Thank you for trying Sticky AMP!!

'খাসোগি বিপজ্জনক ইসলামপন্থী ছিলেন'

মোহাম্মদ বিন সালমান, সাংবাদিক জামাল খাসোগি

সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান যুক্তরাষ্ট্রকে বলেছেন, সাংবাদিক জামাল খাসোগি ‘বিপজ্জনক ইসলামি কট্টরপন্থী’ ছিলেন। ওয়াশিংটন পোস্ট ও নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হোয়াইট হাউসে ফোনালাপে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বলেছিলেন এ কথা। খাসোগিকে হত্যার কথা সৌদি আরব স্বীকার করার আগে তিনি এ কথা বলেন। আজ শুক্রবার বিবিসি অনলাইনের খবরে বলা হয়, সৌদি আরব ওয়াশিংটন পোস্ট ও নিউইয়র্ক টাইমসের এ বিষয়ক প্রতিবেদন অস্বীকার করেছে।

সৌদি সাংবাদিক খাসোগি গত ২ অক্টোবর তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেট ভবনে ঢোকার পর থেকে নিখোঁজ ছিলেন। নানাভাবে জল ঘোলা করার পর আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সৌদি আরব স্বীকার করতে বাধ্য হয়, খাসোগিকে কনস্যুলেট ভবনের ভেতরে হত্যা করা হয় ওই দিন। তবে এখন পর্যন্ত তাঁর মরদেহের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। সৌদি আরব এ সম্পর্কে কোনো তথ্য দেয়নি।
সৌদি আরব খাসোগিকে হত্যা করা হয়েছে বলে স্বীকার করলেও এর সঙ্গে রাজপরিবারের জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে। তারা বলেছে, ‘সব সত্য খুঁজে বের করতে তারা বদ্ধপরিকর।’
সবশেষ সৌদি যুবরাজ বলেছেন, ‘এই অপরাধ সব সৌদি নাগরিকের জন্য বেদনাদায়ক।’

ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, খাসোগি নিখোঁজের এক সপ্তাহ পর ৯ অক্টোবর হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জামাতা জ্যারড কুশনার ও দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বল্টনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন যুবরাজ মোহাম্মদ। ওই সময় তিনি তাঁদের বলেন, খাসোগি সৌদি আরববিরোধী ইসলামি সংগঠন মুসলিম ব্রাদারহুডের সদস্য। ফোনালাপে যুবরাজ হোয়াইট হাউসকে যুক্তরাষ্ট্র-সৌদির বন্ধুত্ব ধরে রাখার ওপর জোর দেন।

পত্রিকায় বলা হয়েছে, খাসোগির মুসলিম ব্রাদারহুডের সদস্য থাকার কথা প্রত্যাখ্যান করেছে তাঁর পরিবার। খাসোগির পরিবার আরও বলেছে, এ ধরনের দাবি হাস্যকর। কোনো দিক দিয়েই খাসোগি বিপজ্জনক ব্যক্তি ছিলেন না। বেঁচে থাকার সময় খাসোগি নিজেই সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বারবার এ কথা অস্বীকার করেছেন।
খাসোগির পরিবার এখন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছে। সৌদি আরব খাসোগির পরিবারের ওপর ভ্রমণনিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার পরপরই পরিবারের সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান।

খাসোগির মৃত্যু ঠিক কীভাবে হয়েছে, এ বিষয়ে এখনো ঐকমত্যে আসেনি কোনো কর্তৃপক্ষ।
গত বছরের জুন মাসে যুবরাজ মোহাম্মদ ক্ষমতা গ্রহণের পর খাসোগি নিজ দেশ ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে স্বেচ্ছা নির্বাসনের জীবন বেছে নেন। একসময় সৌদি রাজপরিবারের আনুকূল্য পেলেও পরে তিনি বর্তমান শাসকদের রোষানলে পড়েন। তিনি সৌদি শাসক, বিশেষ করে যুবরাজ মোহাম্মদের কড়া সমালোচক ছিলেন। মার্কিন সংবাদপত্র ওয়াশিংটন পোস্টে তিনি কলাম লিখতেন।

রাজনৈতিক ও পেশাগত কারণে খাসোগি তুরস্কের সরকারসহ প্রভাবশালী মহলে পরিচিত মুখ ছিলেন। তুর্কি নারী হাতিজে জেংগিসের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক গড়ে ওঠে এ বছর। তাঁকে বিয়ে করার জন্য আগের স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ–সংক্রান্ত কাগজপত্র আনার জন্য ওই দিন তিনি সৌদি কনস্যুলেট ভবনে গিয়েছিলেন। তিনি যখন ভেতরে ছিলেন, তখন বাইরে অপেক্ষায় ছিলেন হাতিজে। খাসোগি নিখোঁজের পর শুরু থেকেই এ নিয়ে সোচ্চার হয় তুরস্ক। তারা দাবি করে, যুবরাজ মোহাম্মদের নির্দেশে সৌদি আরব থেকে আসা ১৫ জন চর কনস্যুলেট ভবনের ভেতর খাসোগিকে হত্যার পর লাশ টুকরো টুকরো করে স্থানীয় কোনো ব্যক্তিদের দিয়ে ফেলে দিয়েছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান একাধিকবার খাসোগি হত্যা নিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। গত সপ্তাহে সৌদি বাদশা সালমানের সঙ্গে তাঁর ফোনে কথা হয়েছে। এ ঘটনায় দুই দেশের যৌথ তদন্তের ব্যাপারে তিনি রাজি হন।

শুরুতে খাসোগি নিখোঁজের ব্যাপারটি বেমালুম অস্বীকার করে সৌদি আরব। কোনো তথ্য–প্রমাণ দেখাতে না পারলেও তারা জানায়, খাসোগি কাজ শেষে কনস্যুলেট ভবন থেকে বেরিয়ে গেছেন। দেশটির পক্ষে ছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও। তবে অন্যান্য প্রভাবশালী দেশের চাপের মুখে ঘটনার ১৭ দিন পর সৌদি আরব প্রথমবারের মতো স্বীকার করে খাসোগি বেঁচে নেই। কনস্যুলেট ভবনে সৌদি নাগরিক কয়েক জনের সঙ্গে ‘হাতাহাতির সময়’ তিনি মারা গেছেন। এ ঘটনায় ১৮ জন সৌদি নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয় এবং দুই প্রভাবশালী কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়। সৌদির এ বক্তব্য অন্যান্য দেশ প্রত্যাখ্যান করলে সৌদি স্বীকার করে, খাসোগিকে হত্যা করা হয়েছে, তবে তা পূর্বপরিকল্পিত ছিল না। সেই বক্তব্যও হালে পানি না পাওয়ায় শেষ পর্যন্ত সৌদি আরব খাসোগি হত্যাকে পূর্বপরিকল্পিত বলে স্বীকার করে। তবে এর সঙ্গে যুবরাজ মোহাম্মদের জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করার জায়গায় তারা অনড় রয়েছে।