Thank you for trying Sticky AMP!!

জাপানি যুবরাজ কী চমক দেখাবেন?

জাপানের সাবেক সম্রাট-সম্রাজ্ঞীর সঙ্গে সদ্য অভিষিক্ত সম্রাট-সম্রাজ্ঞী। জাপানের নতুন সম্রাট নারুহিতো এবং সম্রাজ্ঞী মাসাকো। ছবি: রয়টার্স।

প্রথম, প্রথম আর প্রথম। জাপানের যুবরাজ নারুহিতো ও তাঁর স্ত্রী যুবরাজ্ঞী মাসাকো দেশের সম্রাট পরিবারে অনেক ‘প্রথম’ যোগ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষাজীবন শেষ করা, বেশ কয়েকটি ভাষা জানা এবং বহু বছর বিদেশে বসবাসের অভিজ্ঞতা রাজ পরিবারের সদস্য হিসেবে তাঁদের করেছে অনন্য। এর আগে সম্রাট পরিবারে একসঙ্গে এত গুণের অধিকারী আর কেউ ছিলেন না। জাপানের মানুষ তাঁদের কাছে নতুন কিছু প্রত্যাশা করছেন। দেখা যাক, তাঁরা কী চমক দেখান?

জাপানের সম্রাট-সম্রাজ্ঞী হিসেবে বিশ্বদরবারে নিজেদের তুলে ধরার প্রস্তুতি চলছে তাঁদের। আশা করা হচ্ছে, সম্রাটের দপ্তরকে তাঁরা আরও বেশি আন্তর্জাতিক মানে নিয়ে যাবেন। একই সঙ্গে দেশের সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াবেন।

কূটনীতিক হিসেবে অভিজ্ঞতা রয়েছে ৫৫ বছর বয়সী সম্রাজ্ঞী মাসাকোর। উইলসন সেন্টারের বিশ্লেষক শিহোকো গোতো এ ব্যাপারে বলেন, নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধি হিসেবে রাজপরিবারের এই দুই সদস্যের জন্য প্রচুর সুযোগ রয়েছে সেই সব কারণ দেখার, যা যোগাযোগের বিষয়টাকে কিছুটা হলেও দূরে রেখেছে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে রাজপরিবার কতটা এগিয়ে গেছে, তা উল্লেখ করেন শিহোকো। সম্রাট হিরোহিতো সাধারণ মানুষের কাছে ছিলেন দেবতুল্য। তিনি বলেন, ব্যতিক্রমী পটভূমি থেকে উঠে এসেছে এই দম্পতি। সাধারণ মানুষের বিষয়ে আগ্রহ তাঁদের আছে। এসব মানুষের আরও কাছে যেতে দক্ষতা বাড়াতে হবে।

সম্রাট আকিহিতো ও তাঁর স্ত্রী সম্রাজ্ঞী মিচিকো সাধারণ মানুষের কাছে ছুটে যেতেন। বিশেষত, প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরে ভীতসন্ত্রস্ত ভুক্তভোগীদের সাহায্য করতে এগিয়ে যেতেন তাঁরা। গত দুই শতাব্দীর মধ্যে আকিহিতোই প্রথম কোনো সম্রাট, যিনি অসুস্থতা ও বার্ধক্যের কারণে জীবিত অবস্থায় সিংহাসন ত্যাগ করছেন। পদত্যাগের পর তিনি নিজ দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করেছেন কি না, তা নিয়ে বিস্তর আলোচনা হচ্ছে।

রাজকীয় পারিবারিক সংস্থার সাবেক এক কর্মকর্তা বলেন, ‘স্বভাবতই সম্রাট আকিহিতোর কর্মজীবন নিয়ে দুই ধরনের মতবাদ রয়েছে। এক. সম্রাট হিসেবে তাঁর কাজ ছিল সাধারণ মানুষের কাতারে দাঁড়িয়ে সবার দেখভাল করা, দুই. সম্রাটের একমাত্র কাজই হচ্ছে প্রার্থনা করা। তবে ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে দুটি বিকল্পই আমাদের হাতে আছে বলে আমি মনে করি না। একজন সম্রাট যদি কেবল প্রার্থনায় মগ্ন হয়ে দিন কাটান, তবে মানুষের বিশ্বাস বা সমানুভূতি অর্জন করা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়।’

সম্রাট নারুহিতো (৫৯) তাঁর বাবা-মায়ের পদাঙ্ক অনুসরণ করতে চান। তাঁর মতে, রাজতন্ত্রের এখন সময় এসেছে বর্তমান বিশ্বের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার। পর্যবেক্ষকদের দাবি, নারুহিতো যদি সত্যিই সবার সঙ্গে কথা বলে তাদের কাছে যেতে পারেন, তবে জাপানের অস্তিত্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে রাজপরিবারের মর্যাদা বাড়বে।

মনোরোগ বিশেষজ্ঞ এবং রাজপরিবারের নারীদের নিয়ে বইয়ের লেখক রিকা কায়ামা বলেন, ‘সময়ের চাহিদায় রাজপরিবারের সদস্যদের এখন প্রয়োজনীয় মাত্রায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যুক্ত হওয়ার সময় এসেছে। যদি বার্তা প্রকাশের সুযোগ না থাকে, তবে ইনস্টাগ্রামে ছবি দিতে পারেন তাঁরা।’ দেশ-বিদেশের দর্শকদের সঙ্গে সেলফি নেওয়া নারুহিতো ও মাসাকো যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এসব ছবি প্রকাশ করতে পারেন বলে তিনি মনে করেন।

অনেক দিন ধরে একধরনের সমস্যায় ভুগেছেন মাসাকো। তা হচ্ছে একধরনের মানিয়ে নেওয়ার সমস্যা। বিশেষত, এ কারণেই প্রায় এক দশক ধরে জনসমক্ষে বের হননি মাসাকো। অন্যদিকে, সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে যাওয়ার ক্ষমতায় সাবেক সম্রাজ্ঞী মিচিকোকে ‘নিখুঁত’ বলা হতো। প্রায়ই দরিদ্র বা সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্মদিনের শুভেচ্ছা পাঠানোর রীতি দেখে ধারণা করা হচ্ছে, মাসাকো খুব দ্রুতই তাঁর সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারবেন।

মধ্যযুগীয় নদী পরিবহন ব্যবস্থার ওপর অধ্যয়ন করা নারুহিতো পরিবেশগত বিষয়ে দারুণ সচেতন। জলবায়ু পরিবর্তন নিয়েও কথা বলেন তিনি। পরিবর্তনবিমুখ জাপানের পালে নতুন হাওয়া লাগাতে প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন তিনি। শুরুর দিকে অবশ্য আকিহিতো ও মিচিকোও সমালোচিত হয়েছিলেন। মিচিকো যখন হাঁটু গেড়ে মানুষকে সান্ত্বনা দিতেন কিংবা কারও সঙ্গে করমর্দন করতেন, তখন সাম্রাজ্যের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে।

এখন সময় কেবল অপেক্ষার। জাপানিরা অধীর আগ্রহে প্রতীক্ষা করছেন নারুহিতো-মাসাকোর পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য। তাঁদের প্রত্যাশা, নতুন এই প্রজন্ম পারবে ব্যক্তিত্বের ছাপ ফেলে সেকেলে রীতিনীতি মুছে মানুষের সঙ্গে দূরত্ব কমিয়ে শান্তির সুবাতাস বইয়ে দিতে।