Thank you for trying Sticky AMP!!

করোনায় উল্টো হেঁটে কী সুবিধা পেল সুইডেন

সুইডেন বড় আকারের লকডাউনের পথে হাঁটেনি। ছবি: রয়টার্স

করোনাভাইরাস মহামারিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যখন লকডাউনের পথে হেঁটেছে, তখন ঠিক উল্টো পথে হেঁটেছে সুইডেন। দেশটির সরকার বিজ্ঞানীদের সঙ্গে কথা বলে কোনো লকডাউন দেয়নি। এতে অবশ্য জনসমর্থনও ছিল। তাদের এ সিদ্ধান্তে সব ভাইরোলজিস্ট বা ভাইরাস বিশেষজ্ঞ একমত নন।

দেশটিজুড়ে স্বাভাবিক জীবনযাপনের কথা বলা হলেও তথ্য বলছে ভিন্ন কথা। অনেক মানুষ সচেতনভাবে সরকারি নির্দেশ না থাকলেও সেখানে লকডাউনে ছিলেন। এমনকি তাঁরা নিজ থেকে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলেছেন।

বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে জানানো হয়, অনেকেই ছবি শেয়ার করে বলছেন, সুইডেনে কোনো লকডাউন নেই। কেউ ঘরের বাইরে বসে থাকার, আইসক্রিমের দোকানের সামনে সারি বেঁধে দাঁড়ানোর ছবি পোস্ট করেছেন। কিন্তু সেখানে জীবনযাপন যে স্বাভাবিক, তা হয়তো একটু বাড়িয়েই বলা।

বিবিসি বলছে, সুইডেনের তথ্য অনুযায়ী, দেশটির বেশির ভাগ মানুষ স্বেচ্ছায় সামাজিক দূরত্ব মেনেছেন, যা দেশটিতে ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে কাজ করেছে। দেশটিতে গণপরিবহন ব্যবহার কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে। দেশটিতে বাড়ি বসে কাজ করা মানুষের সংখ্যা বেড়েছে ব্যাপক হারে এবং ছুটিতে বেড়াতে যাওয়ার বদলে ঘরে থেকেছেন বেশির ভাগ মানুষ। সরকারের পক্ষ থেকেও ৫০ জনের বেশি একত্রে জড়ো হওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।
দেশটির ১০ জনের মধ্যে ৯ জন বলেছেন, তারা কিছুদিন ধরে কমপক্ষে এক মিটার দূরত্ব বজায় রাখার নিয়ম মানছেন। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ইউরোপের বেশির ভাগ দেশে লকডাউন চললেও সুইডেন জীবনযাত্রা অনেকটাই স্বাভাবিক রেখেছে জনগণ নিয়ম মানার কারণে। সবকিছু বন্ধ না করে বরং সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে নিয়ন্ত্রিত জীবনের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে মানুষ। সুইডিশ পাবলিক হেলথ এজেন্সির চোখে, সতর্কতার বিষয়টিতে মানুষ যেভাবে সাড়া দিয়েছে, তা উদযাপিত হতে পারে।

সুইডেন সরকারের নীতি হলো, নিজের দায়িত্ব পালনে উদ্বুদ্ধ করা। জনস্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ ও রাজনীতিবিদেরা আশা করেন, লকডাউনের মতো পরিস্থিতি ছাড়াই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমানো সম্ভব। কড়া নিয়মকানুনের বদলে জনগণের জন্য কিছু নির্দেশনা জারি করেছে সুইডেন সরকার। যেমন অসুস্থ বা বয়স্ক হলে বাসায় থাকা, হাত ধোয়া, অপ্রয়োজনে কোথাও ভ্রমণ না করা, বাসায় থেকে অফিসের দায়িত্ব পালন করা।
দেশটির গুরুত্বপূর্ণ জরিপকারী প্রতিষ্ঠান নোভাসের সমীক্ষায় দেখা গেছে, সুইডেনের বেশির ভাগ জনগণ তাঁর ভাষণ শুনেছেন ও নির্দেশনা পালন করছেন। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছে।

সুইডেনের বিজ্ঞানীদের এই দৃষ্টিভঙ্গি কয়েক সপ্তাহ ধরে বিশ্বব্যাপী বিতর্ক তৈরি করেছে। সুইডেন একটি বুদ্ধিমান এবং টেকসই পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে নাকি অজান্তেই তার জনসংখ্যাকে এমন একটি পরীক্ষায় নিমজ্জিত করেছে, যা অপ্রয়োজনীয় প্রাণহানির কারণ হওয়ার পাশাপাশি কোভিড-১৯-এর বিস্তার নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যর্থ হতে পারে।

