Thank you for trying Sticky AMP!!

শিশুদের যখন মারণাস্ত্র বানানো হয়

আত্মঘাতী হামলায় কেঁপে উঠেছে ইন্দোনেশিয়া। ছবি: রয়টার্স

ইন্দোনেশিয়ার সুরাবায়ায় রোববার যে হামলা চালানো হয়েছে, তা এক দিক থেকে একেবারেই নতুন। একই পরিবারের পাঁচজন এই হামলায় জড়িত ছিলেন। কিন্তু নতুনত্ব এখানে নয়। এতে মা-বাবা তাদের সন্তানদের নিয়ে এসেছিলেন নিশ্চিত মৃত্যুর দরজায়। তাদের নিয়ে চালিয়েছেন এই আত্মঘাতী বোমা হামলা। পৃথকভাবে তারা তিনটি গির্জায় হামলা করেন।

ইন্দোনেশিয়ায় বেশ কিছুদিন ধরেই বোমা হামলা হচ্ছে। কিন্তু রোববারের হামলা এই সব হামলাকে ছাড়িয়ে গেছে এর ব্যাপ্তি ও প্রকরণের কারণে। গত এক দশকের মধ্যে এটিই ছিল সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা। আর রইল প্রকরণ। এমন নয় যে, এর আগে কোনো শিশুকে এ ধরনের হামলায় সন্ত্রাসীরা ব্যবহার করেনি। করেছে। কিন্তু সেসব ক্ষেত্রে মাদক দিয়ে কিংবা অন্য কোনোভাবে সংশ্লিষ্ট শিশুদের হামলা চালাতে বাধ্য করা হয়।

রোববার এক মা তাঁর দুই মেয়েকে নিয়ে একটি গির্জায় হাজির হন আত্মঘাতী হামলা চালানোর উদ্দেশে। একই সময়ে তাঁর অন্য দুই সন্তান ও তাদের বাবা যান অন্য দুই গির্জায় হামলা চালাতে। দুই মেয়ের বয়স ৯ ও ১২ এবং দুই ছেলের বয়স ১৬ ও ১৮ বছর।

সন্তানদের নিয়ে মা-বাবার আত্মঘাতী হামলা চালানোর এই ঘটনার বিস্ময় না কাটতেই সোমবার (১৪ মে) একই শহরের একটি পুলিশ স্টেশনে হামলা চালায় অপর এক দম্পতি তাদের তিন সন্তানকে নিয়ে। হামলার এই ধরনটি রীতিমতো ভাবিয়ে তুলছে নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের।

নাইয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্দোনেশিয়ার সম্পর্কিত বিশেষজ্ঞ আলেক্সান্ডার রেমন্ড বিবিসিকে বলেন, ‘এই ধরনের হামলা একেবারে নতুন। এটা এমন কিছু, যা আমরা এর আগে ইন্দোনেশিয়ায় দেখিনি।’

বিষয়টি নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের সামনে এক নতুন ধরনের সমস্যা হাজির করেছে। প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় কম সন্দেহজনক মনে হওয়ায় নিরাপত্তা কর্মীরা সাধারণত শিশুদের দিকে কম নজর রাখেন। আর এই বিষয়টিকেই ব্যবহার করছে সন্ত্রাসীরা। ইন্দোনেশিয়ার জেনদেরাল আচমাদ ইয়ানি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব গভর্নমেন্টের নিরাপত্তা বিশ্লেষক ইয়োহানস সুলাইমান বিবিসিকে বলেন, ‘শিশুদের কেউ সন্দেহ করে না। নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের কাজের ধরনই হচ্ছে সন্দেহজনক কোনো কিছু বহন করছে কিনা সেদিকে নজর রাখা। আর এ ক্ষেত্রে পুরুষদেরই সবচেয়ে কড়া নজরদারির মধ্যে রাখা হয়। কিন্তু এমন ঘটনার পর ভবিষ্যতে, হয়তো কাল থেকেই পুলিশ ও নিরাপত্তা কর্মকর্তারা শিশুদের দিকে কড়া নজর রাখতে বাধ্য হবে।’

আত্মঘাতী হামলায় নিহতদের স্মরণে জাকার্তায় মোমবাতি জ্বালানো হয়। জাকার্তা, ১৪ মে। ছবি: এএফপি

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রথম দিকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো পুরুষদের দিয়েই বিভিন্ন হামলা চালাত। এ ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের পর তালেবান ও ইসলামিক স্টেটের (আইএস) মতো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো এই কাজে নারীদেরও ব্যবহার করতে শুরু করে। কারণ সে সময় নারীদের কম সন্দেহজনক বলে মনে করা হতো। পরে নারী বোমা হামলাকারীর সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ সম্পর্কিত নিরাপত্তা ব্যবস্থাও জোরদার করা হয়। আর এবার এই কাজে তারা শিশুদের ব্যবহার করতে শুরু করেছে।

ইন্দোনেশিয়ার কথাই ধরা যাক। দেশটিতে এর আগে হওয়া কোনো সন্ত্রাসী হামলায় না নারী, না শিশু জড়িত ছিল।
ইয়োহানস সুলাইমান বলেন, ‘আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থার সবচেয়ে দুর্বল অংশের সুযোগ নিচ্ছে তারা। মানুষ শিশুদের কাছ থেকে হামলার ঝুঁকিবোধ করে না। আর শিশু বিশেষত মা-বাবার সঙ্গে থাকা শিশুদের নিরাপত্তা রক্ষীরা নিরাপদ মনে করে ঠিকমতো তল্লাশিও করে না।’

এ ধরনের ঘটনা ইন্দোনেশিয়ায় নতুন হলেও সিরিয়া, ইরাক ও নাইজেরিয়ায় নতুন নয়। সিরিয়া ও ইরাকে শিশুদের ব্যবহার করে এ ধরনের বহু হামলা করেছে আইএস। আর নাইজেরিয়ায় একই কাজ করেছে বোকো হারাম। তবে সেসব স্থানে দরিদ্র পরিবার কিংবা শরণার্থীশিবির থেকে শিশুদের জোর করে এনে এ কাজে লাগানো হয়। এ ক্ষেত্রে বোকো হারাম অন্য সব সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে ছাড়িয়ে গেছে বলে গত বছর জানিয়েছিল জাতিসংঘ।