক্তা ব্যয়ের পাশাপাশি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড মন্থর হয়ে আসায় এপ্রিল-জুন ত্রৈমাসিকে অর্থনীতি ২.৭ শতাংশ সঙ্কুচিত হবে। তবে অর্থনীতিবিদরা এখন মনে করছেন জরুরি অবস্থায় সব রকম কর্মকাণ্ড আরও কিছুটা থমকে দাঁড়ালে কী করা প্রয়োজন সেরকম একটি পরিকল্পনা সরকারের আগাম ঠিক করে রাখা দরকার বলে তারা মনে করছেন।

দাইওয়া গবেষণা ইন্সটিটিউটের গবেষক শুনসুকে কোবাইয়াশি বলেছেন, করোনাভাইরাসের বিস্তারের মুখে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা ভেঙে পড়া এড়িয়ে যাওয়ার জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা হচ্ছে প্রয়োজনীয় একটি পদক্ষেপ। তবে অর্থনীতির ওপর এটা প্রচণ্ড আঘাত হয়ে দেখা দেবে।