Thank you for trying Sticky AMP!!

সিরিয়া: লড়াই–বিরোধ–স্বার্থ আর কান্নার ১১ বছর, যুদ্ধ কি চলবেই

যুদ্ধ শুরুর আগে সিরিয়ার জনসংখ্যা ছিল ২ কোটি ২০ লাখ। তাদের অর্ধেকের বেশি যুদ্ধের কারণে উদ্বাস্তু হয়েছে

শুরুটা হয়েছিল নিজ দেশের শাসনকাঠামোর বিরুদ্ধে জনগণের, বিশেষত বেকার তরুণদের প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ থেকে। তারুণ্যের সেই প্রতিবাদ দমাতে খড়্গ হাতে তুলে নেন দেশটির প্রেসিডেন্ট। রক্ত ঝরে রাজপথে। অশান্তি ও সংঘাত ছড়ায় দেশজুড়ে। সেই শুরু, এরপর দেশটির সংঘাত রূপ নেয় গৃহযুদ্ধে। এতে একে একে জড়িয়ে পড়ে আঞ্চলিক শক্তি থেকে শুরু করে বৈশ্বিক পরাশক্তিরা। প্রাণ যায় কয়েক লাখ মানুষের। দেখা দেয় ইতিহাসের ভয়াবহতম মানবিক সংকটের।

বলছি সিরিয়ার কথা। একসময়ের সমৃদ্ধ দেশটি এখন রীতিমতো ধ্বংসস্তূপ, যুদ্ধের ভারে শ্রান্ত। ২০১১ সালের মধ্য মার্চে দেশটিতে যে সংকটের সূচনা, তার আজও সমাধান হয়নি। এর মধ্যে পেরিয়ে গেছে ১১ বছর। দেশটিতে শান্তি ফেরেনি। ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা ও যুদ্ধ নিয়ে যখন বিশ্ববাসী সরব, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় ভুগছে; তখন ১৫ মার্চ অনেকটা নীরবে কেটে গেল সিরিয়া যুদ্ধের বছরপূর্তি।

জাতিসংঘ বলছে, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে সিরিয়ায় ১ কোটি ৪৬ লাখের বেশি মানুষের মানবিক সহায়তা প্রয়োজন ছিল। তাদের মধ্যে প্রায় ৫০ লাখ মানুষ চরম সংকটে ভুগছে। দেশটিতে প্রতিদিন ১ কোটি ২০ লাখের বেশি মানুষ পর্যাপ্ত খাবার পায় না। প্রায় ৫ লাখ সিরীয় শিশু ভয়াবহ অপুষ্টিতে ভুগছে।

যেভাবে শুরু

মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সিরিয়ায় ১৯৭১ সালে ক্ষমতায় এসেছিলেন শাসক হাফেজ আল-আসাদ। ২০০০ সালে তাঁর মৃত্যু হয়। তখন পর্যন্ত সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট ছিলেন তিনি। এরপর ওই বছরের ১৭ জুলাই ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন তাঁর ছেলে বাশার আল-আসাদ। ২১ বছর পরও তিনি সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট পদে রয়েছেন। বাশার আল-আসাদের ক্ষমতা নেওয়ার আগে থেকেই সিরিয়ার তরুণদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব, দুর্নীতি, রাজনৈতিক ও বাক্‌স্বাধীনতার অভাববোধ থেকে তুমুল হতাশা ছিল, যা উসকে দেয় আরব বসন্ত।

