Thank you for trying Sticky AMP!!

জাপানের পূর্বাঞ্চলে করোনা, পশ্চিমে বন্যার দাপট

জাপানের সাগা রেলস্টেশনের পাশে বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়া সড়ক ধরে হেঁটে চলেছেন এক ব্যক্তি। ছবি: রয়টার্স

পূর্ব জাপানে করোনাভাইরাসের বাড়াবাড়ি চলতে থাকার মুখে জাপানের পশ্চিমাঞ্চলকে এখন প্রচণ্ড বর্ষণ থেকে শুরু হওয়া বন্যা ও ভূমিধসের মতো দুর্যোগের মুখে পড়তে হচ্ছে। শনিবার ভোররাত থেকে শুরু হওয়া মুষলধারার বর্ষণে কিউশু দ্বীপের কুমামোতো জেলায় কয়েকটি নদী পাড় ভেঙে আশপাশের এলাকা তলিয়ে দিলে এলাকাবাসী বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে উঠে আসতে বাধ্য হয়। পাহাড়ি এলাকাগুলোতে একই সঙ্গে কাদার ধস নামায় বিপদ আরও ঘনীভূত হয়ে ওঠে। কুমামোতো জেলার স্থানীয় কয়েকটি কর্তৃপক্ষ জানায়, দুর্যোগে ২৫ ব্যক্তির মৃত্যু ইতিমধ্যে নিশ্চিত করা হয়েছে এবং এ ছাড়া আরও ১৭ জনের প্রাণহানির আশঙ্কা করা হচ্ছে।

অন্যদিকে প্রচণ্ড বর্ষণ কিউশু দ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের আরও কয়েকটি জেলায় ছড়িয়ে পড়লে বন্যা ও ভূমিধসে সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত মোট ৪৪ জনের মৃত্যু সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেছে। কুমামোতো, মিয়াজাকি ও কাগোশিমা জেলার প্রায় আড়াই লাখ অধিবাসীকে আজ বিকেলে বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে উঠে আসার নির্দেশ দেওয়া হয়। জাপানের মতো দেশে অতিবর্ষণ থেকে শুরু হওয়া বন্যা ও ভূমিধসে এত বেশিসংখ্যক মানুষের প্রাণহানি এখন তাই প্রকৃতির আরও বড় ধরনের বিপর্যয়ের ভীতি অঞ্চলজুড়ে ছড়িয়ে দিচ্ছে। পশ্চিম জাপান অবশ্য করোনাভাইরাসের বিস্তার অনেকটাই আয়ত্তে নিয়ে এসেছে। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ এখন সেই সাফল্যকে ম্লান করে দিতে পারে বলেও অনেকে মনে করছেন।

কুমামোতো জেলায় ইতিমধ্যে হাজার দেড়েক মানুষ বন্যা ও ভূমিধস থেকে রক্ষা পেতে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে উঠে এসেছে। আশ্রয় গ্রহণকারী লোকজনের জন্য যতটা সম্ভব দূরত্বে অবস্থানের ব্যবস্থা করে দেওয়া হলেও মূলত বিশাল হলঘরে অনেক মানুষকে একসঙ্গে থাকতে হচ্ছে বলে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া নিয়েও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। সে রকম আশঙ্কা থেকে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার গুরুত্ব সম্পর্কে আশ্রয়গ্রহণকারী লোকজনকে সতর্ক করে দেওয়া ছাড়াও দূষণমুক্ত রাখার বিভিন্ন পদক্ষেপ সেখানে জোরদার করে নেওয়া হয়েছে। তবে তা সত্ত্বেও দুর্গত লোকজনের মধ্যে কেউ কেউ আশঙ্কামুক্ত না হতে পেরে গাড়িতে রাতযাপন করছে। এদের কেউ কেউ ধারণা করছে, দুর্যোগে যোগাযোগব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগে বাইরে থেকে আসা লোকজন হয়তো করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে দিতে পারে, যদিও কর্তৃপক্ষ সে রকম সম্ভাবনা এড়িয়ে যেতে প্রয়োজনীয় সতর্কতা বজায় রাখছে।

