Thank you for trying Sticky AMP!!

ম্যারি ডোনাল্ডসন। শুরু থেকেই ডেনমার্কবাসীর হৃদয়ে নিজের একটা জায়গা তৈরি করে নিয়েছেন

ডেনমার্কের রানি হতে যাচ্ছেন অস্ট্রেলিয়ার মেয়ে

২০০০ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের সময় অস্ট্রেলিয়ার সিডনির স্লিপ ইন বারে বন্ধুদের সঙ্গে গিয়েছিলেন যুবরাজ ফ্রেডরিক। সেখানে তাঁর সঙ্গে ম্যারির দেখা হয়। ম্যারি তখন অস্ট্রেলিয়ায় একজন বিজ্ঞাপন নির্বাহী হিসেবে কাজ করতেন।

পরে ম্যারি আবিষ্কার করলেন ফ্রেডরিক ডেনমার্কের যুবরাজ। এমনকি তাঁর বন্ধুরা ইউরোপীয় অনেক রাজপরিবারের সদস্য। তাঁদের মধ্যে ফ্রেডরিকের ছোট ভাই প্রিন্স জোয়াচিম, চাচাতো ভাই গ্রিসের প্রিন্স নিকোলাস রয়েছেন।

বেশ কয়েক বছর আগে এক সাক্ষাৎকারে ম্যারি বলেছিলেন, ‘প্রথমবার যখন আমাদের দেখা হয়, আমরা দুজন হাত মিলিয়েছিলাম।’

ম্যারি বলছিলেন, ‘আমি জানতাম না, তিনি ডেনমার্কের যুবরাজ। আধা ঘণ্টা পর একজন এসে আমাকে বলেছিলেন, ‘আপনি কি জানেন, এঁরা কারা?’

১৯৭২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি অস্ট্রেলিয়ার হোবার্টে জন্ম ম্যারি ডোনাল্ডসনের। তিন থেকে সাড়ে তিন বছর দুজন অনেক দূরে থাকলেও অত্যন্ত সতর্কভাবে সম্পর্ক চালিয়ে গেছেন। খুব গোপনীয়ভাবে তাঁরা অসংখ্যবার দেখা–সাক্ষাৎও করেছেন। অবশেষে ২০০৩ সালের অক্টোবরে তাঁদের বাগ্‌দান হয়। পরে ২০০৪ সালের ১৪ মে কোপেনহেগেন ক্যাথেড্রালে তাঁদের বিয়ে হয়।

২০১৭ সালে ২৮ মার্চ কোপেনহেগেনে ক্রিশ্চিয়ানবর্গ ক্যাসেলে ডেনমার্কের ক্রাউন প্রিন্স ফ্রেডেরিক এবং ক্রাউন প্রিন্সেস মেরি

অস্ট্রেলীয় বংশোদ্ভূত ডেনমার্কের জনপ্রিয় ক্রাউন প্রিন্সেস ম্যারি হতে যাচ্ছেন দেশটির পরবর্তী রানি। ১৪ জানুয়ারি তাঁর স্বামী যুবরাজ ফ্রেডরিক সিংহাসনে বসবেন। তিনি তাঁর মা দ্বিতীয় মারগ্রেথের স্থলাভিষিক্ত হবেন।

ডেনমার্কে সংসদীয় শাসনব্যবস্থা চালু রয়েছে। আনুষ্ঠানিক ক্ষমতা নির্বাচিত সরকারের হাতে। সরকারপ্রধান প্রধানমন্ত্রী। রাজপরিবারের ক্ষমতার চর্চা ঐতিহ্য ও আনুষ্ঠানিকতায় সীমিত।

সম্প্রতি খ্রিষ্টীয় নববর্ষ উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে রানি দ্বিতীয় মারগ্রেথ ক্ষমতা গ্রহণের ৫২ বছর পর সিংহাসন ছাড়ার ঘোষণা দেন। ভাষণে সন্তান ফ্রেডরিককে সিংহাসনের উত্তরাধিকার ঘোষণা করে জানান, বয়স ও স্বাস্থ্যের কারণে তিনি ক্ষমতা ছেড়ে দিচ্ছেন।

রানি মারগ্রেথের পাশে ফ্রেডরিক ও ম্যারি

২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে ব্রিটিশ রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পর তিনি ইউরোপের দেশগুলোয় সবচেয়ে বেশি দিন সিংহাসনে থাকা রাষ্ট্রপ্রধান। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে রানি মারগ্রেথের পিঠে সফল অস্ত্রোপচার হয়েছিল।