২০১১ সালের মার্চে সিরিয়ার দক্ষিণের শহর দেরাতে প্রথম সরকারবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়। তবে তার আগে দেশটির বিভিন্ন স্থানে ছোট ও বিচ্ছিন্ন বিক্ষোভ হয়েছিল। বিক্ষোভ দমিয়ে গদি টিকিয়ে রাখতে সরকারি বাহিনীকে মাঠে নামান বাশার আল-আসাদ। দমন-পীড়নের মুখে বিক্ষোভকারীরা বাশার আল-আসাদের পদত্যাগ দাবি তোলেন। ফলে বেড়ে যায় সরকারি দমন-পীড়নের মাত্রা। বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে পুরো সিরিয়ায়। সিরিয়ায় বড় ধরনের বিক্ষোভ দেখা যায় ২০১১ সালের ১৫ মার্চ। এ দিনকেই সিরিয়ায় গণ-আন্দোলনের শুরুর দিন হিসেবে গণ্য করা হয়।

একপর্যায়ে বাশার আল-আসাদের বিরোধীরা হাতে অস্ত্র তুলে নেয়। তাদের ‘বিদেশি শক্তির মদদে পরিচালিত সন্ত্রাসী’ হিসেবে চিহ্নিত করে সিরিয়া সরকার। চলে চরম দমন-পীড়ন। তবে খুব একটা লাভ হয়নি। সিরিয়াজুড়ে শতাধিক সশস্ত্র গোষ্ঠী বাশার আল-আসাদের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করে। একের পর এক এলাকা সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। দেশটিতে শুরু হয় গৃহযুদ্ধ।

সামরিক সমাধান বিভ্রম তৈরি করবে। রাজনৈতিক সমাধান পথ দেখাতে পারে। তবে এ জন্য সবার সদিচ্ছা থাকতে হবে।
গেইর পেদারসেন, জাতিসংঘের বিশেষ দূত

এ পরিস্থিতির সুযোগ নেয় বিদেশি শক্তি-পরাশক্তিরা। কেউ কেউ বাশার আল-আসাদের পাশে দাঁড়ায়। তাঁর প্রতি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়। কেউবা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করে। এর মধ্য দিয়ে দেশটিতে উত্থান হয় ইসলামিক স্টেট (আইএস) ও আল-কায়েদার। স্বশাসনের দাবি তুলে সংঘাতে নতুন মাত্রা যুক্ত করে সিরিয়ার কুর্দিরা। তবে এগুলোর জন্য সবচেয়ে ভুক্তভোগী হতে হচ্ছে দেশটির সাধারণ মানুষকে। জানমালের ক্ষতি পোহাতে হচ্ছে তাদের।

নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ঘর ছেড়েছে সিরিয়ার শিশুরাও

ব্যাপক প্রাণহানি

২০১১ সালের মার্চ থেকে ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত এক দশকে যুদ্ধকবলিত সিরিয়ায় সামরিক-বেসামরিক মিলিয়ে নারী, শিশুসহ ৩ লাখ ৫০ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণ গেছে। এ হিসাব জাতিসংঘের। তবে সংস্থাটি বলছে, প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার পর্যবেক্ষক সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটসের হিসাবে, ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত সিরিয়া যুদ্ধে নিহতের সংখ্যা ৪ লাখ ৯৪ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। অন্যদিকে অধিকার সংগঠন ভায়োলেশনস ডকুমেন্টেশন সেন্টার বলছে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সিরিয়ায় নিহতের এ সংখ্যা ২ লাখ ৩৮ হাজার। এর মধ্যে ১ লাখ ৪৪ হাজারের বেশি বেসামরিক মানুষ।

যারা জড়িত

বাশার আল-আসাদ সরকারকে প্রকাশ্যে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে রাশিয়া ও ইরান। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্সসহ পশ্চিমা দেশগুলো বাশার আল-আসাদবিরোধী। তাদের সঙ্গে রয়েছে তুরস্ক, সৌদি আরবসহ আরব দেশগুলোর অনেকেই।

২০১৫ সালে বাশার আল-আসাদ সরকারের সমর্থনে বিমান হামলার মধ্য দিয়ে সিরিয়া যুদ্ধে প্রকাশ্যে জড়িয়ে পড়ে রাশিয়া। মস্কোর দাবি, তারা সিরিয়ায় শুধু ‘সন্ত্রাসীদের’ স্থাপনায় হামলা চালায়। তবে পশ্চিমারা বলে থাকে, রুশ হামলায় সশস্ত্র বিদ্রোহী ও বেসামরিক মানুষজনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।

