Thank you for trying Sticky AMP!!

খাসোগিকে হত্যা প্রমাণে আঙুল কেটে যুবরাজ সালমানের কাছে নিয়েছিল ঘাতক দল

জামাল খাসোগি হত্যার মিশন সফল হয়েছে প্রমাণ করতে ঘাতক দলের সদস্যরা তাঁর আঙুল সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সামনে হাজির করেছিলেন। ছবি: ফাইল ছবি

সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে হত্যার পর তাঁর একটি আঙুল সৌদি আরবে নিয়ে গিয়েছিলেন ঘাতক দলের সদস্যরা। হত্যা মিশন সফল হয়েছে প্রমাণ করতেই সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান এই আদেশ দিয়েছিলেন। রাজপরিবারের ঘনিষ্ঠ সূত্রের বরাত দিয়ে ইরানের তেহরান টাইমস এবং যুক্তরাজ্যর মিরর ডট কমের প্রতিবেদনে এমন দাবি করা হয়েছে।

কিছু আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে বলে হয়েছে, খাসোগির কাটা আঙুল সৌদি যুবরাজ সালমানের কাছে উপস্থাপন করা হয়েছিল। রাজপরিবারের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, ‘যুবরাজ সালমান সব সময়ই বলে থাকেন, যেসব লেখক তাঁর সমালোচনা করবেন, তাঁদের আঙুল তিনি কেটে ফেলবেন। সাংবাদিক জামাল খাসোগির সঙ্গে এমনটাই ঘটেছে বলে ধারণা করা যায়।’ 
তবে খাসোগির কাটা আঙুল সালমানের কাছে উপস্থাপনের পর তা কোথায় রাখা হয়েছে, তা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়নি।

২ অক্টোবর তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটে ব্যক্তিগত কাগজপত্র আনার প্রয়োজনে ঢোকার পর থেকে নিখোঁজ ছিলেন সৌদির খ্যাতনামা সাংবাদিক জামাল খাসোগি। শুরু থেকে তুরস্ক দাবি করে আসছে, খাসোগিকে কনস্যুলেট ভবনের ভেতর সৌদি চরেরা হত্যা করেছে। গত বছর সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ক্ষমতা গ্রহণের পর রোষানলে পড়েন খাসোগি। তিনি দেশ ছেড়ে স্বেচ্ছানির্বাসনে চলে যান যুক্তরাষ্ট্রে। ওয়াশিংটন পোস্টে যুবরাজ মোহাম্মদের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে একের পর এক কলাম লেখেন। অভিযোগ উঠেছে, যুবরাজের নির্দেশে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় এ হত্যা সংঘটিত হয়েছে।

এর ১৭ দিন পর জামাল খাসোগিকে ইস্তাম্বুল দূতাবাসে হত্যা করা হয়েছে বলে জানায় সৌদি আরব। এটা নিয়ে বিশ্বে নানান সমালোচনার মুখে পড়েন সৌদি রাজপরিবার। ক্ষোভ বাড়তে থাকে বিশ্বে। তবে সৌদি আরবের একজন কর্মকর্তা এর আগে বলেছেন, খাসোগি হত্যার পুরো অপারেশন নিয়ে কিছু জানতেন না যুবরাজ। তিনি অবশ্য কাউকে অপহরণ অথবা হত্যার নির্দেশ দেননি। তিন সপ্তাহ ধরে এই সংকট জটিল থেকে জটিলতর হতে থাকে। সঙ্গে সঙ্গে খাসোগির পরিণতি নিয়ে ঘন ঘন অবস্থান পরিবর্তন করে সৌদি আরব। প্রথমে তারা তার হত্যার ঘটনা অস্বীকার করে। তারপর বলে, কনস্যুলেটের ভেতরে হাতাহাতির একপর্যায়ে তিনি মারা গেছেন।

খাসোগির পোশাক পরে অন্য কর্মকর্তা বের হন
এর আগে জামাল খাসোগি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ‘নতুন তথ্য’ দিয়ছিলেন সৌদি আরবের এক শীর্ষ কর্মকর্তা। ১৫ জন সৌদি কর্মকর্তার ইস্তাম্বুল যাওয়া, খাসোগিকে কনস্যুলেটের ভেতরে ভয়ভীতি দেখানো এবং প্রতিরোধের মুখে টুকরো টুকরো করার বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে রয়টার্সকে তথ্য দিয়েছেন ওই কর্মকর্তা।

সৌদি ওই কর্মকর্তা বলেন, কনস্যুলেটের ভেতরে জামাল খাসোগিকে হত্যা করা হয় এবং হত্যার পর খাসোগির পোশাক পরে এক কর্মকর্তা কনস্যুলেট থেকে বের হয়ে যান। জামাল খাসোগি কনস্যুলেট থেকে বেরিয়ে গেছেন—এটা প্রমাণ করতেই এমন কৌশলের আশ্রয় নেওয়া হয়।

