Thank you for trying Sticky AMP!!

প্রেসিডেন্ট বাশারের ঘনিষ্ঠ ৬ জনের বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যের নিষেধাজ্ঞা

সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল মিকদাদ

সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল মিকদাদসহ দেশটির প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের ৬ জন ঘনিষ্ঠ মিত্রের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাজ্য। আজ সোমবার যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দেয়। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের এক দশক পূর্তির দিনে তাঁদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করল লন্ডন। খবর রয়টার্সের।

এক বিবৃতিতে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সিরিয়া সরকারের কয়েকজন প্রভাবশালী সদস্যের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা জানায়। তালিকায় দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল মিকদাদ ছাড়াও বাশার আল-আসাদের উপদেষ্টা লুনা আল-শিবল, আসাদের মিত্র ইয়াসার ইব্রাহিম, ব্যবসায়ী মুহাম্মদ বারা’ আল-কাতিরজি, সিরিয়ার রিপাবলিকান গার্ডের কমান্ডার মালিক এলিয়া এবং দেশটির সেনাবাহিনীর মেজর জাইদ সালাহের নাম রয়েছে।

বিবৃতিতে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডমিনিক রাব বলেন, এক দশক ধরে বাশার সরকার সিরিয়ার সাধারণ মানুষের ওপর নৃশংসতা চালিয়ে আসছে। ক্ষমতার শান্তিপূর্ণ পালাবদলে জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে হঠকারি উপায়ে উপেক্ষা করছে। এ কারণে আমরা আজ বাশার আল-আসাদের ছয় ঘনিষ্ঠ মিত্রের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছি।’

এদিকে সোমবার সিরিয়া যুদ্ধের ১০ বছর পূর্ণ হয়েছে। ২০১০ সালের ডিসেম্বরের শেষ ভাগে আরব বসন্তের ঢেউ তিউনিসিয়া থেকে সিরিয়ায় পৌঁছায়। গণতন্ত্র-মুক্তি-সমৃদ্ধির আশায় শুরুতে সিরিয়ায় ছোটখাটো বিক্ষোভ হয়। দ্রুতই এই বিক্ষোভ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। ১৫ মার্চ দেশটিতে তুমুল বিক্ষোভ হয়। বিক্ষোভ দমনে নৃশংস পথ বেছে নেন দেশটির প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ। এতে এক দীর্ঘমেয়াদে গৃহযুদ্ধের চক্করে পড়ে যায় সিরিয়া।

সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ পরে অত্যন্ত জটিল আকার ধারণ করে। দেশি-বিদেশি নানা পক্ষের রণক্ষেত্রে পরিণত হয় সিরিয়া। এই যুদ্ধে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িয়ে পড়ে ইরান, ইসরায়েল, লেবানন, তুরস্ক, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্রের মতো আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক শক্তি।

সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ ভয়ংকর জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) উত্থানে ভূমিকা রাখে। তারা ইরাক ও সিরিয়ার একটা বড় অংশ দখল করে ২০১৪ সালের জুনে কথিত ‘খেলাফত’ ঘোষণা করে। আইএসের কথিত এই খেলাফতের রাজধানী করা হয় সিরিয়ার রাকা। আইএস বর্বরতা-নৃশংসতা দিয়ে আন্তর্জাতিক জঙ্গিবাদের কেন্দ্রে চলে আসে।

সারা বিশ্বে তারা ত্রাস সৃষ্টি করে। ২০১৭ সালে আইএসের কথিত খেলাফতের পতন হয়।
যদিও বাশার আল-আসাদ এখনো টিকে আছেন। আর সিরীয় জনগণ, যারা এক দশক আগে একনায়কতন্ত্র-স্বৈরশাসন থেকে মুক্তির আকাঙ্ক্ষায় রাজপথে নেমেছিল, তারা এখন গণতন্ত্র চাওয়ার মূল্য দিচ্ছে। তাদের সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্ন বিভীষিকায় রূপ নিয়েছে। বর্তমান সময়ে বিশ্বের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধক্ষেত্র সিরিয়া। সিরিয়ায় চলমান গৃহযুদ্ধে ৪ থেকে ৬ লাখ মানুষ নিহত হওয়ার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। তার মধ্যে দুই লাখের বেশি রয়েছে বেসামরিক মানুষ।

গৃহযুদ্ধ-পূর্ব সিরিয়ার মোট জনসংখ্যার অর্ধেক বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এই সংখ্যা প্রায় ১২ মিলিয়ন। বাস্তুচ্যুত সিরীয়দের মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ শিশু রয়েছে। বার্তা সংস্থা এএফপির তথ্য অনুযায়ী, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এত বড় বাস্তুচ্যুত আর দেখেনি বিশ্ব।
সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে বড় শরণার্থী সংকটেরও জন্ম দিয়েছে।

কারণ, সিরিয়ায় বাস্তুচ্যুতদের মধ্যে প্রায় অর্ধেক মানুষ সে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছে বলে দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়। সিরীয় শরণার্থীরা তুরস্ক, লেবানন, জর্ডানসহ প্রতিবেশী বিভিন্ন দেশের জন্য মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে। ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে সিরিয়ার শরণার্থীরা আশ্রয় নিয়েছেন জার্মানি, ইতালিসহ ইউরোপের দেশগুলোয়।