Thank you for trying Sticky AMP!!

ডিজিটালাইজেশনের ঢেউয়ে হারিয়ে যাচ্ছে জাপানের জাতীয় আইকন 'হানকো'

জাপানে ব্যক্তিগত সিলকে ‘হানকো’ বলে। সইয়ের কাজে ‘হানকো’ ব্যবহৃত হয়। ‘হানকো’ তৈরিতে হাতির হাড়ের এমন দণ্ড ব্যবহার করা হয়। ছবি: রয়টার্স

মাথার ওপর জ্বলছে অল্প আলোর বাতি। টেবিলে নানা জিনিস। এরই মধ্যে দোকানে বসে একমনে কাজ করে চলছেন ফুজিও কাওয়াসাকি। সযত্নে বানাচ্ছেন জাপানিদের জীবনের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে থাকা ‘হানকো’।

জাপানে ফুজিও দোকানের মতো প্রায় ১০ হাজার দোকান রয়েছে। একসময় এসব দোকানে হানকো কিনতে ক্রেতারা ভিড় করতেন। সেদিন আর নেই। হানকো নামের একসময়ের অতিপ্রয়োজনীয় জিনিসটির জন্য জাপানিরা এখন আর ৭২০ ডলার গুনতে রাজি নন।

জাপানে ব্যক্তিগত সিলকে ‘হানকো’ বলে। সইয়ের কাজে হানকো ব্যবহৃত হয়। ছোট একটি দণ্ডের মাথায় বিশেষ চিহ্ন অঙ্কন করে এই সিল (হানকো) তৈরি করেন শিল্পীরা।

জাপানের সম্রাট থেকে শুরু করে প্রাপ্তবয়স্ক প্রত্যেক নাগরিকেরই একটা করে হানকো আছে। বিয়ে, ফ্ল্যাট ভাড়া, গাড়ি কেনাসহ নানা কাজে হানকো ব্যবহারের পুরোনো রীতি আছে জাপানে।

তবে দিন বদলে গেছে। এখন জাপানে হুমকির মুখে এই ঐতিহ্য। ডিজিটালাইজেশনের ঢেউয়ে হারিয়ে যেতে বসেছে হানকো। হানকোর জায়গা দখল করে নিচ্ছে ডিজিটাল স্বাক্ষর।

কাগজের অতি ব্যবহার জাপানের প্রশাসনিক কাজকে মন্থর করে তুলেছে। এই প্রেক্ষাপটে তারা ডিজিটাল পদ্ধতির দিকে ঝুঁকছে।

ইতিমধ্যে দেশটির তিনটি বড় ব্যাংক হানকো ছাড়াই গ্রাহকদের হিসাব খোলার সুযোগ দিচ্ছে। একটি অনলাইন ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট নোরিয়াকি মারুয়ামার ধারণা, শিগগির অধিকাংশ জাপানি হানকোর বদলে ডিজিটাল পদ্ধতিতে হাতের আঙুলের ছাপ ব্যবহার করবেন। ইতিমধ্যে জাপানের স্থানীয় সরকারগুলো ইলেকট্রনিক লেনদেনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে।

দেশটির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী তাকুয়া হিরাইয়ের মতে, হানকো বাদ দেওয়ার বিষয়টি খুবই যৌক্তিক। কাগজনির্ভর কাজের পেছনে জাপানের মানুষ অনেক সময় ব্যয় করে। এই কাগজনির্ভর আমলাতন্ত্র টেনে চলা সম্ভব নয়। তাই পার্লামেন্টের মাধ্যমে ‘ডিজিটাল ফার্স্ট বিল’ প্রণয়ন করা হচ্ছে।

আইন করে ডিজিটাল পদ্ধতি প্রবর্তনের ব্যাপারে দেশটির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রীর অনড় মনোভাবে হতাশ হানকোশিল্পীরা। তাঁরা মন্ত্রীর কাছে একটি আবেগঘন চিঠি লিখেছেন। চিঠিতে তাঁরা মন্ত্রীকে তাঁর পরিকল্পনা বাদ দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, বিলটি আইনে পরিণত হলে হানকোশিল্পের সঙ্গে জড়িত হাজারো মানুষের জীবিকা হুমকিতে পড়বে।

চিঠিতে দাবি করা হয়, পশ্চিমা ধাঁচের স্বাক্ষরের চেয়ে হানকো অনেক বেশি উন্নত।

হানকোশিল্পকে টিকিয়ে রাখার পক্ষের লোকজন যত যুক্তই দিক, বাস্তবতা হলো, জাপানিরা পরিবর্তনের দিকেই ঝুঁকছে।