Thank you for trying Sticky AMP!!

মিয়ানমার সেনাদের 'একঘরে' করতে বলেছে জাতিসংঘ

মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নৃশংসতার মুখে লাখো রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। রয়টার্স ফাইল ছবি

মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে ‘একঘরে’ করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানিয়েছে মিয়ানমারবিষয়ক জাতিসংঘের স্বাধীন আন্তর্জাতিক তথ্যানুসন্ধানী মিশন। যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং গণহত্যার অভিযোগে জাতিসংঘের ওই মিশন মিয়ানমার সেনাবাহিনীর কমান্ডারদের বিচারের আহ্বান জানিয়েছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়ের ওয়েবসাইট জানিয়েছে, গতকাল মঙ্গলবার মিয়ানমারবিষয়ক জাতিসংঘের স্বাধীন আন্তর্জাতিক তথ্যানুসন্ধানী মিশন (এফএফএম) এসব আহ্বান জানিয়েছে।

বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়ায় ১০ দিনের সফর শেষে এফএফএমের চেয়ারপারসন ও ইন্দোনেশিয়ার সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মারজুকি দারুসমান বলেন, মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে দেওয়া সব ধরনের আর্থিক ও অন্যান্য সহযোগিতা বন্ধ করে ওই বাহিনীর কমান্ডারদের একঘরে করা প্রয়োজন। মিয়ানমার সংঘাত নিরসনে এবং জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে চলে যাওয়া রোহিঙ্গাসহ সবার মানবাধিকার রক্ষায় যথেষ্ট পদক্ষেপ নেয়নি বলে এসব পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। তাঁর মতে, সংকট নিরসনে মিয়ানমার কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় পুরোপুরি অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

বাংলাদেশে তথ্যানুসন্ধানী মিশন কক্সবাজারের কুতুপালং শিবির পরিদর্শন করেছে। সেখানে দারুসমান রোহিঙ্গাদের জানান, তথ্যানুসন্ধানী মিশনের মেয়াদ চলতি সেপ্টেম্বরে শেষ হবে। এরপর এই মিশন মানবাধিকার পরিষদের প্রতিষ্ঠিত মিয়ানমারবিষয়ক নতুন স্বাধীন তদন্ত ব্যবস্থার হাতে তথ্য-প্রমাণ হস্তান্তর করবে।

মারজুকি দারুসমান বলেন, মিয়ানমার সরকারের উচিত সে দেশে অবস্থানরত অবশিষ্ট রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জীবনমানের প্রকৃত উন্নয়নে মনোযোগী হওয়া। ১ লাখ ২০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা ২০১২ সালের সহিংসতার সময় বাস্তুচ্যুত হয়ে এখন এমন শিবিরে বসবাস করছে, যেখানে চলাচলের স্বাধীনতা সীমিত। তাঁর মতে, রাখাইনে ২০১৭ সালে কিংবা ২০১২ ও ২০১৬ সালে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর হওয়া নিপীড়ন কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়।

মিশনের সদস্য অস্ট্রেলিয়ার সাবেক মানবাধিকার হাইকমিশনার ক্রিস্টোফার সিডোটি বলেন, অতীতে সংগঠিত এবং অব্যাহত মানবাধিকার লঙ্ঘনের পরিপ্রেক্ষিতে দায়ী ব্যক্তিদের শনাক্ত করা, মিয়ানমারের ওপর চাপ বাড়ানোর অংশ হিসেবে অর্থের সরবরাহ বন্ধ করা এবং সহিংসতা কমাতে অবশ্যই মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও আর্থিক যোগাযোগগুলোর দিকে মনোযোগ দিতে হবে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে গত সেপ্টেম্বরে স্বাধীন তথ্যানুসন্ধানী মিশন ৪৪৪ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন জমা দেয়। এতে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী কীভাবে দেশজুড়ে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার লোকজনের ওপর নৃশংস ও পদ্ধতিগতভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে, তার চিত্র উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর ২০১৭ সালে সেনাবাহিনীর অভিযান ছিল মূল প্রতিপাদ্য। ওই বছরের ২৫ আগস্ট রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তাচৌকিতে হামলার জেরে সেখানে অভিযান শুরু করে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী। নির্বিচারে হত্যা করা হয় হাজারো রোহিঙ্গাকে। নারী ও কিশোরীদের ধর্ষণ ও যৌন হয়রানি করা হয়। পুড়িয়ে দেওয়া হয় গ্রামের পর গ্রাম। দুই মাসের মধ্যে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে চলে যেতে বাধ্য হয়। তবে মিয়ানমারের সরকার ও সেনাবাহিনী এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।