অতিবর্ষণ থেকে শুরু হওয়া প্রাকৃতিক দুর্যোগ শুরুতে কুমামোতো জেলায় সীমিত থাকলেও বর্ষাকালের ভারী বর্ষণ ক্রমেই দক্ষিণ-পশ্চিম দিক বরাবর সরে যেতে থাকলে আশপাশের অন্যান্য কয়েকটি জেলাতেও এখন বিপদ দেখা দিচ্ছে। এলাকাবাসীকে বিপদমুক্ত রাখতে কিউশু দ্বীপের সর্বদক্ষিণের কাগোশিমা জেলা ইতিমধ্যে ১০০টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু করেছে এবং নিরাপদ আশ্রয়ে উঠে আসার আহ্বান জনগণের প্রতি জানিয়েছে। তবে নগর কর্তৃপক্ষ বলছে, এখন পর্যন্ত খুব স্বল্পসংখ্যক মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে উঠে উঠেছে।

এদিকে জাপানের আবহাওয়া এজেন্সি আজ বিকেলে কিউশু দ্বীপের নাগাসাকি, সাগা ও ফুকুওকা জেলার জন্য ভারী বৃষ্টির পঞ্চম ধাপের সতর্কসংকেত জারি করেছে। এটা হচ্ছে সর্বোচ্চ মাত্রার সতর্কসংকেত এবং এলাকাবাসীকে আরও বেশি সতর্ক থাকার আহ্বান এর মধ্যে দিয়ে জানানো হয়। প্রয়োজন মনে করলে আশ্রয়কেন্দ্রে উঠে আসার উপদেশ এদের দেওয়া হয়েছে।

জাপানে এতটা ভারী বৃষ্টি কয়েক দশকের মধ্যে একবার হতে দেখা যায়। পাহাড়ি অঞ্চলগুলোতে প্রচণ্ড বর্ষণ থেকে কাদা ও মাটির ধস নামলে প্রাণহানির সংখ্যা সাধারণত বেড়ে যায়। কুমামোতোর দুর্গম পাহাড়ি জায়গাগুলো করোনামুক্ত থাকলেও প্রাকৃতিক দুর্যোগ এখন হঠাৎ করেই মানুষের জীবনের ওপর হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে।

এদিকে জাপানের পশ্চিমাঞ্চল, বিশেষ করে রাজধানী টোকিওতে করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়া নতুন রোগীর সংখ্যা আজ টানা পঞ্চম দিনের মতো ছিল ১০০র ওপরে। টোকিওতে আজ ১০২টি নতুন সংক্রমণ নিশ্চিত করা হয়। ইয়ুরিকো কোইকে গভর্নর হিসেবে পুনরায় নির্বাচিত হওয়ার প্রথম দিনে এই শতাধিক সংক্রমণের হিসাব এ মুহূর্তে তাঁর করণীয় অগ্রাধিকার আরও স্পষ্টভাবে নিশ্চিত করে দিচ্ছে। গতকাল রাতে বিজয় নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পর আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছিলেন, করোনার বিস্তার সামাল দেওয়ার ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব তিনি আরোপ করবেন। তবে লকডাউন বা অন্য কোনো কঠোর পদক্ষেপ না নিয়ে সেই লক্ষ্য তিনি কীভাবে অর্জন করবেন তা পরিষ্কার নয়। অর্থনীতির ক্ষতি এড়িয়ে যেতে কঠোর পদক্ষেপ তিনি নিতে চাইছেন না। তবে পরিস্থিতির আরও অবনতি হলে সীমিত পর্যায়ে হলেও সে রকম কিছু হয়তো তাঁকে করতে হতে পারে।