বাশার আল-আসাদকে অস্ত্র, অর্থ, যোদ্ধা দিয়ে সহায়তা করছে ইরান। তেহরানের অর্থায়নে অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ পাওয়া হাজারো শিয়া মিলিশিয়া সিরিয়াজুড়ে লড়াই করছে। তাদের বেশির ভাগ লেবাননের হিজবুল্লাহর সঙ্গে সম্পৃক্ত। ইরাক, আফগানিস্তান, ইয়েমেনসহ বিভিন্ন দেশ থেকে অনেকেই সিরিয়ায় গিয়ে বাশার আল-আসাদের হয়ে হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছে।

অন্যদিকে বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না পশ্চিমারা। তাই তারা আসাদবিরোধী সশস্ত্র মিলিশিয়াদের অস্ত্র ও অর্থ জোগান দিয়েছে, দিচ্ছে। কুর্দি ও বাশার আল-আসাদবিরোধী সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সের (এসডিএফ) সহায়তার জন্য ২০১৪ সাল থেকেই দেশটিতে বিমান হামলা অব্যাহত রেখেছে পশ্চিমারা। তুরস্ক পশ্চিমা জোটের সঙ্গে থাকলেও কুর্দিদের ক্রম উত্থানে ভীত। কেননা, দেশটির সীমান্ত এলাকায় অনেক কুর্দির আবাস। ইরানের আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী ইসরায়েল ও সৌদি আরবও সংগত কারণে পশ্চিমা জোটের সঙ্গে রয়েছে। দেশটিতে নিয়মিত হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলও।

Also Read: সিরিয়া যেন সবার স্বার্থের রণক্ষেত্র

ভুগছে সাধারণ মানুষ

যুদ্ধ শুরুর আগে সিরিয়ার জনসংখ্যা ছিল ২ কোটি ২০ লাখ। তাদের অর্ধেকের বেশি যুদ্ধের কারণে উদ্বাস্তু হয়েছে। প্রায় ৭০ লাখ মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়ে প্রাণ বাঁচাতে সিরিয়ার এক শহর থেকে অন্যত্র চলে গেছেন। প্রায় ২০ লাখ অসহায় মানুষ বিভিন্ন শরণার্থীশিবিরে জায়গা জুটিয়েছে। ন্যূনতম মৌলিক সেবা ছাড়া সেসব শিবিরে তাদের মানবেতর জীবন কাটছে। আরও প্রায় ৬৮ লাখ সিরিয়াবাসী প্রতিবেশী লেবানন, জর্ডান, তুরস্কসহ বিভিন্ন দেশে পালিয়ে গেছে। অনেকে শরণার্থী হিসেবে ইউরোপে আশ্রয় নিয়েছে। সিরীয়দের দেশ ছাড়ার এসব ঘটনাকে সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে বড় শরণার্থী সংকট বলে মত বিশ্লেষকদের।

জাতিসংঘ বলছে, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে সিরিয়ায় ১ কোটি ৪৬ লাখের বেশি মানুষের মানবিক সহায়তা প্রয়োজন ছিল। তাদের মধ্যে প্রায় ৫০ লাখ মানুষ চরম সংকটে ভুগছে। দেশটিতে প্রতিদিন ১ কোটি ২০ লাখের বেশি মানুষ পর্যাপ্ত খাবার পায় না। প্রায় ৫ লাখ সিরীয় শিশু ভয়াবহ অপুষ্টিতে ভুগছে।

মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে করোনা মহামারি। এ ছাড়া বাশার আল-আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমারা। সিরীয় শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়া লেবানন চরম অর্থনৈতিক সংকটে ভুগছে। ২০২১ সালে সিরিয়ার মুদ্রার বিনিময় হারে ৮০ শতাংশ পতন দেখা গেছে। চলতি বছরের শুরুতে তা ১৪০ শতাংশে পৌঁছে গেছে। এসব কারণে যুদ্ধকবলিত সিরিয়া মানবিক সংকট সামাল দিতে পারছে না। করোনা মোকাবিলায় সিরিয়ায় মাত্র ৭ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষকে টিকার পূর্ণাঙ্গ ডোজের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে।

Also Read: সিরিয়া সংকটের রাজনৈতিক সমাধানের উদ্যোগ

প্রাচীন অবকাঠামো ধ্বংস

১১ বছর ধরে চলা যুদ্ধে সিরিয়ার অবকাঠামো খাত কার্যত ধ্বংস হয়ে গেছে। স্যাটেলাইট থেকে তোলা ছবি বিশ্লেষণ করে জাতিসংঘ জানিয়েছে, শুধু সিরিয়ার ঐতিহাসিক শহর আলেপ্পোয় ৩৫ হাজারের বেশি অবকাঠামো ধ্বংস করা হয়েছে। উল্লেখ্য, প্রথমে আইএসের কাছে হাতছাড়া হলেও ২০১৬ সালের শেষ নাগাদ তুমুল লড়াইয়ের পর প্রাচীন এ শহর নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয় বাশার আল-আসাদ সরকার।

হামলা থেকে বাদ যায়নি চিকিৎসাকেন্দ্রও। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, যুদ্ধের কারণে সিরিয়ায় প্রায় অর্ধেক হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। হামলায় প্রাণ গেছে দেশটির স্বাস্থ্য খাতে কর্মরত ৯৩০ জনের। ধ্বংস করা হয়েছে পালমিরাসহ সিরিয়ার বেশির ভাগ প্রাচীন স্থাপনা। ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় রয়েছে সিরিয়ার ছয়টি প্রাচীন স্থাপনা। সংস্থাটি জানিয়েছে, যুদ্ধে সব কটি স্থাপনার ক্ষতি হয়েছে।

সিরিয়া যুদ্ধ নিয়ে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে একটি তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে জাতিসংঘের যুদ্ধাপরাধবিষয়ক তদন্তকারীরা। এতে বলা হয়, সিরিয়ায় সংশ্লিষ্ট সব পক্ষই যুদ্ধাপরাধ করেছে। এর মধ্যে আবাসিক এলাকায় বিমান হামলা চালিয়ে নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা, রাসায়নিক অস্ত্রের প্রয়োগ, মানবিক সহায়তা প্রদানে বাধা দেওয়াসহ নানা গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।

Also Read: সিরিয়া যুদ্ধে ভুল করেছেন ট্রাম্প

দেশটি এখন যার নিয়ন্ত্রণে

রাজধানী দামেস্কসহ সিরিয়ার বড় বড় শহরগুলো এখন বাশার আল-আসাদ সরকারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে দেশের প্রান্তিক পর্যায়ের বড় অংশ সশস্ত্র বিদ্রোহী, জিহাদি এবং কুর্দিপন্থী এসডিএফের নিয়ন্ত্রণে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ইদলিব প্রদেশ, উত্তরাঞ্চলের হামা এবং পশ্চিমের আলেপ্পোয় এখনো আসাদবিরোধীরা শক্তিশালী।

সরকারি বাহিনী যাতে ইদলিবের পুনর্দখল নিতে পারে, এ জন্য ২০২০ সালের মার্চে রাশিয়া ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় একটি যুদ্ধবিরতি হয়েছিল। ওই সময় ইদলিবে সহিংসতা কমাতে সহায়ক হয়েছিল এ উদ্যোগ। তবে গত বছর থেকে সেখানে (বিশেষত ইদলিবের দক্ষিণাংশে) হামলা-সহিংসতা আবারও বেড়েছে।

