Thank you for trying Sticky AMP!!

'মাসিকের' কারণে বাড়ির বাইরে, তারপর...

নেপালের গ্রামগুলোতে মাসিকের সময় নারীদের বাড়ির বাইরে এমন কুঁড়েঘরে থাকতে হয়। ছবি: এএফপি

নেপালের গ্রামগুলোতে মূল বাড়ির বাইরে ছোট কুঁড়েঘর দেখা যায়। কোনো রকমে শুধু অবস্থান নেওয়া যায় সেখানে। ঋতুমতী নারীদের জন্য বানানো হয় এসব কুঁড়েঘর। মাসিকের সময়ে নারীদের মূল বাড়িতে থাকতে দেওয়া হয় না। মাসিক শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের থাকতে হয় ওই কুঁড়েঘরেই। মাসের এই সময়টায় বাড়ির বাইরে কুঁড়েঘরে থাকার সময়ে নেপালের এক নারী দুই ছেলে সন্তানসহ পুড়ে মারা গেছেন।

বিবিসি অনলাইনের খবরে জানানো হয়, গত বুধবার এক নেপালি মাকে তাঁর দুই শিশু সন্তান সহ মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে। মাসিক হওয়ার কারণে প্রচণ্ড শীতের মধ্যে ওই নারীকে কুঁড়ে ঘরে থাকতে বাধ্য করা হয়েছিল। শীত থেকে বাঁচতে তিনি আগুন জ্বালিয়েছিলেন। নেপালের কর্মকর্তাদের ধারণা, আগুনের ধোঁয়ায় দুই ছেলেকে নিয়ে ঘুমের মধ্যেই শ্বাসরোধ হয়ে মারা গেছেন ওই মা।

নেপালে এভাবে মাসিকের সময়ে নারীদের বাড়ির বাইরে পাঠানোর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে এখনো এই কুসংস্কার চালু রয়েছে। এই প্রথাকে ‘চৌপাডি’ বলা হয়। ২০১৭ সালে এই প্রথা নিষিদ্ধ করা হয়।

চৌপাডির কারণে এবারই প্রথম এমন মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। এর আগেও ওই সব কুঁড়েঘরে শ্বাসরোধ হয়ে আরও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এক কিশোরী মাসিকের সময় এমন কুঁড়েঘরে থাকার সময়ে সাপের কামড়ে মারা যায়।
এই প্রাচীন প্রথার সঙ্গে হিন্দু ধর্মের সম্পৃক্ততা রয়েছে। মাসিকের সময় বা সন্তান জন্মদানের পরপর নারীদের ‘অশুদ্ধ’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই সময় নারীরা দুর্ভাগ্য বয়ে আনতে পারেন বলে মনে করা হয়। তাই মাসিকের সময় নারীদের কুঁড়েঘরে বা গোয়ালঘরে থাকতে বাধ্য করা হয়।

ওই সময়ে নারীদের পুরুষ ও গরু ছাগল স্পর্শ করাও নিষিদ্ধ। কিছু কিছু খাবারও খেতে দেওয়া হয় না। বাড়ির টয়লেট ব্যবহার ও কিছু ধোয়ার সুবিধা দেওয়া হয় না। গ্রামে দূরত্ব রেখে হাঁটাচলা করতে বলা হয়। কিশোরীরা স্কুলে যেতে পারে না। প্রচণ্ড শীতেও মেয়েদের বাড়ির বাইরে রাখা হয়। অনেক সময় ওই মেয়েদের ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনাও ঘটে।

সবশেষ মা এবং দুই সন্তানের মৃত্যুর ঘটনাটি ঘটেছে নেপালের বাজুরা জেলায়। জেলার প্রধান প্রশাসক চেতারাজ বারাল জানিয়েছেন, লাশের ময়নাতদন্ত হয়েছে। তবে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে কর্তৃপক্ষ এখনো নিশ্চিত তথ্য পায়নি। মরদেহ সৎকারের জন্য পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
বার্তা সংস্থা এএফপিকে পুলিশ জানিয়েছে, কুঁড়েঘরে কম্বলের একাংশ পোড়া ছিল। আর মায়ের দুই পা সহ শরীর দগ্ধ ছিল। মায়ের সঙ্গে মারা যাওয়া দুই শিশুর একটির বয়স ১২ ও অপরটির ৯ বছর।
নেপালের আইন অনুসারে, কোনো নারীকে চৌপাডিতে বাধ্য করা হলে তিন মাসের কারাদণ্ড ও ২৭ ডলার অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে। অধিকারকর্মীরা আইনটির কঠোর প্রয়োগের দাবি জানিয়েছেন।