সৌদি কর্মকর্তা বলেন, সৌদি আরবের গোয়েন্দা সংস্থার উপপ্রধান মেজর জেনারেল আহমেদ আল-আসিরি ১৫ জনের দল গঠন করেন। জামাল খাসোগির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাঁকে বুঝিয়ে দেশে ফিরিয়ে আনতে চেয়েছিল সরকার। এ জন্য ১৫ সদস্যের এ দলকে ইস্তাম্বুলে পাঠানো হয়। তাঁকে ফিরিয়ে আনতে শান্তিপূর্ণ উপায় অবলম্বনের স্থায়ী আদেশ জারি ছিল ১৫ সদস্যের দলের প্রত্যেক সদস্যের প্রতি। তবে অনুমতি ছাড়া যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাও ছিল ১৫ জনের। দলটির পরিকল্পনা ছিল, ইস্তাম্বুলের বাইরে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত খাসোগিকে আটকে রাখা হবে। শেষ পর্যন্ত যদি রিয়াদে ফিরতে না চান, তবে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হবে।

সৌদি কর্মকর্তারা বলেন, ১৫ জনের দলে অনেক নির্দেশনা ছিল। কিন্তু শুরুতেই সবকিছু ভুল পথে পরিচালিত হতে থাকে। একপর্যায়ে কর্মকর্তারা আদেশ লঙ্ঘন করে দ্রুত সহিংস হয়ে ওঠেন। তাঁরা খাসোগিকে কনসাল জেনারেলের কার্যালয়ে নেন। যেখানে মাহের মুতরেব নামের এক কর্মকর্তার সঙ্গে তিনি তর্কে জড়িয়ে পড়েন। খাসোগি মুতরেবকে বলেন, যদি তিনি এক ঘণ্টার মধ্যে কনস্যুলেট ভবন থেকে বের না হন, তাহলে তুরস্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন বাইরে থাকা তাঁর বান্ধবী।

মুতরেব কূটনৈতিক নীতি-নৈতিকতা লঙ্ঘন করছেন উল্লেখ করে খাসোগি বলেন, আপনি আমার সঙ্গে কী করতে যাচ্ছেন। আপনি কি আমাকে অপহরণ করতে চান? মাহের মুতরেব বলেন, হ্যাঁ। আমরা তোমাকে ওষুধ দেব এবং এখান থেকে তুলে নিয়ে যাব। এরপর খাসোগি চিৎকার শুরু করলে তাঁকে শান্ত করতে মুখে কাপড় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। চিৎকার থামানোর চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে শ্বাসরোধে মারা যান খাসোগি।

ঘটনার ১৭ দিন পর ‘হাতাহাতির একপর্যায়ে খাসোগির মৃত্যু’ হয়েছে বলে বিবৃতি দিয়েছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। এর আগ পর্যন্ত ঘটনার ব্যাপারে টানা অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছিল দেশটি।

খাসোগির লাশ উদ্ধার
জামাল খাসোগির লাশের টুকরো অংশ পাওয়া গেছে বলে দাবি করেছে একটি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম। বিশ্বস্ত সূত্রের বরাত দিয়ে গতকাল মঙ্গলবার স্কাই নিউজ বলছে, ইস্তাম্বুলে সৌদি কনসাল জেনারেলের বাসভবনের বাগান থেকে খাসোগির লাশের অংশবিশেষ উদ্ধার করা হয়।

স্কাই নিউজের খবরে বলা হয়েছে, হত্যার পর খাসোগির লাশ টুকরো টুকরো করা হয়। আরেক সূত্রের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যমটির দাবি, খাসোগির মুখমণ্ডল বিকৃত করে ফেলা হয়। খাসোগির লাশ পাওয়া যায়নি জানিয়ে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বক্তব্য দেওয়ার পর এমন খবর প্রকাশিত হলো। তবে সূত্র কে বা কোথায়, কখন, কীভাবে খাসোগির দেহাবশেষ উদ্ধার করা হয়েছে, তার বিস্তারিত তথ্য জানায়নি স্কাই নিউজ।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান এর আগে বলেছিলেন, ‘আনুষ্ঠানিকভাবে হত্যা করা হয়েছে জানানোর পরও কেন একজন ব্যক্তির মৃতদেহ পাওয়া যাবে না?’খাসোগিকে হত্যা করার বিষয়টি সৌদি কর্তৃপক্ষ স্বীকার করার পর এই কথা বলেছিলেন এরদোয়ান।

সোমবার সৌদি আরব স্বীকার করে যে সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে হত্যা করা হয়েছিল। দেশটির দাবি, দুর্বৃত্তরা এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল জুবায়ের জানিয়েছিলেন, এটা ভয়ানক ভুল ছিল। এ ঘটনার সঙ্গে ক্রাউন প্রিন্স জড়িত নন বলে দাবি করেন তিনি।