Thank you for trying Sticky AMP!!

হজে যেতে সৌদি বাধা প্রত্যাহারের আহ্বান

গেল হজ মৌসুমের মতো এবারও সৌদি আরব কাতারের নাগরিকদের পবিত্র হজ পালনে বাধার সম্মুখীন করছে। এই অবস্থায় কাতারের জাতীয় মানবাধিকার কমিটি (এনএইচআরসি) জাতিসংঘের প্রতি এই বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে। জাতিসংঘের তিনটি কমিটির কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এনএইচআরসির চেয়ারম্যান ড. আলী বিন স্মাইখ আল-মারি এই আহ্বান জানান।
চিঠিতে এনএইচআরসি চেয়ারম্যান বলেন, পবিত্র হজ পালনের জন্য কাতারের বহু নাগরিক উদ্‌গ্রীব হয়ে আছে। কিন্তু সৌদি কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন বাধার সৃষ্টি করছে। এ অবস্থায় কাতারের নাগরিকদের হজ পালনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সৌদি কর্তৃপক্ষের ওপর চাপ প্রয়োগের জন্য জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে কাতার।
এনএইচআরসি চেয়ারম্যানের এই চিঠি জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের সভাপতি ভোজিস্লাভ সাক, জাতিসংঘের মানবাধিকার সম্পর্কিত হাইকমিশনার যুবরাজ জেইদ বিন রাদ ও ধর্ম ও বিশ্বাসের স্বাধীনতা সম্পর্কিত বিশেষ প্রতিনিধি আহমেদ শহীদের কাছে পাঠানো হয়।
চিঠিতে আল-মারি বলেন, ধর্ম ও বিশ্বাসের স্বাধীনতা লঙ্ঘন করছে সৌদি আরব। ধর্ম পালনের অধিকার হরণ করে তারা হজকে রাজনীতিকীকরণ করছে। কাতারের নাগরিকদের সামনে হজ পালনে অন্যায্যভাবে বিভিন্ন বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে। এ বিষয়ে কাতারের পক্ষ থেকে করা যোগাযোগে সাড়া দেওয়া হচ্ছে না। বরং তারা বিভিন্ন বিভ্রান্তিকর তথ্য দিচ্ছে, যা কাতারের হজ গমনেচ্ছুদের নানাভাবে হয়রানি করছে। আন্তর্জাতিক সমালোচনা এড়াতে সৌদি কর্তৃপক্ষ সরাসরি এ বিষয়ে নেতিবাচক কোনো অবস্থান প্রকাশও করছে না,

আবার কাতারের নাগরিকদের জন্য সহযোগিতামূলক আচরণও করছে না।
চিঠিতে আল-মারি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, সৌদি কর্তৃপক্ষ এভাবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও সংস।থাগুলোকে বোকা বানাতে পারে না। তারা এই নিয়ে দ্বিতীয়বার কাতারের হজযাত্রীদের সঙ্গে বৈরী আচরণ করছে। কাতার এ ক্ষেত্রে সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে রাখতে চায় যে, এনএইচআরসি এ বিষয়ে যেকোনো ধরনের হয়রানিমূলক আচরণের জন্য আন্তর্জাতিক পরিসরে সৌদি কর্তৃপক্ষের জবাবদিহি নিশ্চিতে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
আল-মারি বলেন, জাতিসংঘ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ আন্তর্জাতিক সব মানবাধিকার সংস্থার প্রতিবেদন ও বিবৃতিতে সৌদি আরবের ধর্মীয় স্বাধীনতা পরিপন্থী এই পদক্ষেপের নিন্দা জানানো হয়েছে। ওইসব প্রতিবেদনে সৌদি কর্তৃপক্ষের এ সম্পর্কিত বিধি লঙ্ঘনের যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে। কাতারের নাগরিকদের হজ পালনে বাধা প্রদানের মাধ্যমে সৌদি কর্তৃপক্ষ ধর্মীয় স্বাধীনতায় গুরুতরভাবে হস্তক্ষেপ করেছে। এটি মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল।
চিঠিতে আল-মারি লেখেন, হজ মৌসুম এগিয়ে এলেও আগের মতোই কাতার থেকে সৌদি আরবে সরাসরি ফ্লাইট বন্ধ আছে। ফলে ওমরাহ মৌসুমে কাতারের বহু ধর্মপ্রাণ মুসল্লি পবিত্র ওমরাহ পালন করতে পারেননি। এবার হজের সময়ও একই অবস্থা অক্ষুণ্ন থাকায় এ নিয়েও সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। এমনকি হজযাত্রীদের জন্য ইলেকট্রনিক নিবন্ধনও বন্ধ রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে সৌদি হজ এজেন্ট ও কাতারের হজ ক্যাম্পগুলোর মধ্যে আর্থিক লেনদেনও হতে দিচ্ছে না সৌদি কর্তৃপক্ষ। আবার সৌদি আরবে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না কাতারের রিয়াল। ফলে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে সংশ্লিষ্ট কাতারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে।
এ বিষয়ে সৌদি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, জাতিসংঘে নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত এমন সব শর্ত তুলে ধরেন, যা গত বছরের ৫ জুন অবরোধ আরোপের পর দেওয়া হয়েছিল। এই সব শর্তকে কাতার অযৌক্তিক ও অর্থহীন বলে মনে করে বলে চিঠিতে উল্লেখ করেছেন আল-মারি। তিনি লেখেন, সৌদি কর্তৃপক্ষ পবিত্র হজকেও রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে। এই ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি করে তা প্রত্যাহারের শর্ত হিসেবে তারা পুরোনো দাবিগুলোই তুলে ধরছে, যার কোনো নৈতিক ভিত্তিই নেই।
এই চিঠিকে আমলে নিয়ে এ বিষয়ে পর্যালোচনা করে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জাতিসংঘের ওই তিন দপ্তরের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে এনএইচআরসি। একই সঙ্গে এ বিষয়ে সৌদি আরবের সঙ্গে আলোচনা করে এর চটজলদি সমাধানের পথ খোলার পাশাপাশি অন্যায্য এই অবরোধ প্রত্যাহারে জাতিসংঘকে উদ্যোগী ভুমিকা গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে।