Thank you for trying Sticky AMP!!

তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে যা জানা গেল

সিরিয়ায় ভূমিকম্পে ধসে যাওয়া ভবনে উদ্ধার অভিযান চালানো হচ্ছে

তুরস্ক ও সিরিয়ায় ৭ দশমিক ৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে সাড়ে তিন হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও বহু মানুষ। অনেকে এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। এসব মানুষের বেশির ভাগই ভূমিকম্পে ধসে পড়া ভবনের ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রাণহানি ও ভবনধস সব মিলিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত হয়েছে।

ভয়াবহ এ ভূমিকম্পে প্রাণহানির সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী কয়েক দিন বা কয়েক সপ্তাহ ধরে পরাঘাত হতে পারে।

ভূমিকম্প এতটাই শক্তিশালী ছিল যে সাইপ্রাস, মিসর ও লেবাননেও তা অনুভূত হয়েছে।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বলেছেন, দুর্ঘটনাস্থলে তৎক্ষণাৎ অনুসন্ধান ও উদ্ধারকারী দল পাঠানো হয়েছে। অপরদিকে বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে এ ঘটনায় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে। বেসামরিক সিরীয় নাগরিকদের উদ্ধারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি সাহায্যর আবেদন জানিয়েছে তারা।

ধ্বংসস্তূপের মধ্যে দাঁড়িয়ে অসহায়ভাবে তাকিয়ে আছেন ভূমিকম্পে বেঁচে যাওয়া এই সিরীয় নারী

ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল কোথায়

স্থানীয় সময় সোমবার ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে এ ভূমিকম্প হয়। ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল সিরিয়া সীমান্তবর্তী তুরস্কের গাজিয়ানতেপ শহরের কাছে। ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৮। গাজিয়ানতেপ শহরটিতে অন্তত ২০ লাখ মানুষ বসবাস করে। এর মধ্যে হাজার হাজার সিরীয় নাগরিক আছে, যারা ২০১১ সালে দেশটিতে গৃহযুদ্ধ শুরুর পর এখানে বসবাস শুরু করে।

যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা জানিয়েছে, এলাকাটির বেশির ভাগ ভবনই শুধু ইট দিয়ে তৈরি করা হয়েছে, যা খুবই ভঙ্গুর। এ নাজুক ভবন সেখানে বসবাসরত বাসিন্দাদের ভূমিকম্পের আঘাতে আরও ভঙ্গুর করে দিয়েছে।

ভূমিকম্পে আহত ব্যক্তিদের হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে

সংস্থাটি আরও জানায়, তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারাসহ দেশটির অন্যান্য শহরে এবং পার্শ্ববর্তী সিরিয়াসহ প্রতিবেশী দেশ লেবানন, সাইপ্রাস, ইসরায়েলেও এ ভূকম্পন অনুভূত হয়। এরপর কয়েকবার পরাঘাত আঘাত হানে। এগুলোর মধ্যে একটি ছিল ৬ দশমিক ৪ এবং একটি ৬ দশমিক ৫ মাত্রার।

প্রথম ভূমিকম্পের কয়েক ঘণ্টা পর গাজিয়ানতেপ থেকে প্রায় ৮০ মাইল দূরে তুরস্কের কাহরামানমারস প্রদেশের ইলবিস্তান জেলায় আরও একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। এর মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৫। তুরস্কের দুর্যোগ ও জরুরি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ জানায়, এটি কোনো পরাঘাত নয়। এটা নতুন ভূমিকম্প।

ভূমিকম্পে হতাহত সম্পর্কে যা জানা গেল

সোমবার সকালে ভূমিকম্পের পর থেকে দ্রুতই নিহত ব্যক্তির সংখ্যা বাড়তে থাকে। তুরস্করের ন্যাশনাল ডিজাস্টার অ্যান্ড ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি জানিয়েছে, সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত তুরস্কের সাতটি রাজ্যে অন্তত ২৮৪ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়।

ভূমিকম্পে তুরস্কে ২ হাজার ৩১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন শহরে অনুসন্ধান ও উদ্ধারকাজ অব্যাহত রয়েছে। তবে বাদ সেধেছে প্রতিকূল আবহাওয়া। শীতকালীন তুষারঝড়ের কারণে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে। তুষারে অনেক সড়ক ঢেকে গেছে।

ভূমিকম্পে ধসে যাওয়া ভবনে উদ্ধারে নেমেছে তুরস্কের কর্তৃপক্ষ

এদিকে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ সিরিয়ার সরকার, হাসপাতাল ও উদ্ধারকর্মীরা ভূমিকম্পে প্রায় ১ হাজার ৩০০ জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, ভূমিকম্পে সিরিয়ার আলেপ্পো, হামা, তারতুস প্রদেশে অসংখ্য ভবন ধসে পড়েছে। আতঙ্কিত মানুষকে ছোটাছুটি করতে দেখা যাচ্ছে।

ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের ভূকম্পনবিদ স্টিফেন হিকস বলেন, এর আগে ১৯৩৯ সালের ডিসেম্বরে তুরস্কের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল।

ওই সময় ৩০ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটে। এ ঘটনার পর ২০২০ সালের জানুয়ারিতে তুরস্কের পূর্বাঞ্চলীয় এলাজিগ শহরে ৬ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে ৪১ জন নিহত হয়েছিল। সে সময় আহত হয়েছিল ১ হাজার ৬০০-এর বেশি মানুষ।

Also Read: ভূমিকম্পে শুধু তুরস্কেই মারা গেছে ৯ শতাধিক মানুষ

যেভাবে চলছে উদ্ধারকাজ

গুরুত্বপূর্ণ অনেকগুলো সড়ক বরফ আর তুষারে ঢেকে যাওয়ায় উদ্ধার তৎপরতা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। উদ্ধারকর্মীরা সতর্ক করে বলেছেন যে সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় এলাকায় ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।

সিরিয়ান আমেরিকান মেডিকেল সোসাইটির মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক পরিচালক মাজিন কিওয়ারা বলেছেন, ‘খারাপ আবহাওয়া ও ভবনধসে পড়ায় বর্তমানে আমরা একধরনের সংকটের মধ্যে পড়েছি। সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার হচ্ছে, ভূমিম্পে অসংখ্য হাসপাতাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’

তুরস্কে প্রথম ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের অঞ্চলে ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা করা হচ্ছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, দিনের তাপমাত্রা ৩-৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসবে আর রাতে তা হিমাঙ্কের নিচে থাকবে। ৩-৫ সেন্টিমিটার পুরু তুষারপাত হতে পারে। আর উত্তরে ভারী তুষারপাতের আশঙ্কা করা হচ্ছে। আরও পার্বত্য অঞ্চলে আগামী দিনগুলোর তাপমাত্রা হিমাঙ্কের ওপরে উঠবে না বলে মনে করা হচ্ছে। যার অর্থ ৫০ থেকে ১০০ সেন্টিমিটার তুষারপাত হতে পারে।

Also Read: ৮৪ বছর পর তুরস্কে আবার এমন ভয়াবহ ভূমিকম্প

প্রথম ভূমিকম্পে তুরস্কে অন্তত প্রায় সাড়ে তিন হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মানে হাজারো মানুষ এখন খোলা আকাশের নিচে। তুরস্কের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফুয়াত ওকাতে বলেন, ‘যত দ্রুত সম্ভব আমরা দুর্গতদের কাছে পৌঁছাতে চেষ্টা করছি। প্রচণ্ড ঠান্ডা, অনেক মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়েছে, তারা খোলা জায়গায় আছে। ইতিমধ্যে সিরিয়ার উত্তরাংশে লাখ লাখ মানুষ তাঁবুতে ঠাঁই নিয়েছে।’

Also Read: ভূমিকম্পের সময় তিনি বলেছিলেন ‘চল, একসঙ্গে মরি’

ভূমিকম্প এতটা প্রাণঘাতী হয়ে উঠল কীভাবে

ভূমিকম্পবিশেষজ্ঞ ও অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ক্রিস এলডারস বলেন, ভূপৃষ্ঠের প্রায় ১৮ কিলোমিটার গভীরে ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়। এ কারণে ভূমিকম্পটি বেশি প্রাণঘাতী হয়েছে।

তুরস্কের একাডেমি অব সায়েন্সেসের ভূমিকম্পবিশেষজ্ঞ নাসি গোরুর স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তাদের সতর্ক করেছেন। ভূমিকম্পের ফলে আঞ্চলিক বাঁধগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যেন আকস্মিক বন্যার সৃষ্টি না হয়, সে জন্য বাঁধগুলো দ্রুত পরীক্ষা করার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।


সূত্র: আল-জাজিরা, এএফপি, রয়টার্স