গত রোববার ভাষণে রানি মারগ্রেথ বলেন, ‘ওই অস্ত্রোপচার স্বাভাবিকভাবে আমাকে ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবিয়েছে। আমি চিন্তা করেছি, পরের প্রজন্মের কাছে দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার সময় নিয়ে।’

আমি জানতাম না, তিনি ডেনমার্কের যুবরাজ। আধা ঘণ্টা পর একজন এসে আমাকে বলেছিলেন, আপনি কি জানেন, এঁরা কারা?
ম্যারি ডোনাল্ডসন

ডেনমার্কের রানি আরও বলেন, ‘আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এখনই দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়ার সময়। ২০২৪ সালের ১৪ জানুয়ারি, আমার প্রিয় বাবার উত্তরসূরি হওয়ার ৫২ বছর পর, আমি ডেনমার্কের রানির পদ থেকে পদত্যাগ করব। ছেলে যুবরাজ ফ্রেডেরিক সিংহাসনে আমার স্থলাভিষিক্ত হবে।’

আধুনিক ও অনুসরণীয়

ম্যারি শুরু থেকেই ডেনমার্কবাসীর হৃদয়ে নিজের একটা ভাবমূর্তি তৈরি করেছিলেন। দ্রুত দেশটির ভাষা শিখে ডেনমার্কবাসীর মনে ছাপ রেখেছেন।

ডেনিশ টেলিভিশন টিভি২ গত ডিসেম্বরে এক জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ করে যাতে বলা হয়, দেশটির রাজপরিবারের সদস্যদের মধ্যে জনপ্রিয় তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছেন ম্যারি। প্রথম স্থানে ব্যাপক জনপ্রিয় রানি মারগ্রেথ। এরপরই তাঁর ছেলে ফ্রেডরিক।

ম্যারি আর যুক্তরাজ্যের ক্রাউন প্রিন্সেস কেটের দুজনের মধ্যে যেন অনেক মিল

ম্যারিকে প্রায়ই তাঁর ফ্যাশন স্টাইল, লম্বা কালো চুল এবং ডেনমার্ক ও আন্তর্জাতিক ম্যাগাজিনে সুন্দর সুন্দর পোশাকে নিয়মিত হাজির হতে দেখা যায়। তাঁকে যুক্তরাজ্যের ক্রাউন প্রিন্সেস কেটের সঙ্গে তুলনা করা হয়।

বুলিং, পারিবারিক সহিংসতা ও সামাজিক বিচ্ছিন্নতার বিরুদ্ধে কাজ করার পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্য ও নারী অধিকারের প্রসারে কাজ করায় ম্যারির বেশ খ্যাতি রয়েছে।

ম্যারি ও ফ্রেডরিককে বেশ আধুনিক দম্পতি বলে বিবেচনা করা হয়। ইতিহাসবিদ সেবাস্তিয়ান ওল্ডেন-জোরগেনসেনের মতে, দুজনেই পপসংগীত, আধুনিক শিল্প–সাহিত্য ও খেলাধুলা পছন্দ করেন।

রাজপরিবারের সদস্য হলেও তারা সন্তানদের সাধারণ নাগরিকের মতোই লালনপালন করেছেন

এই দম্পতির এখন চার সন্তান রয়েছে। বড় সন্তান ১৮ বছরের প্রিন্স ক্রিস্টিয়ান। বাবার পর তিনি সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হতে পারেন। এরপর ১৬ বছরের প্রিন্সেস ইসাবেলা এবং জমজ প্রিন্স ভিনসেন্ট ও প্রিন্সেস জোসেফাইন। আগামী সপ্তাহে তারা ১৩ বছরে পা রাখবে।

দুজনই তাঁদের চার সন্তানকে যতটা সম্ভব সাধারণ মানুষের মতো লালনপালন করতে চেয়েছেন। তাদের পড়িয়েছেন সরকারি স্কুলে। তাঁদের প্রথম সন্তানকে তাঁরা দিবাযত্ন কেন্দ্রেও রেখেছিলেন।

প্রায় প্রতি বছরই ম্যারি স্বামী-সন্তানদের নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় বেড়াতে যান, যেখানে তাঁকে সারাক্ষণ অনুসরণ করে গণমাধ্যম।

ডেনমার্কে সংসদীয় শাসনব্যবস্থা চালু রয়েছে। আনুষ্ঠানিক ক্ষমতা নির্বাচিত সরকারের হাতে। সরকারপ্রধান প্রধানমন্ত্রী। রাজপরিবারের ক্ষমতার চর্চা ঐতিহ্য ও আনুষ্ঠানিকতায় সীমিত।