ভাইরাসটির কেন্দ্রস্থল স্টকহোমে এখন পর্যন্ত করোনার বিস্তার নিয়ন্ত্রণে আছে, যদিও এই সপ্তাহের শেষের দিকে বিস্তার কিছুটা বেড়েছিল। সেখানে পরীক্ষা আরও বাড়ানো হয়েছে।

জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে আজ পর্যন্ত ১৭ হাজার ৫৬৭ জন করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন এবং মারা গেছেন ২ হাজার ১৫২ জন।

সুইডেনের মহামারি বিশেষজ্ঞ অ্যান্ডার্স টেগনেল বলেছেন,‌ ‘আমরা যা অর্জন করতে চেয়েছিলাম, তা পেরেছি। সুইডেনের স্বাস্থ্যসেবা কর্তৃপক্ষ কাজ করে যাচ্ছে। প্রচুর চাপ নিয়ে কাজ করলেও কোনো রোগী তারা ফেরাচ্ছে না।’

অন্য দেশে যেখানে রাজনৈতিক নেতারা এই সংকটের জন্য জাতীয়ভাবে প্রতিক্রিয়া দিচ্ছেন, সেখানে সুইডেনে ড. টেগনেল বেশির ভাগ সংবাদ সম্মেলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। টেগনেলের দল সিমুলেশন ব্যবহার করে জনসংখ্যার আকারের ক্ষেত্রে ভাইরাসের আরও সীমিত প্রভাবের প্রত্যাশা করেছিলেন। তাই ইউরোপের অন্য দেশের তুলনায় বড় অংশ সুইডেন খুলে রাখার সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছে।

এক কোটির বেশি জনসংখ্যার দেশটি যদিও করোনাভাইরাস সংক্রমণের হিসাবে শীর্ষ ২০টি দেশের মধ্যে রয়েছে। দেশটিতে কেবল উপসর্গ দেখা গেলে তবে রোগীকে শনাক্ত করার পরীক্ষা করা হয়। এখন অবশ্য আরও বিস্তৃত পরীক্ষা করা হচ্ছে। স্ক্যান্ডিনেভিয়ার অন্য এলাকার জনসংখ্যার আকারের তুলনায় এখানে মৃত্যুর হার বেশি।

লকডাউন না দেওয়া নিয়ে সুইডেনের সমালোচনাও হচ্ছে। সুইডেনের বৃহত্তম চিকিত্সা গবেষণা কেন্দ্র কারোলিনস্কা ইনস্টিটিউট-ভিত্তিক মহামারি বিশেষজ্ঞ ক্লডিয়া হ্যানসন বলেছেন, সেখানে অনেক লোক মারা যাচ্ছে। মেধাহীন কর্মকর্তারা সিদ্ধান্ত গ্রহনের দায়িত্বে থাকলে এমনই হয়।

সুইডেনে তিন দশকের বেশি গবেষণাকাজে অভিজ্ঞ টেনগেল দেশটিতে বেশ জনপ্রিয়। তাঁর সমর্থনেও অনেকেই কথা বলছেন।

বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে বলা হয়, সুইডেনে এরপর যা ঘটতে পারে, তা মূলত সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা লোকদের ওপর নির্ভর করে। স্টকহোমের সিডারটর্ন ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক নিকোলাস আইলট বলেছেন, কিছু সুইডিশ জাতীয়তাবাদের উৎসাহ এবং ইউরোপীয় রীতি থেকে বিচ্যুত সুইডেনের জন্য গর্বের সঙ্গে সাড়া দিয়েছেন। এটি সুইডেনের বিশেষত্বের গভীর বোধের সঙ্গে যায়। কিছু সুইডিশকে পরামর্শ মানতে এটা উদ্বুদ্ধ করে।

সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বিদেশিরা কঠোর পদক্ষেপ নিতে বলছেন। তবে আভাসে মনে হচ্ছে, দেশটিতে বসবাসকারী অনেকেই ভাবছেন, গভীর সংকট কেটে গেছে। মোবাইল ফোনের তথ্য অনুযায়ী, দেশটির স্টকহোমের অধিবাসীরা বেশি সময় কাটাচ্ছেন সিটি সেন্টারে। নাইটলাইফ কাটানোর জায়গাগুলোতে এখন ভিড় জমছে বলে জানিয়েছে দেশটির পুলিশ বাহিনী। তবে দেশটির প্রধানমন্ত্রী স্টেফান লোভেন বলেন, ‘এখন আরাম করার সময় নয়, বন্ধুবান্ধব এবং পরিবারের সঙ্গে আরও সময় কাটাতে শুরু করুন।’