Thank you for trying Sticky AMP!!

মমতার ভাইপো জিতবেন?

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, ডা. ফুয়াদ হালিম, নীলাঞ্জন রায়, সৌম্য আইচ রায়। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের ডায়মন্ড হারবার আসনে তৃণমূল ও সিপিএমের দুই প্রার্থীর মধ্যে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। গতবারের নির্বাচনেও এ দুটি দলের মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছিল। এ আসনে ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্ধ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এবারও তিনি এ আসনে প্রার্থী হয়েছেন। এবারও জয় ঘরে তুলতে পারবেন কি না, তা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।

১৯ মে ভারতের লোকসভার সপ্তম বা শেষ দফার নির্বাচনে ডায়মন্ড হারবার আসনের ভোট নেওয়া হবে।

৩১ বছর বয়সী অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাই অমিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছেলে। বলা হয়, মমতা এখন ভাইপোকে তাঁর উত্তরাধিকারী হিসেবে তৈরি করছেন। অভিষেক এখন সারা ভারত যুব তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি।

২০১৪ সালে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সিপিএম প্রার্থী ডা. আবুল হাসনাতকে পরাস্ত করেছিলেন। অভিষেক পেয়েছিলেন ৫ লাখ ৮ হাজার ৪৮১ ভোট। আর আবুল হাসনাত পেয়েছিলেন ৪ লাখ ৩৭ হাজার ১৮৯ ভোট।

ডায়মন্ড হারবার পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার একটি শহর। হুগলী নদীর তীরে অবস্থিত। অদূরে বঙ্গোপসাগর। সে যুগে পর্তুগিজ আর ফরাসি ব্যবসায়ীরা এই বন্দর দিয়ে ব্যবসা করতেন। এখন এটি একটি পর্যটনকেন্দ্রও। ডায়মন্ড হারবারে রয়েছে একটি লোকসভার আসন।

এই আসনে এবার আরও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সিপিএমের ডা. ফুয়াদ হালিম, বিজেপির নিরঞ্জন রায় এবং কংগ্রেসের সৌম্য আইচ রায়। এ কারণে আসনটিতে এবার তীব্র লড়াই হওয়ার সংকেত মিলেছে। কিন্তু মূল লড়াই হবে কার সঙ্গে, তারই খোঁজ নিতে ডায়মন্ড হারবারে গিয়ে দেখা গেছে, এই আসনে সিপিএম, কংগ্রেস ও বিজেপি প্রার্থীর জোর প্রচার চলছে।

তৃণমূল প্রার্থী অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এ আসনে আবার জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী। তাঁর যুক্তি, এই রাজ্যে মমতার বিকল্প নেই। মমতাই রাজ্যে উন্নয়নের জোয়ার বইয়ে দিয়েছেন। তাঁর ধারেকাছেও থাকতে পারছেন না বিরোধী কোনো প্রার্থী।

তবে তাঁর এই যুক্তি মানতে চাইছেন না এলাকার অনেকেই। কেউ কেউ মুখও খুলতে চাইছে না। সবারই এক কথা, দেখুন না কী হয় এই আসনে? একজনে বললেন, এখানে এখন চোরা স্রোত বইছে। মানুষ যদি ভোট দিতে পারেন, তবে এই আসনের ফল ঘুরে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে কার সম্ভাবনা—এই প্রশ্নের জবাবে কেউ কেউ বলছেন, এবার মূল লড়াই হবে অভিষেকের সঙ্গে ফুয়াদ হালিমের।

ফুয়াদ হালিম পেশায় চিকিৎসক। তাঁর বাবা হাসিম আবদুল হালিম পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভার স্পিকার ছিলেন টানা ২৯ বছর ধরে। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ফুয়াদ হালিম কলকাতার বালিগঞ্জ আসনে লড়ে হেরে যান। এবার দল তাঁকে মনোনয়ন দিয়েছে লোকসভা নির্বাচনে। ইতিমধ্যে প্রখ্যাত বলিউড তারকা নাসিরউদ্দিন শাহ ফুয়াদ হালিমকে সমর্থন জানিয়ে তাঁর জয় প্রার্থনা করেছেন।

গত ৯ এপ্রিল ফুয়াদ হালিমের মিছিলে হামলা হয়। তাঁকে প্রচণ্ড মারধর করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, তৃণমূল এ হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। ওই হামলার কথা স্মরণ করে অনেকেই বলছেন, ফুয়াদের পক্ষে বইছে চোরা স্রোত। মানুষ ভোট দিতে পারলে ফল ঘুরে যেতে পারে।

এই আসনে বিজেপির প্রার্থী নীলাঞ্জন রায়। তিনি ছিলেন দক্ষিণ দিনাজপুরের কংগ্রেসের জেলা সভাপতি। বাড়ি বালুরঘাটে। এবার তিনি বিজেপিতে যোগ দিয়ে বিজেপির টিকিটে দাঁড়িয়েছেন ডায়মন্ড হারবার আসনে। নেমেও পড়েছেন প্রচারে। তবে ইতিমধ্যে তিনি এক রাজনৈতিক ধাক্কা খেয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তিনি গত ২৬ এপ্রিল ১৭ বছরের এক কিশোরীকে যৌন হেনস্তা করেন। এই নিয়ে মামলাও হয় ফলতা থানায়। পুলিশ মামলা গ্রহণ করে কিশোরীর জবানবন্দি রেকর্ড করে এবং তার মেডিকেল পরীক্ষাও করে।

তবে এ ঘটনায় নীলাঞ্জন রায়কে পুলিশ গ্রেপ্তার না করায় সোচ্চার হয় পশ্চিমবঙ্গের শিশু অধিকার রক্ষা কমিটি। যদিও এই ঘটনাকে মিথ্যা এবং তৃণমূলের ষড়যন্ত্র বলে অভিযোগ তুলেছেন বিজেপির রাজ্য সহসভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, তৃণমূল তাদের পায়ের তলার মাটি সরে যাওয়ায় এই মিথ্যা ও হীন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে।

কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছেন দলের নেতা সৌম্য আইচ রায়। তিনি জোর প্রচার চালাচ্ছেন। তিনি বলেন, এলাকার মানুষ জেনে গেছে তৃণমূল আর বিজেপির কর্মকাণ্ডের কথা। তাই মানুষ এবার ফিরছে কংগ্রেসের দিকে। ৯ মে ২৯টি গাড়ি নিয়ে বিশাল এক রোড শো করেন সৌম্য।