Thank you for trying Sticky AMP!!

করোনা ঠেকাতে লকডাউনে সাফল্য পেয়েছে জার্মানি

জার্মানির সংক্রমণ রোগবিষয়ক গবেষণা কেন্দ্র রবার্ট কক ইনস্টিটিউটের সভাপতি অধ্যাপক লোথার ভিলার জানিয়েছেন, লকডাউন ব্যবস্থা ফলে জার্মানিতে সংক্রমণের প্রাদুর্ভাব কমে আসছে। যদিও গতকাল বুধবার জার্মানিতে একদিনে নতুন ভাবে পাঁচ হাজার ব্যক্তি সংক্রমিত হয়েছে। তবু সার্বিক গবেষণার ফল থেকে এই সফলতার কথা তিনি বলেছেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে বার্লিনে সাংবাদিক সম্মেলনে অধ্যাপক লোথার ভিলার আরও জানান, ‘আমরা একদিনের সংক্রমণের সংখ্যা বৃদ্ধি বা হ্রাসের বিষয় নিয়ে গবেষণা করছি না। এই সংক্রমণের হার হইতো কোনো দিন বাড়বে বা কমবে। তবে সার্বিকভাবে সর্বত্র সংক্রমণ ছড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে আমরা আপাতত রেহাই পাচ্ছি।’ তবে জার্মানি জুড়ে একসঙ্গে লকডাউন ব্যবস্থা তুলে নেবার বিষয়ে তিনি দ্বিমত পোষণ করেছেন। আপাতত জার্মানি জুড়ে ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত লকডাউন বলবৎ রয়েছে। তবে তা আরও দীর্ঘায়িত হতে পারে।

উল্লেখ্য করোনাভাইরাসের সংক্রমণ জার্মানিতে ছড়িয়ে যাওয়ার পর, জার্মানির সংক্রমণ রোগ বিষয়ের গবেষণা কেন্দ্র রবার্ট কক ইনস্টিটিউটের সভাপতি অধ্যাপক লোথার ভিলার সংক্রমণ বিষয়ে ও লকডাউন বিষয়ে যে গবেষণালব্ধ মতামত দিচ্ছেন, সেটাই সরকারের মত বলে বিবেচিত হচ্ছে বা সরকার বিষয়টি আমলে নিচ্ছেন।

জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা ম্যার্কেল আজ বৃহস্পতিবার করোনাভারাসের সংক্রমণ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘এই মরণঘাতী ভাইরাস রুখতে আমাদের নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা ও কর্মসূচি ইতিবাচক ফল রাখছে।’ সরকারি বিধি মেনে চলার জন্য তিনি জার্মানির জনগণকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তিনি জানান, ‘জার্মানিতে ভালো স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সুযোগ রয়েছে এবং আমরা এই সংকটময় মুহূর্তে জরুরি ভিত্তিতে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বিস্তার ঘটিয়েছি।’

জার্মানির স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইয়েনস স্পান আজ সকালে জানিয়েছেন, জার্মানিতে লকডাউন ব্যবস্থার ফলে সাধারণ মানুষের বেশ কষ্ট হচ্ছে। তবে এই মুহূর্তে এই ব্যবস্থা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। তিনি সবাইকে আশ্বাস দিয়ে বলেন, ‘আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার কারণে ১ লাখ ১৩ হাজার মানুষ করোনাভারাসের সংক্রমিত হলও প্রায় ৫০ হাজার মানুষ সুস্থ হয়ে উঠছেন।’ তিনি আরও জানান, এই মুহূর্তে জার্মানিতে ১০ হাজার আইসিইউ বেড প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

লকডাউনের কারণে জার্মানিতে গত সোমবার থেকে ক্ষুদ্র ও স্বনির্ভর ব্যবসায়ীদের সাহায্যের জন্য যে কর্মসূচি চালু হয়েছে। জার্মানির নর্থরাইন ভেস্টাফালেন রাজ্য অনেক আবেদনকারী ভুল ও ভুয়া তথ্য দিয়ে আর্থিক সাহায্যের আবেদন করেছে বলে জানা গেছে। রাজ্যটির গোয়েন্দা পুলিশ এই তথ্য উদ্‌ঘাটনের পর নর্থরাইন ভেস্টাফালেন রাজ্য এই কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে।

ইতিপূর্বে জার্মানিতে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে করোনাভারাসের সংক্রমিত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি থাকলেও প্রায় সবাই সুস্থ হয়ে উঠেছেন। অনেকেই ইতিমধ্যে হাসপাতাল ত্যাগ করে বাড়ি ফিরে গেছেন।

জার্মানিতে কোনো কোনো প্রবাসী বাংলাদেশির বিরুদ্ধে সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়াতে ভিডিওর মাধ্যমে ভুল তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার অভিযোগ উঠেছে। একটি ভিডিওতে বলা হয়েছে, জার্মানিতে ২৪ ঘণ্টায় হাজার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে। জার্মানির করোনা পরিস্থিতি নিয়ে বলবার সময় হাউমাউ করে কাঁদতে দেখা গেছে। অপর একটি ভিডিওতে একজন কথিত ওষুধ ব্যবসায়ী বাংলাদেশ সরকারকে টেস্টিং কিট দিয়ে সহযোগিতায় প্রস্তুত বলে বিভিন্ন ভুল তথ্য দিয়ে লম্বা বয়ান দিয়েছেন। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে ওই কথিত ওষুধ ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কোনো উত্তর দেননি। এই কথিত ওষুধ ব্যবসায়ীকে জার্মানি প্রবাসীরা কেউ চেনেন না। জার্মানি আইন অনুযায়ী এই ধরনের মিথ্যা তথ্য ও গুজব রটানো গুরুতর অপরাধ।

বিশ্বের সেরা স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসেবা থাকা সত্ত্বেও জার্মানি এখন বিশ্বে চতুর্থ করোনাভাইরাস সংক্রমিত দেশ। আজ পর্যন্ত জার্মানি জুড়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ১৪ হাজার ২৫৭ জন। আর সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৪৬ হাজার ৩০০ জন। এই ভাইরাসে মারা গেছেন ২ হাজার ৩৪৯ জন।