Thank you for trying Sticky AMP!!

ইউরোপের আদল বদলে দিচ্ছে করোনা মহামারি

করোনাভাইরাসের কারণে সারা বিশ্বে বিপর্যয় নেমেছে। এখন পর্যন্ত করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মহাদেশ ইউরোপ। এ অবস্থার পরিসমাপ্তি কবে, তা কারোর জানা নেই। তবে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এই মহামারির মোকাবিলায় এখনো অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। তাই মহামারির পুরো প্রভাবের বিষয়টি এখনই এত আগেভাগে মূল্যায়ন করা সমীচীন হবে না। তবে করোনা পরিস্থিতি পুরো ইউরোপের আদলই বদলে দিচ্ছে, এমন আঁচ পাওয়া যাচ্ছে। ছয়টি নেতিবাচক প্রবণতা বড় হয়ে দেখা দিয়েছে মহাদেশটিতে। এগুলো আগেই হাজির হয়েছিল, করোনা সেগুলোকে বেগবান করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিরোধী জনশ্রুতিগুলো সেই প্রবণতাগুলো উসকে দিতে সাহায্য করছে। 

বিশ্বায়ন থেকে পিছু হটা
ইউরোপের বিভিন্ন দেশে স্বনির্ভরতা এবং অধিকতর জাতীয়তাবাদ বড় বিতর্কের বিষয় হিসেবে দেখা দিয়েছে অনেক আগেই। সেই বিতর্কে অতিরিক্ত রসদ হিসেবে হাজির হয়েছে করোনাভাইরাস। বিশ্ব সাপ্লাই চেইন থেকে সরে এসে দেশগুলো সুরক্ষাবাদী নীতিতে ঝুঁকবে। এই নীতিতে আগেই ঝুঁকে পড়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। 

দেশ আগে নীতি
ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বিরোধ দেশীয় দৃষ্টিভঙ্গিকে সুসংহত করছে। কয়েক দশক ধরে এসব প্রতিষ্ঠান সদস্যরাষ্ট্রগুলোর কাছে গুরুত্ব হারাচ্ছে। অর্থনৈতিক সংকট কাটাতে প্রতিষ্ঠানগুলো অর্থ ছাড় দিয়েছে। সাধ্যমতো চেষ্টাও করেছে। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় আবারও তা করছে। তবে এটা ঠিক, ইউরোপিয়ান কমিশন ২৭ সদস্যদেশগুলোকে একসঙ্গে নিয়ে করোনার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ এবং সমন্বয়ে হিমশিম খাচ্ছে। এটা যে শুধু সম্পদের সীমাবদ্ধতা বা অন্য কোনো কারণে হয়েছে তা নয়, অনেক মানুষ এই সংকট মোকাবিলায় জাতীয় নেতাদের দায়িত্ব দিচ্ছে বা নিজস্ব নীতি প্রয়োগের চেষ্টা করছেন।   

সীমান্ত কড়াকড়ি
২০১৫ সালে প্রথমবারের মতো বিরাটসংখ্যক মানুষ শেনজেন অঞ্চল দিয়ে ইউরোপে প্রবেশ করে আশ্রয়ের জন্য। এরপর থেকেই অঞ্চলটির অভ্যন্তরীণ সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপ বজায় রাখা হয়েছে। কিছু দেশের সরকার সীমান্তে তল্লাশিচৌকি বসিয়েছে। সীমান্ত অঞ্চলটি আরও নানা বিধিনিষেধের ঘেরাটোপে। করোনা ছড়িয়ে পড়ার পর ইউরোপের অন্যান্য সীমান্ত অঞ্চলেও জারি করা হয়েছে বিধিনিষেধ। অনেক নেতা চাইছেন, অভিবাসী শ্রমিকেরা আর যাতে ইউরোপে প্রবেশ করে না পারেন।

জয়বায়ুনীতিতে আঘাত
জলবায়ু পরিবর্তন রোধ এবং পরিবেশবান্ধব যেসব নীতি রয়েছে, এই মহামারি সেগুলোর বিরোধিতা জোরালো করে তুলতে পারে। ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আগে সুইডেন, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্সের লোকরঞ্জনবাদী নেতারা এসব নীতির তীব্র বিরোধিতা করে আসছিলেন। এখন অনেক ভোটার যাঁদের জীবন–জীবিকার মান ব্যাপকভাবে নিম্নমুখী, তাঁরা চাইবেন, জলবায়ু পরিবর্তন বা অন্যান্য কথা বলে যাতে তাঁদের চাকরি এবং আয়ে আর কাটছাঁট না হয়।

পূর্ব–পশ্চিম উত্তেজনা
অভিবাসীদের গ্রহণ করা, কার্বন নিঃসরণ কমানোসহ নানা নীতিগত বিষয়ে পূর্ব ও পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে অনেক আগে থেকেই। কোভিড–১৯ সেই দ্বন্দ্ব আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। কেন্দ্রীয় ইউরোপের দেশগুলোর শঙ্কা, করোনায় সবচেয়ে বেশি বিপর্যস্ত ইউরোপের দক্ষিণাঞ্চলের দেশগুলো। তাই ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজেট থেকে বেশি অর্থ পাবে দেশগুলো। আর তারা কম পাবে। কারণ, করোনায় তারা খুব একটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। ফলে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব নতুন করে উসকে দিতে পারে এই বিষয়টি।
গার্ডিয়ানের বিশ্লেষণ