Thank you for trying Sticky AMP!!

'দোয়া করো, হয়তো মেরে ফেলবে'

হোটেলের বাইরে নিরাপত্তাকর্মীদের টহল। ছবি: এএফপি

‘আমার জন্য দোয়া করো। আমি হয়তো মরে যাব।’ এই কথাগুলো কাবুলে বিলাসবহুল ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের এক অতিথির। বন্দুকধারীদের অতর্কিত হামলার সময় তিনি সেখানে অবস্থান করছিলেন। পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর হেরাতের আফগান টেলিকমের আঞ্চলিক পরিচালক তিনি। আজ রোববার এই হোটেলে এই টেলিকমের দেশীয় প্রতিনিধিদের বার্ষিক সম্মেলন ছিল। ঘটনার সময় তিনি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে এ আকুতি জানান।

গতকাল শনিবার রাতে চারজন বন্দুকধারী অতর্কিত ওই হোটেলে হামলা চালায় । হোটেলে ঢুকেই ভারী অস্ত্রে সজ্জিত বন্দুকধারীরা অতিথিদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে শুরু করে। বন্দুকধারীদের হামলায় এক বিদেশিসহ ছয়জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আটজন। প্রায় ১২ ঘণ্টা পর নিরাপত্তা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয় বলে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আজ রোববার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাজিব দানিশ টোলো নিউজকে বলেছেন, হামলাকারী চারজনই নিহত হয়েছে। ৪০ জন বিদেশিসহ হোটেল থেকে ১৫৩ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে।

ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে তায়েব এএফপিকে বলেন, ‘যারা এক সেকেন্ড আগেও আনন্দ করছিল, তারা আতঙ্কে চিৎকার করছিল। কে কোথায় পালাবে, হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে যায়। তাদের মধ্যে অনেকে গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।’

তায়েবের এক সহকর্মী, যিনি হোটেলের পঞ্চম তলায় আটকা পড়েছিলেন, তিনি জানান, হোটেলের কিছু কিছু জায়গা দেখে কসাইখানা মনে হয়েছে। হামলাকারীরা অবশেষে নিহত হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, বন্দুকধারীরা প্রথমেই হোটেলের রেস্টুরেন্টে ঢুকে নৈশভোজকারীদের ওপর এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। এরপর তারা হোটেল কক্ষে ভাঙচুর চালায় এবং কয়েকজন বিদেশিসহ বেশ কয়েকজনকে জিম্মি করে।

আগুনের পুড়ে যায় ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের বিভিন্ন জায়গা। ছবি: রয়টার্স

তায়েব ও তাঁর কয়েকজন বন্ধু পালিয়ে হোটেলের বাইরের পুল এলাকায় লুকিয়ে প্রাণে বাঁচেন। ক্লান্ত তায়েব বলেন, ‘আমি এখান থেকে মুহুর্মুহু বিস্ফোরণ, হ্যান্ড গ্রেনেডের শব্দ পাচ্ছিলাম। তারা অনেক গ্রেনেড ছুড়েছে। আমরা নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তারা এক ঘণ্টা পর আসে। আমরা যখন বেরিয়ে আসি, তখন পাঁচ-ছয়টি লাশ পড়ে থাকতে দেখি। দোতলা, তৃতীয় তলা ও পঞ্চম তলায় আগুন জ্বলছিল। অনেকে চিৎকার করছিল। কারণ, ধোঁয়ায় দম বন্ধ হয়ে তাঁদের মৃত্যু হতে পারত।’

আফগানিস্তানের টোলো নিউজের ফুটেজে দেখা যায়, ভবনের সবচেয়ে উঁচু তলার বারান্দায় আশ্রয় নেন অনেকে। সেখান থেকে তাঁরা বিছানার চাদরকে দড়ির মতো ব্যবহার করে নিচে নামার চেষ্টা করেন। সেখান থেকে একজন হাত ফসকে পড়ে যান।

হোটেলের নিরাপত্তা দল কোনো ধরনের প্রতিরোধ না করেই অতিথিদের তাদের ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিয়ে পালিয়ে যান বলে এএফপির কাছে অভিযোগ করেন এক প্রত্যক্ষদর্শী।

নাম না প্রকাশের শর্তে হোটেলের ২৪ বছরের ওই যুবক এএফপিকে বলেন, ‘তাঁরা কোনো প্রতিরোধ করেননি। তাঁরা অতিথিদের জন্য কিছু করেননি। তাঁদের কোনো অভিজ্ঞতা নেই।’ এই যুবকও কয়েকজনের সঙ্গে হোটেল থেকে দৌড়ে পালায়। তিনি বলেন, ‘আমি তাঁদের কাছে বারবার জানতে চাইছিলাম আমাদের কোথায় যাওয়া উচিত।’

দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র এএফপিকে বলেন, বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠান তিন সপ্তাহ আগে হোটেলের নিরাপত্তার দায়িত্ব নেন। তবে তাৎক্ষণিকভাবে মন্তব্য করার মতো হোটেল কর্তৃপক্ষের কাউকে পাওয়া যায়নি।