Thank you for trying Sticky AMP!!

নতুন যুগে চীনা সমাজতন্ত্র

সি চিন পিং

চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও দেশটির প্রসিডেন্ট সি চিন পিং বলেন, চীনা সমাজতন্ত্র নতুন যুগে প্রবেশ করেছে। এই যুগে চীনের লক্ষ্য হলো সব দিক থেকে একটি পরিমিতিপূর্ণ সমৃদ্ধ সমাজ গড়ে তোলা। চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সব তৎপরতার কেন্দ্রে রয়েছে জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নত করার মধ্য দিয়ে জাতীয় পুনরুজ্জীবন সাধন।

গতকাল বুধবার চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির ১৯তম জাতীয় কংগ্রেসের উদ্বোধনী অধিবেশনে সি চিন পিং এসব কথা বলেন। সারা দেশ থেকে মোট ২ হাজার ২৮৭ জন ডেলিগেট কংগ্রেসে অংশ নিচ্ছেন। তাঁরা চীনা কমিউনিস্ট পার্টির ৮ কোটি ৯৪ লাখ ৪৭ হাজার সদস্যের প্রতিনিধি হিসেবে কথা বলবেন।

সি চিন পিং কংগ্রেসে তাঁর প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টার ভাষণে ৬৫ পৃষ্ঠার এক লিখিত প্রতিবেদন পাঠ করেন। সেখানে তিনি বলেন, চীনা কমিউনিস্টদের আদি আকাঙ্ক্ষা এখনো অটুট আছে। সেই আকাঙ্ক্ষা হলো চীনা জনগণের সুখী জীবন এবং চীনা জাতির নব প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা। তিনি বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই চীনা প্রেক্ষাপটে মার্ক্সবাদী আদর্শ অনুসরণ অব্যাহত রাখতে হবে, মার্ক্সবাদকে যুগোপযোগী করে কাজে লাগাতে হবে এবং জনগণের কাছে এই ভাবাদর্শের আবেদন বাড়াতে হবে।’

চীনা কমিউনিস্ট পার্টির জাতীয় কংগ্রেস পাঁচ বছর পরপর অনুষ্ঠিত হয়। ২০১২ সালে অনুষ্ঠিত অষ্টাদশ জাতীয় কংগ্রেসের পরবর্তী পাঁচ বছরের কর্মকাণ্ড তুলে ধরতে গিয়ে সি চিন পিং বলেন, এই সময়ের মধ্যে চীন উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক সাফল্য অর্জন করেছে: জিডিপি ৫৪ ট্রিলিয়ন ইউয়ান থেকে বেড়ে হয়েছে ৮০ ট্রিলিয়ন এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে চীনের অবদান এখন ৩০ শতাংশ।

গত পাঁচ বছরে চীনে বার্ষিক ১ দশমিক ২ শতাংশ হারে নগরায়ণ ঘটেছে এবং পাঁচ বছরে ৮ কোটি মানুষ গ্রাম থেকে শহরে স্থায়ী আবাস গড়ে তুলেছে। দারিদ্র্য দ্রুত গতিতে কমেছে, গত পাঁচ বছরে ৬ কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার ওপরে উঠে এসেছে। দারিদ্র্যের হার ১০ দশমিক ২ থেকে কমে ৪ শতাংশে নেমেছে।

সি চিন পিং তাঁর প্রতিবেদনে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রসঙ্গে বলেন, তাঁর দল সোশ্যালিস্ট ডেমোক্রেসি বা সমাজতান্ত্রিক গণতন্ত্র ও আইনভিত্তিক শাসনব্যবস্থা জোরদার করার পদক্ষেপ নিয়েছে এবং এই পথে অগ্রগতি সাধন করে চলেছে। উল্লেখ্য, চীনা কমিউনিস্ট পার্টি এখনো লেনিন-প্রবর্তিত ডেমোক্রেটিক সেন্ট্রালিজম বা গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতার নীতি অনুসরণ করে। দলের অভ্যন্তরে গণতান্ত্রিক অনুশীলন বাড়ানো এবং দুর্নীতি দমনের ওপর সি চিন পিং বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের অন্যতম বহুলালোচিত বিষয় চীনা কমিউনিস্ট পার্টির নেতাদের দুর্নীতি। এ বিষয়ে পার্টির সাধারণ সম্পাদক তাঁর প্রতিবেদনে বলেন, ‘আমরা নামকাওয়াস্তে আনুষ্ঠানিকতা, আমলাতান্ত্রিক মনোভাব, আত্মপরতা, বিলাসিতা ও সুবিধালাভের চেষ্টার বিরুদ্ধে অত্যন্ত কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছি। শৃঙ্খলা স্থাপনের লক্ষ্যে পরিচালিত তদন্ত-অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে শুরু করে প্রাদেশিক পর্যায়ের সব বিভাগের সব পর্যায়ে। কোথাও কাউকে ছাড় দেওয়া হচ্ছে না, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কারও প্রতি বিন্দুমাত্র সহিষ্ণুতা দেখানো হচ্ছে না। বাঘ, মাছি, শেয়াল—সবার বিরুদ্ধে অত্যন্ত কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

কংগ্রেস ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে। বলা হচ্ছে, এই কংগ্রেসে কমিউনিস্ট পার্টির পলিটব্যুরোর সাত সদস্যের মধ্যে পাঁচজনকেই বিদায় নিতে হবে। কারণ তাঁদের বয়স ৬৮ বছর পেরিয়েছে। পার্টির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ৬৮ বছর বয়সের পর প্রত্যেককেই অবসরে যেতে হয়। ৬৪ বছর বয়স্ক সি চিন পিং দ্বিতীয়বারের মতো সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন, এ নিয়ে কারও মনে কোনো সন্দেহ নেই। এই কংগ্রেসে কমিউনিস্ট পার্টির গঠনতন্ত্রে কিছু সংশোধনী বা সংযোজনী আসার কথা রয়েছে।