সিরিয়ার উত্তর-পূর্বে তুরস্কের বাহিনী ও তাদের মিত্র সিরীয় বিদ্রোহীরা এসডিএফের বিরুদ্ধে বড় ধরনের অভিযান পরিচালনা করে। ২০১৯ সালের অক্টোবরে ওই অঞ্চলে একটি সেফ জোন প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হয়। এর মধ্য দিয়ে কুর্দিনিয়ন্ত্রিত প্রশাসনিক অঞ্চলে সাত বছরের মধ্যে প্রথমবার সিরিয়ার সরকারি সেনারা প্রবেশ করে। তবে সরকারি সেনা উপস্থিতির পরও অঞ্চলটিতে এখনো বিবদমান পক্ষগুলোর মধ্যে হামলা-সংঘাতের ঘটনা ঘটছে।

সিরিয়ার ঐতিহাসিক শহর আলেপ্পোয় ৩৫ হাজারের বেশি অবকাঠামো ধ্বংস করা হয়েছে

যুদ্ধ কি চলবেই

একদিকে অস্ত্রের ঝনঝনানি, অন্যদিকে শান্তি আলোচনা—এখন এ দুইয়ে আটকে রয়েছে সিরিয়ার ভাগ্য। এর মধ্যে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ থামার কোনো লক্ষণ এখন পর্যন্ত নেই। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ সিরিয়ায় শান্তি ফেরাতে ২০১২ সালে সই হওয়া জেনেভা সমঝোতা বাস্তবায়নের ওপর জোর দিতে বলেছে। ওই সমঝোতায় দেশটিতে পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে একটি অন্তর্বর্তীকালীন শাসনকাঠামো গড়ার কথা বলা হয়েছে।

জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় চলছে ধারাবাহিক শান্তি আলোচনা। ৯ ধাপের আলোচনা শেষে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল বের করে আনা যায়নি। বাশার আল-আসাদ তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসতে, যেকোনো ধরনের সমঝোতায় আসতে নারাজ। তাই রাশিয়া, ইরান ও তুরস্ক আলাদাভাবে রাজনৈতিক আলোচনা এগিয়ে নিচ্ছে।

তবে বিগত বছরগুলোয় একটি সমঝোতা হয়েছে। ১৫০ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করতে সম্মত হয়েছে বিবদমান পক্ষগুলো। এ কমিটি সিরিয়ার জন্য নতুন একটি সংবিধান রচনা করবে। জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করবে। তবে এ উদ্যোগ এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।

Also Read: সিরিয়ায় লাখো মানুষ ঘর ছেড়েছে

২০২১ সালের অক্টোবরে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় সর্বশেষ শান্তি আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ওই সময় জাতিসংঘের বিশেষ দূত গেইর পেদারসেন বলেছিলেন, ‘অগ্রগতি খুবই হতাশাজনক। শান্তি প্রতিষ্ঠায় কমিটির সদস্যরা একটি অভিন্ন পথ খুঁজে বের করা থেকে এখনো অনেক দূরে রয়েছেন।’

সিরিয়া যুদ্ধ এখন ১২তম বছরে পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে আগামী দিনগুলোয় দেশটিতে দ্রুত শান্তি ফিরবে, এমন আশাও করতে পারছেন না বিশ্লেষকেরা। তবে তাঁরা আলোচনার ওপর জোর দিচ্ছেন। বিশ্লেষকদের মতে, একমাত্র আলোচনার পথ খোলা থাকা সিরিয়ায় শান্তি ফেরাতে পারে। তাই তো সিরিয়ার ভবিষ্যৎ নিয়ে গেইর পেদারসেনের ভাষ্য, ‘সামরিক সমাধান বিভ্রম তৈরি করবে। রাজনৈতিক সমাধান পথ দেখাতে পারে। তবে এ জন্য সবার সদিচ্ছা থাকতে হবে।’

বিবিসি, আল-জাজিরা ও রয়টার্স অবলম্বনে অনিন্দ্য সাইমুম ইমন