Thank you for trying Sticky AMP!!

নারীদের বাদ দিয়ে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার সম্ভব নয়: গুতেরেস

আফগানিস্তানে ক্ষমতা দখলের পর তালেবান শুরু থেকেই নারীদের অধিকার রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছে। কিন্তু বাস্তবে এমনটা দেখা যায়নি।

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস

তালেবান ক্ষমতা দখলের পর চরম অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে আফগানিস্তান। বড় দাতা দেশগুলো আফগানিস্তান থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। আফগানিস্তানে অর্থনৈতিক বিপর্যয় ঠেকাতে দেশটিতে অর্থপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। তিনি মনে করেন, নারীদের বাদ দিয়ে কোনোভাবেই অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার সম্ভব নয়।

* আফগানিস্তানের অর্থনীতির ৮০ শতাংশই অনানুষ্ঠানিক
* আফগানিস্তানে ২০০১ সাল থেকে অন্তত ৩০ লাখ মেয়েশিশু স্কুলে ভর্তি হয়েছে
* আফগানিস্তানকে ৭০০ মিলিয়ন ইউরো জরুরি তহবিল দেবে ইইউ

গুতেরেস বলেন, আফগানিস্তানের অর্থনীতির ৮০ শতাংশই অনানুষ্ঠানিক। যেখানে নারীদের অগ্রণী ভূমিকা রয়েছে। নারীদের ছাড়া আফগান অর্থনীতি ও সমাজ পুনরুদ্ধারের কোনো উপায় নেই। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, অর্থনীতি পুনরুজ্জীবিত করার উপায় খোঁজা প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক আইন না ভেঙেই এটি করা যায়।

বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়, স্থানীয় সময় গতকাল সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে সাংবাদিকদের আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘আফগান নারী ও মেয়েশিশুদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি তালেবান রক্ষা করেনি। তালেবানের পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ হতে দেখে আমি বিশেষভাবে শঙ্কিত। নারী ও শিশুদের প্রতি তালেবানের করা প্রতিশ্রুতি রক্ষার জোর দাবি জানাচ্ছি। তালেবানের আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও মানবিক আইনের বাধ্যবাধকতা মেনে চলা উচিত।’

আফগানিস্তানে ক্ষমতা দখলের পর তালেবান শুরু থেকেই নারীদের অধিকার রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছে। কিন্তু বাস্তবে এমনটা দেখা যায়নি। রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে নারীদের বঞ্চিত করেছে কট্টর ইসলামি এ সংগঠন। জাতিসংঘ বলছে, নারী ও মেয়েশিশুদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি তালেবান। এর কঠোর নিন্দা জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।

জাতিসংঘ প্রধান বলেন, প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ হলে আফগানিস্তানের নারী ও মেয়েশিশুদের স্বপ্নভঙ্গ হবে। নারী ও মেয়েশিশুদের মনোযোগের কেন্দ্রে থাকা দরকার।

গুতেরেস বলেন, এ বিষয়ে জাতিসংঘ হাল ছেড়ে দেবে না। তালেবানের সঙ্গে প্রতিনিয়ত এসব নিয়ে আলোচনা চলছে। আফগানিস্তানে ২০০১ সাল থেকে অন্তত ৩০ লাখ মেয়েশিশু স্কুলে ভর্তি হয়েছে। গত কয়েক বছরে মেয়েদের স্কুলে যাওয়ার হারও বেড়েছে বলে তিনি জানান।

সম্প্রতি দোহায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে তালেবানের শীর্ষ নেতাদের মুখোমুখি বৈঠকের পরপর জাতিসংঘের মহাসচিব এসব কথা বলেন।

এদিকে জাতিসংঘ মহাসচিবের এমন বক্তব্যের পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পক্ষ থেকে আফগানিস্তানকে ৭০০ মিলিয়ন ইউরো জরুরি তহবিল দেওয়ার ঘোষণা এসেছে। আজ মঙ্গলবার ইইউর নেতাদের সঙ্গে দোহায় মুখোমুখি বৈঠকের ঘোষণা দেয় তালেবান। এর আগমুহূর্তে আজ ইউরোপীয় কমিশন এই ঘোষণা দিয়েছে।

এই ঘোষণার পর আফগানিস্তানে ইইউর মোট প্রতিশ্রুত তহবিল ১ বিলিয়ন হলো। এর আগে ইইউ নির্বাহী আফগানিস্তানে ৩০০ মিলিয়ন ইউরো সহায়তার ঘোষণা দিয়েছিল।
রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডের এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আফগানিস্তানে মানবিক ও অর্থনৈতিক বিপর্যয় ঠেকাতে যতটা করা সম্ভব, আমরা করব।’

ইইউ–তালেবান বৈঠক
কাতারের রাজধানী দোহায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের ঘোষণা দিয়েছে তালেবান। বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়, গতকাল মঙ্গলবার দোহায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। আফগানিস্তানের নতুন সরকারের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি এমনটি জানিয়েছেন।
দোহায় গত সোমবার সেন্টার ফর কনফ্লিক্ট অ্যান্ড হিউম্যানিটেরিয়ান স্টাডিজ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে কথা বলেন আমির খান মুত্তাকি।

সেখানে আফগানিস্তানের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কাল (মঙ্গলবার) ইইউ প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করব। আমরা অন্যান্য দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ইতিবাচক বৈঠক করছি।’

দোহায় গত শনি ও রোববার যুক্তরাষ্ট্রের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মুখোমুখি বৈঠক করেন তালেবানের প্রতিনিধিরা। সম্পর্কের নতুন অধ্যায় শুরু করতে এ বৈঠকের আয়োজন করা হয়। গত আগস্টে আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পর এই প্রথম তালেবান প্রতিনিধিদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সরাসরি বৈঠক হয়।

বৈঠক শেষে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র নেড প্রাইস জানান, দোহায় তালেবান প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় নিরাপত্তা ও সন্ত্রাসবাদ নিয়ে উদ্বেগের বিষয়ে গুরুত্ব দেয় যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র, অন্যান্য দেশ ও আফগান নাগরিকদের নিরাপদে আফগানিস্তান ত্যাগ করার সুযোগ দেওয়ার বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা করা হয়। একই সঙ্গে আফগান সমাজের সব ক্ষেত্রে নারীদের অর্থপূর্ণ অংশগ্রহণসহ মানবাধিকারের বিষয় আলোচনায় গুরুত্ব পায়।

নেড প্রাইস বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে তালেবান প্রতিনিধিদলের আলোচনাটি অকপট ও পেশাদার ছিল। আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এ কথা আবারও বলা হয়েছে যে তালেবানকে শুধু কথা নয়, তার কাজ দিয়ে বিচার করা হবে।
দোহা বৈঠক সম্পর্কে আমির খান মুত্তাকি বলেন, তাঁরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলতে চান। বিশেষ কোনো দেশকে আনুকূল্য প্রদান ও কোনো দেশের সঙ্গে বৈরিতার সম্পর্কে জড়ানোর নীতি তাঁরা গ্রহণ করবেন না।