বিদেশের কাছে ত্রাণ চায় তালেবান
ভয়ংকর ভূমিকম্পের আঘাতে ধ্বংসযজ্ঞের পর আন্তর্জাতিক সহায়তার জন্য আহ্বান জানিয়েছে আফগানিস্তানের তালেবান সরকার। খবর বিবিসির।
স্থানীয় সময় গতকাল বুধবার ভোরে ৬.১ মাত্রার ভূমিকম্পের আঘাতে আফগানিস্তানে ১ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। আহত হয়েছে কমপক্ষে ১ হাজার ৫০০ জন। আশঙ্কা করা হচ্ছে, ধ্বংসস্তূপের নিচে অনেকে চাপা পড়ে থাকতে পারে।
আফগানিস্তানের দক্ষিণ–পূর্বের পাকতিকা প্রদেশ ভূমিকম্পে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানকার মাটির তৈরি বাড়িগুলো একেবারে ধ্বংস হয়ে গেছে। জাতিসংঘ জরুরি আশ্রয় ও খাদ্য সরবরাহের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
ভারী বৃষ্টি ও সরঞ্জামের অপ্রতুলতার কারণে উদ্ধারকাজ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ভূমিকম্প থেকে বেঁচে যাওয়া মানুষ ও উদ্ধারকারীরা বিবিসিকে বলেছে, ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের কাছে থাকা গ্রামগুলো পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। রাস্তাঘাট ধ্বংস হয়ে গেছে। মুঠোফোনের টাওয়ারও নষ্ট হয়ে গেছে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গত দুই দশকের মধ্যে এমন ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়নি আফগানিস্তানে। এটি তালেবান সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পশ্চিমা সমর্থিত সরকারের পতনের পর গত বছর তালেবান সরকার ক্ষমতায় আসে।
খোস্ত শহর থেকে ৪৪ কিলোমিটার দূরে ভূমিকম্প আঘাত আনে। পাকিস্তান ও ভারতেও ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে।
তালেবান সরকারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা আবদুল কাহার বালখি বলেন, আফগানিস্তান চরম মানবিক ও অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে রয়েছে। বালখি আরও বলেন, তালেবান সরকার জনগণকে যতটা প্রয়োজন আর্থিকভাবে ততটা সহায়তা করতে পারছে না। তিনি আরও বলেন, ত্রাণ সংস্থাগুলো, প্রতিবেশী দেশ ও বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলো সহায়তা করছে। তবে সহায়তার পরিমাণ আরও বাড়ানো দরকার। কারণ, গত দুই দশকে এমন ভয়ংকর ভূমিকম্পের অভিজ্ঞতা হয়নি।
জাতিসংঘের প্রধান আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, সংস্থাটি দুর্যোগ মোকাবিলায় পুরোপুরি সক্রিয় রয়েছে। স্বাস্থ্যকর্মীদের দল, চিকিৎসা সরঞ্জাম, খাদ্য, জরুরি আশ্রয়কেন্দ্র ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলে পাঠানো হচ্ছে।
পাকতিকা প্রদেশের গায়ান ও বারমাল এলাকায় ভূমিকম্পে হতাহত বেশি হয়েছে। ভূমিকম্প থেকে বেঁচে যাওয়া সাবির নামের এক ব্যক্তি বিবিসিকে বলেন, ‘ভূমিকম্পের সময় বিকট শব্দ হয়। আমার বিছানা কাঁপতে থাকে। ছাদ পড়ে যায়। আমি ধ্বংসস্তূপের মধ্যে আটকে যাই। তবে আমি আকাশ দেখতে পাচ্ছিলাম। আমার কাঁধ ভেঙে গিয়েছিল। মাথায় আঘাত লেগেছিল। তবু আমি বের হতে পেরেছিলাম। আমি জানতাম, আমার সঙ্গে একই ঘরে থাকা আমার পরিবারের ৭ থেকে ৯ সদস্য মারা গেছে।’
পাকতিকা প্রদেশের এক চিকিৎসক বলেন, ‘ভূমিকম্পে হতাহত ব্যক্তিদের মধ্যে অনেক স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছেন। ভূমিকম্পের আগেও আমাদের পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মী ও স্বাস্থ্য সরঞ্জাম ছিল না। তবে এবার আমাদের হাতে যেটুকু ছিল, তা–ও গেছে। আমি এখনো জানি না, আমাদের কতজন সহকর্মী বেঁচে আছেন।’
জাতিসংঘের হিসাবে গত এক দশকে ভূমিকম্পে আফগানিস্তানে সাত হাজারের বেশি লোক নিহত হয়েছে। ভূমিকম্পে ১ বছরে গড়ে ৫৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত জানুয়ারি মাসে ভূমিকম্পে ২০ জনের বেশি নিহত হয়েছে। শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, তালেবানরা আফগানিস্তানে ক্ষমতা দখলের আগেও উদ্ধারকাজের জন্য উড়োজাহাজ ও হেলিকপ্টার কিছুটা সহজলভ্য ছিল। তবে এখন দেশটি স্বাস্থ্যসেবা সরঞ্জামের সংকটে রয়েছে।
জাতিসংঘের তথ্য অনুসারে আফগানিস্তানে ৯৩ শতাংশ মানুষ খাদ্যসংকটে রয়েছে। রেডক্রসের কর্মী লুসিয়েন ক্রিসটেন বলেন, আফগানিস্তানের অর্থনৈতিক সংকট এতটাই ভয়াবহ যে তারা টেবিলে খাবার সরবরাহ করতে পারছে না।
আরও পড়ুন
-
বিজেপির আসন বাড়বে কি না, সেই পরীক্ষা হয়ে গেল চতুর্থ দফায়
-
আদালতে অসুস্থ হয়ে পড়েন সাবেক এসপি বাবুল আক্তার
-
র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা ও ভিসা নীতি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কে প্রভাব ফেলেছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
-
ডোনাল্ড লু বিএনপির কাছে এতটা গুরুত্বপূর্ণ নন: নজরুল ইসলাম খান
-
মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে আসামিকে কনডেমড সেলে রাখা যাবে না