Thank you for trying Sticky AMP!!

ডিএনএতেই মিলেছে প্রাচীনতম বন্ধুর খোঁজ

পোষা কুকুর বুমারকে নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর মার্থা ম্যাকস্যালি। আরিজোনা অঙ্গরাজ্যের ফিনিক্স শহরে, ২৯ অক্টোবর

পোষা প্রাণীর মধ্যে কুকুর যে মানুষের বিশ্বস্ত সঙ্গী, তা সবার জানা। বিজ্ঞানীরা এখন বলছেন, এই প্রাণী মানুষের প্রাচীনতম সঙ্গীও। অর্থাৎ মানুষ প্রথম কুকুরকেই পোষ মানিয়েছিল। কুকুরের ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে নতুন এক গবেষণায় এ তথ্য জানা গেছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে বিষয়টি জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী সায়েন্স শুক্রবার এ-সংক্রান্ত এক গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের অলাভজনক সংগঠন দ্য আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য অ্যাডভান্সমেন্ট অব সায়েন্স (এএএএস) সাময়িকীটি প্রকাশ করে। নতুন এই গবেষণায় বলা হয়েছে, আজ থেকে ১১ হাজার বছর আগে বরফযুগের শেষ দিকে মানুষ কুকুরকে পোষ মানিয়েছিল। ওই সময়ে আর কোনো প্রাণীকে পোষ মানানোর প্রমাণ এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।

ধারণা করা হয়, নেকড়ে থেকে বিবর্তনের মাধ্যমে কুকুরের উদ্ভব ঘটেছিল। খাবারের সন্ধানে প্রাচীন মানুষের অবস্থানের আশপাশে ঘুরতে থাকা নেকড়েগুলোকে পোষ মানিয়েছিল মানুষ। এরপর এসব প্রাণী একপর্যায়ে মানুষের শিকারে সহযোগিতা করতে শুরু করে। সব সময় সঙ্গে থেকে মানুষের দেহরক্ষীর ভূমিকায়ও অবতীর্ণ হয় এরা।

গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন যুক্তরাজ্যের লন্ডনের ক্রিক ইনস্টিটিউটের অ্যানসিয়েন্ট জিনোমিকস ল্যাবরেটরির গবেষক পন্টাস স্কগলান্ড। তিনি বিবিসিকে বলেন, কুকুরের বিষয়টি সত্যিই অনন্য। যখন মানুষ শিকার করে খাবার সংগ্রহ করত, তখনই তারা এই মাংসাশী প্রাণীটিকে পোষ মানিয়েছিল। কিন্তু প্রশ্ন হলো, মানুষ কেন এমনটা করেছিল? কীভাবে করেছিল?

কুকুর আমাদের প্রাচীনতম ও ঘনিষ্ঠতম সঙ্গী। প্রাচীন কুকুরের ডিএনএ বিশ্লেষণ বলছে, একসঙ্গে চলার এই ইতিহাস বহু আগের।
গ্রেগের লারসন, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক

এসব প্রশ্নের জবাব পেতেই গবেষণা শুরু করে পন্টাস স্কগলান্ডের নেতৃত্বাধীন গবেষক দল। গবেষণা নিবন্ধের মূল লেখক ও ক্রিক ইনস্টিটিউটের পোস্ট-ডক্টরাল গবেষক অ্যান্ডার্স বার্গস্ট্রাম বলেন, ‘আমরা যদি আজ থেকে চার কিংবা পাঁচ হাজার বছর আগের প্রেক্ষাপটের দিকে তাকাই, আমরা দেখব যে ইউরোপে তখন বিভিন্ন প্রজাতির কুকুর ছিল। তবে সেগুলোর সঙ্গে ইউরোপের আজকের কুকুরগুলোর পার্থক্য রয়েছে। আজকের কুকুরগুলো এসেছে চার-পাঁচ হাজার বছর আগে টিকে যাওয়া কোনো এক বা একাধিক কুকুরের প্রজাতি থেকে।’

গবেষণার অংশ হিসেবে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানীদের একটি দল ২৭টি প্রাচীন প্রজাতির ডিএনএ বিশ্লেষণ করেছে। এসব ডিএনএ পাওয়া গেছে বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক জায়গা থেকে। এরপর এসব ডিএনএ নমুনার পারস্পরিক তুলনা করেছেন তাঁরা। আধুনিক কুকুরের ডিএনএর সঙ্গেও তাঁরা ওই ডিএনএগুলো তুলনা করেছেন। এরপর দেখা গেল আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলীয় রোডেসিয়ান রিজব্যাক প্রজাতির এবং মেক্সিকোর চিহুয়াহুয়া ও জোলোয়ৎজকুইন্টলি প্রজাতির কুকুরেরা প্রাচীন কুকুরের বংশগতির ধারা বয়ে চলেছে। তবে এশিয়ার আধুনিক কুকুরগুলোর পূর্ব ইতিহাস জটিল প্রকৃতির। যেমন চীনা প্রজাতির কুকুরের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার ডিঙ্গো এবং নিউগিনির গায়ক কুকুরের কিছুটা মিল রয়েছে।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ও গবেষক দলের সদস্য গ্রেগের লারসন বলেন, ‘কুকুর আমাদের প্রাচীনতম ও ঘনিষ্ঠতম সঙ্গী। প্রাচীন কুকুরের ডিএনএ বিশ্লেষণ বলছে, একসঙ্গে চলার এই ইতিহাস বহু আগের। এই গবেষণার মাধ্যমে মানুষ ও কুকুরের এই সম্পর্কের সূত্রপাত পর্যন্ত পৌঁছানোর পথ খুলে গেল।’