Thank you for trying Sticky AMP!!

ছেলে হ্যারি (বাম থেকে দ্বিতীয়) ও উইলিয়ামের (বাম থেকে তৃতীয়) সঙ্গে ডায়ানা ও প্রিন্স চার্লস

হৃদয়ের রানি হতে চেয়েছিলেন ডায়ানা

প্রিন্সেস ডায়ানা রানি হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ব্রিটিশ রাজপরিবারের রানি হবেন, এমনটা তিনি ভাবেন না। তিনি সাধারণ মানুষের হৃদয়ের রানি হতে চেয়েছিলেন।

সিএনএন-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, মৃত্যুর দুই বছর আগে ১৯৯৫ সালে একটি টেলিভিশন চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রিন্সেস অব ওয়েলস ডায়ানা তাঁর এই ইচ্ছের কথা জানিয়েছিলেন।

প্রিন্সেস ডায়ানা

রূপকথার রাজকুমারীর মতোই প্রিন্সেস ডায়ানার জীবন ঘটনাবহুল। ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের ছেলে প্রিন্স চার্লসের সঙ্গে বিয়ে, চোখ ধাঁধানো ফ্যাশন, মানবকল্যাণমূলক বিভিন্ন কার্যক্রম, প্রেম আর শেষে ‘রহস্যময়’ মৃত্যু—সব মিলিয়ে তিনি সব সময়ই ছিলেন গণমাধ্যম ও মানুষের আগ্রহের কারণ। মৃত্যুর ২৩ বছর পরও ডায়ানাকে নিয়ে আসছে নতুন নতুন খবর।

১৯৯৭ সালের ৩১ আগস্ট প্রিন্সেস অব ওয়েলস ডায়ানার মৃত্যু ঘটে সড়ক দুর্ঘটনায়। তখন তাঁর সঙ্গে ছিলেন প্রেমিক দোদি আল-ফায়েদ।

ব্রাজিলে এইডস আক্রান্ত এক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলছেন প্রিন্সেস ডায়ানা

প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রিন্সেস ডায়ানা তাঁর জনপ্রিয়তা কুষ্ঠ রোগী থেকে শুরু করে পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ ও মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতায় ব্যবহার করেছিলেন। ১৯৮৭ সালে একজন এইডস আক্রান্ত রোগীর সঙ্গে ইচ্ছাকৃত করমর্দন করার কারণে সংবাদের শিরোনাম হয়েছিলেন ডায়ানা। এইডস রোগ স্পর্শের মাধ্যমে ছড়ায়—এই ভুল ধারণা ভাঙাতেই তিনি ওই রোগীর সঙ্গে করমর্দন করেছিলেন। এ ছাড়া ভূমিমাইন নিষিদ্ধ করার দাবিতে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন ডায়ানা। অ্যাঙ্গোলায় তিনি নিজেও বোমা নিষ্ক্রিয়করণের কাজ করেছেন। ডায়ানাই প্রথম লন্ডনের হাসপাতালে ‘এইডস ওয়ার্ড’ চালু করেন, সেখানে শুধু এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা করা হতো। এসব কারণেই তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার ডায়ানাকে ‘দ্য পিপলস প্রিন্সেস’ হিসেবে অভিহিত করেছিলেন।

তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার ডায়ানাকে ‘দ্য পিপলস প্রিন্সেস’ হিসেবে অভিহিত করেছিলেন
বিয়ের দিন রাজপরিবারের সদস্যদের সঙ্গে প্রিন্স চার্লস ও প্রিন্সেস ডায়ানা

১৯৮১ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি বাগদানের খবর জনসমক্ষে প্রকাশ করেন চার্লস ও ডায়ানা। ওই বছরের ২৯ জুলাই, ২০ বছর বয়সী ডায়ানা ৩২ বছর বয়সী চার্লসের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৯৮২ সালের ২১ জুন প্রথম সন্তান প্রিন্স উইলিয়ামের জন্ম। ১৯৮৪ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর জন্ম হয় প্রিন্স হ্যারির। ১৯৯৬ সালে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ডায়ানার সঙ্গে প্রিন্স চার্লসের বৈবাহিক জীবনের সমাপ্তি ঘটে।

