Thank you for trying Sticky AMP!!

বিশ্বজুড়ে অস্ত্রের ঝনঝনানি বাড়ছে

প্রধানত যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর কল্যাণে ২০১৮ সালে ১০০টি বড় অস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের অস্ত্র বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪২ হাজার কোটি মার্কিন ডলারে। ছবি: রয়টার্স

বিশ্বজুড়ে অস্ত্রের ঝনঝনানি আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। শুধু গত বছরই দেশে দেশে অস্ত্রের বিক্রি বাড়ে প্রায় ৫ শতাংশ। আর এ অস্ত্রবাজারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সুইডেনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এসআইপিআরআই)’ এক নতুন প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

গতকাল সোমবার এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, প্রধানত যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর কল্যাণে ২০১৮ সালে ১০০টি বড় অস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের অস্ত্র বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪২ হাজার কোটি (৪২০ বিলিয়ন) মার্কিন ডলারে। বিপুল পরিমাণ এই অর্থের ৫৯ শতাংশই তথা ২৪ হাজার ৬০০ কোটি ডলার গেছে মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলোর পকেটে। তাদের এ উপার্জন, আগের বছরের তুলনায় ৭ দশমিক ২ শতাংশ বেশি।

এসআইপিআরআইয়ের অস্ত্র হস্তান্তর ও সামরিক ব্যয়সংক্রান্ত কর্মসূচির পরিচালক অডে ফ্লিউর‍্যান্ট বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সমন্বিত অস্ত্র বিক্রির পরিমাণ আগে থেকেই বেশি ছিল। তার ওপর গত এক বছরে (২০১৮) এই বিক্রি বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে।

প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ চীন ও রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিজ অবস্থান আরও জোরদার করার লক্ষ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনী আধুনিকায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ সিদ্ধান্তের ফলে অস্ত্র বিক্রিতে আগের চেয়ে বেশি সুবিধা পাচ্ছে দেশটির অস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো।

>

শুধু গত বছরই অস্ত্রের বিক্রি বেড়েছে ৫ শতাংশ। উৎপাদন ও বিক্রির প্রথমে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, দ্বিতীয় স্থানে রাশিয়া।

অস্ত্র উৎপাদন ও বিক্রির তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে রাশিয়া। এই বাজারের ৮ দশমিক ৬ শতাংশের নিয়ন্ত্রণ তার হাতে। দেশটির পরে রয়েছে যথাক্রমে যুক্তরাজ্য (৮ দশমিক ৪ শতাংশ) ও ফ্রান্স (৫ দশমিক ৫ শতাংশ)। অপর্যাপ্ত তথ্য–উপাত্তের কারণে অস্ত্র বিক্রি নিয়ে গবেষণায় চীনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। তবে এসআইপিআরআইয়ের গবেষণায় অনুমান করা হয়েছে, শীর্ষ ১০০ অস্ত্র উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের তিন থেকে সাতটি চীনের মালিকানাধীন।

অডে ফ্লিউর‍্যান্ট বলেন, এয়ারবাস ও এমবিডিএ—এ দুটি বড় ইউরোপীয় প্রতিষ্ঠানও বিভিন্ন অঞ্চলে সশস্ত্র সংঘাত ও তীব্র উত্তেজনা চলার প্রেক্ষাপটে অস্ত্রের চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীন ২০১৩ সাল থেকে প্রতিবছর তার মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের (জিডিপি) ১ দশমিক ৯ শতাংশ প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় করে চলেছে। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় অস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি রাশিয়ার আলমাজ–অ্যানটেই। এটি একলাফে তালিকায় নবম স্থানে উঠে এসেছে। বিগত বছরের তুলনায় ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠানটির বিক্রি ১৮ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৬০ কোটি ডলারে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বিশ্বজুড়ে অস্ত্র বিক্রি বেড়ে যাওয়ার কারণ, একেকটি দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা শুধু বেড়ে যাওয়াই নয়। দেশগুলোর বাইরেও অস্ত্রের চাহিদা বাড়ছে। বিশেষত এস–৪০০ বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থার রপ্তানি বেড়েছে। এ ব্যবস্থার ক্রেতাদের একটি ন্যাটো সদস্যদেশ তুরস্ক। যুক্তরাষ্ট্রের অবরোধ আরোপের হুমকি উপেক্ষা করে দেশটি এ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ক্রয়ে চুক্তি করেছে। শীর্ষ ১০০ অস্ত্র উৎপাদক প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে দুই তুর্কি প্রতিষ্ঠানও। ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠান দুটির অস্ত্র বিক্রি এর আগের বছরের তুলনায় ২২ শতাংশ বেড়ে ২৮০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে।

ফ্লিউর‍্যান্ট বলেন, তুরস্কের লক্ষ্য অস্ত্র সরবরাহে স্বাবলম্বী হওয়া। আর তাই স্থল, নৌ, আকাশ ও ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা—সব খাতে অস্ত্র উৎপাদনক্ষমতা বাড়াতে আগ্রহী দেশটি। কুর্দি বিদ্রোহীদের সঙ্গে সশস্ত্র স্থায়ী সংঘাতে লিপ্ত তারা। এ জন্যও সেখানে অস্ত্রের চাহিদা বেড়েছে।

এদিকে ২০০৯ সাল থেকে বিশ্বের বৃহত্তম অস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের স্থান ধরে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্রের লকহিড মার্টিন। গত বছরে প্রতিষ্ঠানটির অস্ত্র বিক্রির পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৭৩০ কোটি ডলার। ওই বছরে প্রতিষ্ঠানটি একাই পুরো বিশ্ববাজারের ১১ শতাংশ অস্ত্রের জোগান দিয়েছে।