Thank you for trying Sticky AMP!!

ভারতকে 'চাপে' রাখতে জোর তৎপরতা চীনের

ভারত ও চীনের মধ্যে উত্তেজনার পারদ ঊর্ধ্বমুখী। ছবি: রয়টার্স

লাদাখ সীমান্তে বিরোধ নিয়ে গত জুনে রক্তক্ষয়ী সংঘাতে ভারত ও চীন উভয় দেশের বেশ কিছু সেনাসদস্য হতাহত হন। এরপর থেকে এশিয়ার ক্ষমতাধর দেশ দুটির মধ্যে উত্তেজনার পারদ ঊর্ধ্বমুখী। নিজেদের পক্ষে আন্তর্জাতিক সমর্থন বাড়াতে জোর কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে তারা। এমন অবস্থায় গত সোমবার ভারতের প্রতিবেশী পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও নেপালকে নিয়ে যৌথ সম্মেলন করল চীন। ভার্চ্যুয়াল এ সম্মেলনে আঞ্চলিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হয়।

গতকাল মঙ্গলবার ভারতের বার্তা সংস্থা পিটিআই ও এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, ওই সম্মেলনে করোনাভাইরাস মোকাবিলা, অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার শক্তিশালী করা, ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’ (বিআরআই) অবকাঠামো প্রকল্পগুলোর কাজ আবার শুরুসহ চার দফা প্রস্তাব পেশ করেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। অনেক বিশ্লেষক এই সম্মেলনকে আঞ্চলিক মিত্রদেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করার মাধ্যম হিসেবে দেখলেও অনেকে আবার দেখছে প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতকে একঘরে করে ফেলার উদ্যোগ হিসেবে।

গুরুত্বপূর্ণ ওই সম্মেলন শেষে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয় চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে। সেখানে বলা হয়, বৈঠকে আফগানিস্তানের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ হানিফ আতমার ও নেপালের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রদীপ কুমার যোগ দেন। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশি সম্মেলনে অংশ নিতে পারেননি। তাঁর স্থলে সম্মেলনে যোগ দেন অর্থমন্ত্রী মখদুম খসরু বখতিয়ার।

সম্মেলনের শুরুতেই বক্তব্য দেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং। তিনি নিজেদের মধ্যে ঐক্য সুসংহত করাসহ করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একসঙ্গে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। করোনাভাইরাস নিয়ে রাজনৈতিকীকরণ ও মিথ্যাচার এড়িয়ে চলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন জানানোর আহ্বান জানান চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার প্রথম দিকে তা মোকাবিলায় চীনের ব্যর্থতার পাশাপাশি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুসকে চীনের হাতের ‘পুতুল’ বলেও অভিহিত করেন তিনি।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি মতে, করোনা মহামারি মোকাবিলায় চীন ও পাকিস্তানের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে মহামারি নিয়ন্ত্রণ ও যৌথভাবে প্রতিরোধব্যবস্থা গড়ে তুলতে আঞ্চলিক সহযোগিতা গড়ে তোলার ওপর জোর দেন চার দেশের মন্ত্রীরা। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং বলেন, চীনের করোনা টিকা তৈরি করা হয়েছে। এই তিন দেশে এই টিকার সহজলভ্যতা নিশ্চিতে কাজ করবে চীন। পাশাপাশি দেশগুলোর জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে সাহায্য করা হবে।

২০১৩ সালে ক্ষমতায় আসার পর চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ উদ্যোগ গ্রহণ করেন। হাজার হাজার কোটি মার্কিন ডলারের এ উদ্যোগের উদ্দেশ্য হচ্ছে, দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়া, মধ্য এশিয়া, উপসাগরীয় অঞ্চল, আফ্রিকা ও ইউরোপের সঙ্গে একটি বহুমুখী যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা। চীনের এ প্রকল্পের ঘোর বিরোধী ভারত। তবে দুই প্রতিবেশী ভারত ও নেপাল চীনের ওই উদ্যোগের অংশ, যা ভারতের মাথাব্যথার বড় কারণ।

সম্মেলনে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ উদ্যোগের বিষয়েও কথা হয়। করোনা মহামারি–পরবর্তী এ উদ্যোগের যৌথ উন্নয়ন প্রকল্পগুলো আবার শুরু, কারাখানা ও সাপ্লাই চেন ব্যবস্থা ঠিক রাখাসহ প্রধান প্রধান সহযোগিতামূলক প্রকল্পে চার দেশ একে অন্যকে সমর্থন করার বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়।চীনের মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের ভৌগোলিক সুবিধা, এই চার দেশের মধ্যে আদান-প্রদান ও সংযোগ জোরদার এবং এ অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষার দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত।’