Thank you for trying Sticky AMP!!

২৬টি লাশ ছিল আলিঙ্গনে আবদ্ধ

অবকাশ শহর মাতিকে গ্রাস করে দাবানল। এথেন্স, গ্রিস, ২৫ জুলাই। ছবি: রয়টার্স

গ্রিসের রাজধানী এথেন্সের কাছাকাছি ছোট অবকাশ শহর মাতি গ্রাস করা ভয়াবহ দাবানলে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৭৭ জনে পৌঁছেছে। এর মধ্যে ২৬টি লাশ ছিল আলিঙ্গনে আবদ্ধ অবস্থায়। এখনো কেউ জীবিত বা মৃত অবস্থায় পড়ে আছে কি না, সেই খোঁজ চলছে। এ ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী আলেক্সিস সিপ্রাস তিন দিনের শোক ঘোষণা করেছেন।

রাজধানী থেকে প্রায় ২৯ কিলোমিটার পূর্বে আতিকা অঞ্চলের মাতি শহরটি গ্রিসের ছুটি কাটানোর জন্য বিশেষ করে অবসরভোগী ও শিশুদের কাছে বেশ জনপ্রিয় অবকাশকেন্দ্র। ২০০৭ সালের আগস্ট মাসে দক্ষিণাঞ্চলীয় পেলোপোনেস উপদ্বীপে দাবানলে বেশ কয়েকজন লোক মারা যায়। এ ঘটনার পর থেকে এখন পর্যন্ত মাতি শহরের এই দাবানলকেই গ্রিসের সবচেয়ে ভয়াবহ বলে মনে করা হচ্ছে।

দাবানলে গাছের সঙ্গে পুড়েছে এই গাড়িটিও। মাতি, এথেন্স, গ্রিস, ২৫ জুলাই। ছবি: রয়টার্স

গরমের দিনে আতিকা অঞ্চলে আগুনের ঘটনা বারবারই ঘটে আসছে। স্থানীয় কর্মকর্তারা ধারণা করছেন, নাশকতাকারীরা পরিত্যক্ত কোনো বাড়ি লুট করতে গেলে ঘটনাচক্রে এ আগুন ধরে যায় বা তারা নিজেরাই আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।

শত শত ফায়ার ফাইটার আগুন নেভাতে কাজ করে গেছেন। তাঁরা এ পরিস্থিতিকে ‘অত্যন্ত কঠিন’ বলে মন্তব্য করেছেন।

সরকারের মুখপাত্র দিমিত্রিস বলেন, একই সময়ে এথেন্সের তিনটি ভিন্ন জায়গায় ১৫টি আগুনের ঘটনা ঘটেছে। কোনো নাশকতাকারী এমনটা ঘটাচ্ছে কি না, তা দেখতে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ড্রোন সহায়তা চেয়েছে।

পর্যটনের জন্য বিখ্যাত এই শহরটি শিশুদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। আগুন থেকে রেহাই পায়নি শিশুদের খেলার কাঠের দোলনাটিও। মাতি, এথেন্স, গ্রিস, ২৫ জুলাই। ছবি: রয়টার্স

গত সোমবার দুপুরের পর গ্রাস করে দাবানল। দমকা বাতাসের কারণে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। বাতাসের এ গতিবেগ ছিল সর্বোচ্চ ১০০ কিলোমিটার। অনেকেই বাড়িঘরে ও যানবাহনে আটকা পড়ে। আর অন্যরা আগুনের লেলিহান শিখা থেকে বাঁচতে সৈকতের দিকে ছুটতে থাকেন। দাবানল ক্রমেই সাগর দিকে অগ্রসর হতে থাকায় সেখানে আটকে পড়া লোকজনের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক। এরই মধ্যে সেখান থেকে কয়েক শ মানুষকে উদ্ধার করেছে উপকূলরক্ষী বাহিনী।

গ্রিসের রেডক্রসের প্রধান নিকোস ইকোনোমোপুলস বলেন, একজন উদ্ধারকর্মী তাঁকে জানান, সৈকত থেকে প্রায় ৩০ মিটার দূরে একটি স্থানে তিনি ২৬ জনের লাশ পড়ে থাকতে দেখেছেন। তারা দাবানল থেকে পালানোর চেষ্টা করেছে; কিন্তু শিশুদের নিয়ে সময়মতো পথ খুঁজে পায়নি। আর যখন সব শেষ বুঝতে পেরেছে, তখন তারা সবাই সবাইকে জড়িয়ে ধরেছিল। এ অবস্থাতেই লাশগুলো পাওয়া যায়।

আগুন থেকে বাঁচতে অনেকেই সমুদ্রের পানিতে ঠাঁই নিয়েছিলেন। মাতি, এথেন্স, গ্রিস, ২৪ জুলাই। ছবি: রয়টার্স

উদ্ধারকর্মীরা এখন বাড়িঘরে, গাড়ি ও উপকূলীয় এলাকায় কেউ জীবিত বা মৃত অবস্থায় পড়ে আছে কি না, সেই তল্লাশি চালাচ্ছেন।

নিখোঁজ ব্যক্তিদের সুনির্দিষ্ট কোনো সংখ্যা না থাকলেও এরই মধ্যে স্বজনেরা ৩০ জনের সন্ধানে ওয়েবসাইটে ছবি পোস্ট করছেন।

পুড়ে যাওয়া একটি ভবনে এক উদ্ধারকর্মী। মাতি, এথেন্স, গ্রিস, ২৫ জুলাই। ছবি: রয়টার্স

দুর্ঘটনার কবল থেকে বেঁচে ফেরা এক ব্যক্তি কোসতাস লাগানোস বলেন, ‘আমাদের পিঠে আগুন ধরে গিয়েছিল। বাঁচার জন্য পানিতে ঝাঁপ দিই...আমি বলেছি হে স্রষ্টা আমাদের বাঁচতে হলে দৌড়াতে হবে।’ জর্জ ভোকাস নামের আরেক ব্যক্তির পরিবারের সবাই সাগরে পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রাণে বেঁচেছেন। তিনি বিবিসিকে নিউজকে বলেছেন, তিনি দুজন নারীকে বাঁচাতে চেষ্টা করেও সফল হননি। ‘আমরা সুন্দর এই মাতি শহরে যেন বাইবেলে থাকা কোনো বিপর্যয়ের সাক্ষী হলাম।’

গ্রিসের এ দুঃসময়ে ইতালি, জার্মানি, পোল্যান্ড ও ফ্রান্স সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। দেশগুলো গ্রিসে উড়োজাহাজ, যানবাহন ও ফায়ার ফাইটার পাঠিয়েছে। স্পেন ও সাইপ্রাসও সাহায্য করতে চেয়েছে।