Thank you for trying Sticky AMP!!

এটা পুতিনের জন্য শাপেবর

ভ্লাদিমির পুতিন

যুক্তরাজ্যে ৪ মার্চ সাবেক রুশ গুপ্তচর ও তাঁর মেয়েকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে গত সোমবার যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন সমন্বিতভাবে রাশিয়ার কূটনীতিকদের গণহারে বহিষ্কার করেছে। ট্রাম্প প্রশাসন নিউইয়র্ক ও ওয়াশিংটনে অবস্থানরত ৬০ কূটনীতিক ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাকে বহিষ্কারের
পাশাপাশি সিয়াটলে রুশ কনস্যুলেট বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ দেশটির ন্যাটো জোট ও ইউরোপীয় মিত্ররা মোটের ওপর শতাধিক কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছে।
রাশিয়ার আপাত অপরাধের বিপরীতে এই পদক্ষেপ যুক্তরাজ্যের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও এর ইউরোপীয় মিত্রদের দৃঢ়তম সংহতির প্রকাশ। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময়ে এটি লক্ষণীয় একটি পদক্ষেপ। গত বছরের পুরোটা জুড়ে মস্কোর প্রতি ট্রাম্পের আপাত ব্যক্তিগত কোমলতা এবং ন্যাটো জোট ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতি অবহেলা আন্তআটলান্টিক সম্পর্কের ব্যাপারে তাঁর প্রতিশ্রুতি ইউরোপে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আবারও জয় পাওয়ায় গত সপ্তাহেও ট্রাম্প তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
তবে সোমবারের পদক্ষেপে আচরণের বড় পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়েছে। এক বিবৃতিতে হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি সারাহ হাকাবি স্যান্ডার্স বলেছেন, ‘আজকের (সোমবার) পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের ওপর রাশিয়ার গুপ্তচরবৃত্তি এবং যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার হুমকি সৃষ্টিকারী গুপ্ত অভিযান হ্রাস করে যুক্তরাষ্ট্রকে আরও নিরাপদ করল।’
তবে রাশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত মাইকেল ম্যাকফল ওয়াশিংটন পোস্ট-এর টুডেস ওয়ার্ল্ডভিউকে বলেছেন, ২০১২ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বৈরী ক্রীড়নক হিসেবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছেন পুতিন। সোমবারের ঘটনা তাঁর সেই চেষ্টাকে সফল করতে পারে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম বাজফিড নিউজকে বলেন, লন্ডন, নিউইয়র্ক ও বার্সেলোনায় পুতিন ও তাঁর লোকজনের অর্থের কোনো গতি করা না গেলে এই সমন্বিত পদক্ষেপে তাঁরা ভ্রুক্ষেপও করবেন না।
কূটনীতিক বহিষ্কারের ওই সমন্বিত পদক্ষেপকে রাশিয়ার কর্মকর্তারা যুক্তরাজ্যের প্রতি ‘চাটুকারিতা’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। একই সঙ্গে স্ক্রিপাল ও তাঁর মেয়েকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ আরও একবার প্রত্যাখ্যান করেছে মস্কো। আর রাশিয়ার রাষ্ট্র-সমর্থিত সংবাদমাধ্যমে প্রচার পাচ্ছে বিকল্প তত্ত্ব, যাতে যুক্তরাজ্যের মাটিতে সাবেক রুশ গুপ্তচর স্ক্রিপাল ও তাঁর মেয়েকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের দিকে অভিযোগের আঙুল তোলা হয়েছে।
পুতিন হয়তো এই খেলায় খুশিই হয়েছেন। শীতল যুদ্ধের যে পুনরুত্থান ঘটেছে এবং রাশিয়া ও পশ্চিমাদের মধ্যে যে অবিশ্বাস বৃদ্ধি ঘটল, তা রুশ জাতীয়তাবাদীদের মনে পুতিনের জায়গা আরও দৃঢ় করে দিয়েছে।
কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক কূটনীতির অধ্যাপক স্টিফেন সেস্তানোভিচ সম্প্রতি ওয়াশিংটন পোস্ট-এ লিখেছেন, পুতিন জানেন যত ভোট পেয়েই তিনি বিজয়ী হোন না কেন, বিপুলসংখ্যক রুশ জনগোষ্ঠী তাঁর প্রশাসনের প্রতি নাখোশ।
কাজেই এই বহিষ্কারের ফলাফল একটা বিশেষ পর্যায় পর্যন্ত পুতিনের পক্ষেই যাবে। পুতিনের নির্বাচনী প্রচারণার মুখপাত্র আন্দ্রে কনদ্রাশভ তো প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি আগেরবারের চেয়ে বৃদ্ধি পাওয়ায় যুক্তরাজ্যকে ধন্যবাদই দিয়েছেন। কারণ রাশিয়ায় নির্বাচনের আগমুহূর্তে স্ক্রিপাল ও তাঁর মেয়েকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ তুলে ২৩ জন রুশ কূটনীতিককে বহিষ্কার করে যুক্তরাজ্য। এই পদক্ষেপ সরাসরি প্রভাব ফেলে ভোটার উপস্থিতিতে।