Thank you for trying Sticky AMP!!

৪৯ বছর মেয়র থেকে ফের নির্বাচনে ৯৪ বছরের ত্রিগেনো

আঁদ্রে ত্রিগেনো। ছবি বিবিসির সৌজন্যে

ফ্রান্সের দুই নগরে ৪৯ বছর মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। বয়স কত? মেয়র থাকার মেয়াদের সংখ্যাটাকে ঠিক উল্টে দিলেই মিলবে। হ্যাঁ, ৯৪ বছর তাঁর। নতুন খবরটি হচ্ছে, আবার মেয়র পদে নির্বাচন করতে যাচ্ছেন এই নবতিপর।

ফান্সের পামিয়েরস শহরে মেয়রপদে আবার নির্বাচনী লড়াই করছেন ৯৪ বছরের আঁদ্রে ত্রিগেনো। ৪৯ বছর ধরে দুই শহরে মেয়রের দায়িত্বপালন করছেন তিনি। জীবনে নির্বাচনী লড়াই করেছেন ১৯ বার। মাত্র একবারই হেরেছেন।

অন্যরা যখন ত্রিগেনোকে অবসরে যেতে বলছেন, ত্রিগেনো তা আমলেই  নিচ্ছন না। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে জেগে ওঠেন নতুন নতুন পরিকল্পনা নিয়ে। সবই তাঁর সুপ্রতিষ্ঠিত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আর পামিয়েরস শহরের উন্নয়ন নিয়ে। বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাতকারে ত্রিগেনো শুনিয়েছেন তাঁর বর্ণিল জীবনের গল্প।

 করোনার সংক্রমণের কারণে ফ্রান্সে  মেয়র নির্বাচন পিছিয়েছে তিন মাস।  মার্চে প্রথম দফা মেয়র নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আগামী সপ্তাহে দ্বিতীয় দফা নির্বাচন হতে যাচ্ছে।   প্রথম দফা মেয়র নির্বাচনে এগিয়ে আঁদ্রে ত্রিগেনো। ২৮ জুন দ্বিতীয় দফা নির্বাচনে জয়ী হলে মেয়াদকাল শেষে তাঁর বয়স হবে ১০১ বছর।

ফ্রান্সে ত্রিগেনোর মতো  মেয়র নির্বাচনের আরও  প্রার্থী রয়েছেন। তাঁদের অনেকের বয়স নব্বইয়ের ওপরে।  তবে তাঁদের জীবন ত্রিগেনোর মতো বর্ণিল নয়।

ত্রিগেনো ১৯২৫ সালে প্যারিসে জন্মগ্রহণ করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি ছিলেন কিশোর। আলজেরিয়া থেকে আসা ইহুদি অভিবাসী ছিলেন ত্রিগেনোর মা–বাবা।  প্রতিবেশী এক পুলিশ কর্মকর্তার পরামর্শে বাড়ি ছেড়ে মা–বাবার সঙ্গে পালিয়ে যেতে হয় ত্রিগেনোকে। নাহলে পুলিশ ধরে নিয়ে যেত তাঁদের।  ফ্রান্সের দক্ষিণে পাহাড়ি এলাকা আরিয়েজে চলে যান ত্রিগেনো। মিত্রবাহিনীকে সহায়তা করতে শুরু করেন । ভূপাতিত বিমানের সেনাদের স্পেনে পালাতে সহায়তা করেন তিনি।ত্রিগেনোকে তিনবার আটক করা হয়।  কোনো না কোনোভাবে পার পেয়ে যান। যুদ্ধ শেষ হয়। ত্রিগেনো ফ্রান্সের দক্ষিণেই বসবাস শুরু করেন। শুরু করেন ব্যবসা।

 তাঁবু তৈরির ব্যবসা শুরু করেন ট্রিগানো। তাঁর বাবা ও বড়ভাইও যুদ্ধের আগে এই ব্যবসা করতেন। ত্রিগেনোর ভাই তাঁদের প্রতিষ্ঠান ক্লাব মেডের প্রথম বাণিজ্য পরিচালক। পরে সভাপতি ও মহাপরিচালক হন। ফ্রান্সে তাঁদের ক্লাব মেড এখন বিলাসবহুল হোটেলের জন্য সুপরিচিত। তবে প্রথম ১৫ বছর ক্লাব মেডের অতিথিরা তাঁবুতে থাকতেন। বিশ্বযুদ্ধের পর মার্কিন বাহিনীর তাঁবুগুলো ইউরোপে সহজলভ্য ও সস্তা ছিল। ত্রিগেনো এই তাঁবুগুলো তাঁর ব্যবসার কাজে লাগান। তিউনিসিয়ার মাজোরকা, কোর্ফু, দিজেরবায় অবকাশ কাটাতে আসা মানুষ এসব তাঁবুতে থাকতেন। 

ত্রিগেনোর তাঁবুর ব্যবসা ফুলেফেঁপে ওঠে। সম্পদশালী হয়ে ওঠেন তিনি। সংগ্রহে রাখেন নানা মডেলের ১২০ টি গাড়ি।

ব্যবসায়িক সফলতার পর ত্রিগেনো ঝোঁকেন রাজনীতিতে।আরিয়েজ এলাকার বড় শহর পামিয়েরসে মেয়র হিসেবে ২৫ বছর দায়িত্বপালন করেন। এর আগে তিনি ছোট শহর মাজিরেসে ২৪ বছর মেয়র হিসেবে দায়িত্বপালন করেন। প্যারিসের ন্যাশনাল পার্লামেন্টের সদস্যও হন।

ত্রিগেনো বলেন, তাঁর সম্পদের কারণে মানুষ তাঁকে বিশ্বাস করেছিল। মেয়রপদকে ব্যবহার করে তিনি ব্যক্তিগত লাভ করবেন না বলে বিশ্বাস ছিল মানুষের।তিনি বলেন,তাঁর ব্যবসার অনেক কাজ এখনো বাকি। পামিয়েরসের কেন্দ্রস্থল সংস্কারের পরিকল্পনা আছে বলে জানান ত্রিগেনো। পামিয়েরসে এখনো দারিদ্র্য রয়েছে।  তিনি বলেন, প্রতিরাতে আমি ঘুমাতে যাই। আর নতুন নতুন পরিকল্পনা নিয়ে জেগে উঠি।