প্রিন্সেস ডায়ানা

একটি ব্যক্তিগত উড়োজাহাজে ডায়ানা-দোদি ১৯৯৭ সালের ৩০ আগস্ট বেলা ১টায় সার্ডিনিয়া থেকে প্যারিসের পথে রওনা হন। বিকেল সাড়ে চারটায় তাঁরা এসে ওঠেন রিটজ হোটেলে। এ হোটেলটির মালিক দোদির বাবা, মিসরীয় ধনকুবের মোহাম্মদ আল-ফায়েদ। পাপারাজ্জিরা পিছু নিতে পারে এই সন্দেহে তাঁরা পেছনের দরজা দিয়ে হোটেলে ঢোকেন, ইম্পিরিয়াল স্যুটে ওঠেন। রিটজ হোটেলের পেছনের দরজা দিয়ে রাত ১২টা ২০ মিনিটে (ততক্ষণে দিন গড়িয়ে চলে এসেছে ৩১ আগস্ট) ডায়ানা-দোদি বেরিয়ে আসেন। একটি কালো মার্সেডিস অপেক্ষা করছিল তাঁদের জন্য। চালক ছিলেন রিটজ হোটেলের কর্মচারী হেনরি পল। দেহরক্ষী ট্রেভর রিস জোনস বসেছিলেন চালকের পাশে সামনের আসনে। পাপারাজ্জিদের হাত থেকে বাঁচার জন্য গাড়িটি প্রচণ্ড বেগে চলতে শুরু করে এবং একটি টানেলের মধ্য কংক্রিট পিলারের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় গাড়িটির। দুমড়ে-মুচড়ে যায় মার্সেডিস। ঘটনাস্থলেই দোদি আর পল মারা যান। ওখানেই ডায়ানার প্রাথমিক শুশ্রূষার পর রাত একটা ২০ মিনিটে তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তাঁর দেহে অস্ত্রোপচার হয়। ভোর চারটার দিকে চিকিৎসকেরা ডায়ানাকে মৃত ঘোষণা করেন। গাড়ির আরোহী রিস জোনসই কেবল বেঁচে গিয়েছিলেন। তিনিই একমাত্র যাত্রী ছিলেন, যিনি সিটবেল্ট বেঁধেছিলেন। তিনি পরে ‘দ্য বডিগার্ডস স্টোরি: ডায়ানা, দ্য ক্রাস অ্যান্ড দ্য সোল সারভাইভার’ নামে একটি একটি বই লিখেছিলেন।

সাধারণ মানুষের হৃদয়ের রানি হতে চেয়েছিলেন ডায়ানা

ডায়ানার মৃত্যুর ২০ বছর উপলক্ষে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র ‘ডায়ানা, আওয়ার মাদার: হার লাইফ অ্যান্ড লিগেসিতে’ মাকে নিয়ে বলেছেন দুই ভাই। হ্যারি বলেন, ‘মায়ের সঙ্গে শেষ ফোনালাপটি খুবই সংক্ষিপ্ত ছিল। এর জন্য বাকি জীবন আফসোস থাকবে আমার।’

আর উইলিয়াম বলেন, ‘স্কটল্যান্ডে রানির বালমোরাল প্রাসাদে অন্য ভাইবোনদের সঙ্গে আমরা দুই ভাই খেলছিলাম। এ সময় মায়ের ফোন আসে। খেলব বলে সেদিন আমরা তাড়াতাড়ি বিদায় দেওয়ার জন্য মরিয়া ছিলাম।’

সে সময় টনি ব্লেয়ারের সাবেক উপদেষ্টা আনজি হান্টার বলেছিলেন, ডায়ানার মৃত্যুতে মানুষ অনেক ব্যথিত হয়েছেন। কারণ মানুষ তাঁকে একান্ত নিজের বলে গ্রহণ করেছিল। তাঁর মৃত্যু ছিল আসলে নিজের মা-বোন হারানোর মতোই।