Thank you for trying Sticky AMP!!

রাশিয়ার হামলা ঠেকাতেই লুকানো শহর বানিয়েছে ফিনল্যান্ড

ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিঙ্কির নিচে একটি ‘লুকানো শহর’ বানানো হয়েছে। এ শহরের আছে সড়ক, খেলার মাঠ, সুইমিংপুল, হকি মাঠ, গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা। পারমাণবিকসহ যেকোনো যুদ্ধের মধ্যে ৯ লাখ মানুষ কয়েক মাস ধরে সেখানে আশ্রয় নিতে পারবে। শুধু হেলসিঙ্কি নয়, দেশজুড়ে এমন পরিকল্পনা নিয়েছে দেশটি। এর কারণ হলো পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোতে যোগ দিলে প্রতিবেশী দেশের সম্ভাব্য আক্রমণ ঠেকানো।

বিশ্বের অন্যতম সুখী দেশের তকমা আছে ফিনল্যান্ডের। কিন্তু দেশটির সাম্প্রতিক কিছু কর্মকাণ্ডের ফলে সুখী তকমায় দাগ লাগছে। কারণ, দেশজুড়ে বানানো হয়েছে ৫ হাজার বোমা শেল্টার, ৫০ হাজার বাংকার।

দেশটির প্রতিরক্ষা দপ্তর জানিয়েছে, আক্রমণ থেকে নিজেদের রক্ষার জন্যই এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

ফিনিশ ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনালের শীর্ষস্থানীয় গবেষক চ্যার্লি স্যালোনিয়াস-পাসটারনাক বলেন, ‘একটি ঐতিহাসিক ধারণা আছে, সব সময় আপনাকে প্রস্তুত থাকা উচিত। রাশিয়া ফিনল্যান্ডে আক্রমণ চালাতে পারে, এটি এ প্রজন্ম বা পরবর্তী প্রজন্ম—যেকোনো সময় হতে পারে।’

ফিনল্যান্ড তাদের অনেক অব্যবহৃত জমি এ ক্ষেত্রে ব্যবহার করেছে। হেলসিঙ্কি তাদের জনসাধারণের দৈনন্দিন ব্যবহারের জায়গাগুলোকে আশ্রয়কেন্দ্র, বোমা শেল্টার ও বাংকার বানিয়েছে। বাংকারে ভূগর্ভস্থ খেলার মাঠ, সুইমিংপুল, হকি খেলার মাঠ, গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা আছে।

রাশিয়ার পাশের দেশ ফিনল্যান্ড। এই দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত আছে ৮০০ মাইল। এত দিন ন্যাটোতে যোগ দিতে চাইত না ফিনল্যান্ড। কিন্তু হঠাৎ ন্যাটোতে যোগদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটি। ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ শুরুর তিন মাসের কম সময়ের মধ্যে ফিনল্যান্ডের এ সিদ্ধান্ত এল।

ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার এ সিদ্ধান্ত দেশটির জন্য একেবারেই বিপরীতমুখী। কারণ, ৭৫ বছরের বেশি সময় ধরে তারা সামরিকভাবে নিরপেক্ষ থাকার নীতিতে অটল ছিল। সুইডেনও দুই শতকের বেশি সময় ধরে সামরিকভাবে নিরপেক্ষ থাকার নীতি মেনে চলেছে।

তারাও ফিনল্যান্ডের পথেই হাঁটতে চাইছে। আর ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার আগে থেকেই নিজেদের নাগরিকদের অন্য দেশের আক্রমণ থেকে রক্ষার জন৵ প্রস্তুতি শুরু করেছে ফিনল্যান্ড। এরই অংশ হিসেবে তারা বাংকার ও বোমা শেল্টার বানিয়েছে।

হেলসিঙ্কির সিভিল ডিফেন্স ডিপার্টমেন্টের একজন কর্মকর্তা টমি রাস্ক বলেন, ‘আমাদের নাগরিকদের রক্ষা করতে হবে, এ জন্যই আমাদের এ ব্যবস্থা নিতে হয়েছে।’
ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ শুরুর পরই বদলে যেতে থাকে রাশিয়া-ফিনল্যান্ডের সম্পর্ক। এরপরই দেশটির সাধারণ জনগণ ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার কথা বলা শুরু করে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর আগে ফিনল্যান্ডের ৩০ শতাংশ মানুষ ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার পক্ষে ছিলেন। যুদ্ধ শুরুর পর সেটা ৭০ শতাংশে গিয়ে ঠেকেছে।

ফিনল্যান্ডের নাগরিক কারে ভার্টিয়ানেন বলেন, ‘আমাদের একটি ভয়ংকর প্রতিবেশী দেশ রয়েছে। ন্যাটোতে যাওয়া ছাড়া আমাদের আর কোনো বিকল্প নেই।’

নিরপেক্ষতার নীতি বদলে ফেলে ফিনল্যান্ড ও সুইডেন ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করায় যুক্তরাজ্যসহ ন্যাটোর অনেক সদস্যদেশ সবুজসংকেত দিয়েছে। তবে ইউরোপের দেশ দুটির ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার উদ্যোগে আপত্তি জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। গত শুক্রবার ইস্তাম্বুলে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘স্ক্যান্ডিনেভিয়ান অঞ্চল সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর অতিথিশালা। এ পরিস্থিতিতে আমরা তাদের ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার পরিকল্পনা সমর্থন করতে পারি না।’

ক্রোয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ন্যাটোর উপসচিব জর্ডান জার্লিক রডম্যান বলেছেন, দুই ইউরোপিয়ান দেশের ন্যাটোতে যোগদানের বিষয়ে কথা বলতে তিনি বার্লিন পৌঁছেছেন। তিনি নিশ্চিত করেন, ন্যাটো দেশগুলোর মধ্যে আলোচনায় তুরস্কের উদ্বেগ গুরুত্ব পাবে।

ফিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সানা মার্টিন বলেন, ‘আমরা আশা করি, পার্লামেন্ট ন্যাটোর সদস্যপদ পাওয়ার সিদ্ধান্ত নিশ্চিত করবে। শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

শনিবার মার্টিনের সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি ন্যাটোর সদস্যপদ পেতে ইতিবাচক মনোভাব দেখায়। এরপর ফিনল্যান্ডের সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদ সদস্যরা তাঁকে সমর্থন করেন। মার্টিন বলেন, ‘আশা করি, আগামী সপ্তাহে সুইডেনের সঙ্গে যৌথভাবে আমরা আবেদন করতে পারব।’

দুই নর্ডিক দেশই শীতল যুদ্ধের পর তাদের কঠোর নিরপেক্ষতার নীতি ভেঙে ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগ দেয়। ১৯৯০-এর দশকে ন্যাটোর সহযোগী হয় এবং পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ককে দৃঢ় করে।

কিন্তু ন্যাটোর পূর্ণ সদস্যপদের ধারণা নিয়ে এসব দেশের তেমন কোনো মাথাব্যথা ছিল না। তবে ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতি পাল্টে দিয়েছে। ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার পক্ষে জনগণের ও রাজনৈতিক সমর্থন বেড়েছে। তথ্যসূত্র: এএফপি, এবিসি নিউজ