Thank you for trying Sticky AMP!!

প্রাণভরে শ্বাস নিতে চাই

>করোনাভাইরাস পাল্টে দিয়েছে আমাদের জীবনের বাস্তবতা। দেশ-বিদেশের পাঠকেরা এখানে লিখছেন তাঁদের এ সময়ের আনন্দ-বেদনাভরা দিনযাপনের মানবিক কাহিনি। আপনিও লিখুন। পাঠকের আরও লেখা দেখুন প্রথম আলো অনলাইনে। লেখা পাঠানোর ঠিকানা: dp@prothomalo.com

করোনাকালীন এই বন্দিজীবন দিন দিন অসহ্য হয়ে উঠেছে। প্রকৃতির প্রতিশোধ সত্যিই ভয়াবহ। এত দিন মানুষ যে প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেছে, সে প্রকৃতি আজ মুক্ত। উল্টো মানুষ নিজেই বন্দী হয়ে পড়েছে। আমরা যারা ছাত্র, দিনের বড় সময়টা ক্লাস, পরীক্ষা, ক্যাম্পাসের অনুষ্ঠান ইত্যাদি নানা বিষয় নিয়ে বাড়ির বাইরে কেটে যেত, তাদের জন্য গৃহবন্দী এ জীবন হয়ে উঠেছে অনেক বেশি দুর্বিষহ।

প্রায় চার মাস হতে চলল আমি গৃহবন্দী। এ সুযোগে পৃথিবীর সব বিষণ্নতা যেন আমার ঘরে বাসা বেঁধেছে। লকডাউনের শুরুতে ত্রাণসহায়তা কার্যক্রমে কিছুদিন যুক্ত থাকায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাঝেমধ্যে বাড়ি থেকে বের হতাম। করোনা পরিস্থিতি দিন দিন জটিল হয়ে ওঠায় এখন বাড়ি থেকে বের হওয়া হয় না বললেই চলে। কিছুদিন আগেও একটার পর একটা খারাপ খবর পেতাম টেলিভিশনে বা পত্রিকায়। এখন আর সংবাদমাধ্যম থেকে জানার দরকার হয় না। আমাদের বাসা থেকে মাত্র তিন বিল্ডিং পরের বাড়িতেই অনেকে কোভিড–১৯–এ আক্রান্ত হয়েছে। দুদিন আগে সে বাসা লকডাউন করা হয়েছে।

ক্ষুদ্র এই ভাইরাস একেবারে আমার ঘাড়ের ওপর নিশ্বাস ফেলছে। তারপরও ধীরে ধীরে এই পরিস্থিতির সঙ্গে কেমন অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছিলাম। এরই মধ্যে হঠাৎ কয়েকজন সহপাঠীর আক্রান্ত হওয়ার খবর এল। মনে আবার থেকে থেকে অজানা আতঙ্ক মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। মনে হচ্ছে, এই বুঝি করোনায় আক্রান্ত হলাম। বাজারের ব্যাগ থেকে ভাইরাস বাড়িতে চলে এল না তো! ঘুমের মধ্যেও অনেক সময় করোনাভাইরাস হানা দিচ্ছে। কী দুঃস্বপ্ন যে দেখতে থাকি! মা–বাবা আর প্রিয়জনদের নিয়ে দুশ্চিন্তা হয়।

পত্রিকায় কারও করুণ মৃত্যুর কথা পড়লেই বুকের ভেতরটা হু হু করে ওঠে। দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা, সমাজ, মানুষের সচেতনতা ও কর্তব্যবোধের অভাব—এসব নিয়ে ভাবতে ভাবতে মন কাতর হয়ে ওঠে। কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য কবিতায় লিখেছিলেন, ‘আঠারো বছর বয়স কী দুঃসহ/...তাজা তাজা প্রাণে অসহ্য যন্ত্রণা।’ কী যে যথার্থ সেই কথা! সেই অসহ্য মানসিক যন্ত্রণা প্রতিটা মুহূর্তে মন অস্থির করে রাখছে। চোখে ঘুম আসে না। রাত জেগে থাকি। সেটাই নিত্যদিনের অভ্যাস হয়ে দাঁড়াচ্ছে।