Thank you for trying Sticky AMP!!

অপরূপ সাজে সেজেছে কলকাতা

দেশপ্রিয় পার্ক সর্বজনীনের পূজামণ্ডপ। ছবি: ভাস্কর মুখার্জী

ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা শুরু হচ্ছে আজ। এ উপলক্ষে কলকাতাসহ পুরো পশ্চিমবঙ্গ যেন সেজেছে অপরূপ সাজে। পূজার বাদ্যে সরগরম কলকাতা।

নান্দনিক সাজে সেজেছে পূজার মণ্ডপগুলো। সন্ধ্যায় এসব মণ্ডপে আলোকসজ্জা চোখ ধাঁধিয়ে দিচ্ছে নগরবাসীর। তৃতীয়া-চতুর্থী থেকেই রাস্তায় মানুষের সরগরম বেড়েছে। পূজার মণ্ডপ আর দুর্গা প্রতিমা দর্শন করছেন সবাই।

প্রতিবারই নতুন কোনো চমক দেয় কলকাতার সন্তোষ মিত্র স্কয়ারের সর্বজনীন পূজা কমিটি। ২০১৭ সালে দুর্গার ২৮ কেজি ওজনের সোনার শাড়ি তৈরি করে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল তারা। গত বছর তারা ১০ টন রুপা দিয়ে চারতলা রথ তৈরি করে ফের চমক দেখায়। এবার এই কমিটি ৫০ কেজি সোনা দিয়ে তৈরি করেছে দুর্গা মূর্তি। অসুর এবং সিংহও মুড়ে দেওয়া হয়েছে সোনার পাতে। খরচ হয়েছে ২০ কোটি রুপি।

২০১৫ সালে বিশ্বের সর্বোচ্চ দুর্গা প্রতিমা তৈরি করে আলোড়ন তুলেছিল দক্ষিণ কলকাতার দেশপ্রিয় পার্ক সর্বজনীন। সেই দুর্গার উচ্চতা ছিল ৮৩ ফুট। পরের বছর এই দেশপ্রিয় পার্ক এক হাজার হাতের দুর্গা বানিয়ে চমক দিয়েছিল। এবারও কলকাতাসহ সারা পশ্চিমবঙ্গে এই দুর্গামণ্ডপ তৈরিতে নানা ধরনের চমক দেখা যাচ্ছে।

ঐতিহাসিক ভাস্কর্যকে থিম করে কলকাতাসহ রাজ্যের বিভিন্ন পূজামণ্ডপ তৈরি হয়েছে। বারাসাত রথতলা সর্বজনীন এবার থিম করেছে লন্ডনের বাকিংহাম প্রাসাদকে। বাগনানের গোয়ালবেড়িয়া ক্লাব থিম করেছে আমাজান জঙ্গলকে। মিসরের পিরামিড করেছে বেলেঘাটা পল্লি উন্নয়ন সমিতি। শক্তিনগর সর্বজনীনের থিম চীনের প্যাগোডা।

বাংলাদেশের ছাপ ফুটে উঠেছে বিভিন্ন পূজামণ্ডপে। কলকাতার রাজডাঙ্গা নবোদয় সংঘ এবার শরণার্থীদের থিম করেছে। দেশে দেশে শরণার্থীদের জীবনযন্ত্রণার নানা দিক তুলে ধরা হয়েছে। তুলে ধরা হয়েছে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ থেকে কীভাবে শরণার্থীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঠাঁই নিয়েছিল ভারতের মাটিতে। কলকাতার কেষ্টপুরের প্রফুল্ল কানন (পশ্চিম) এবার থিম করেছে ‘একই মাটির সন্তান আমরা, কাঁটাতার আমাদের ভালোবাসার বন্ধনকে ভাগ করতে পারে না।’

কলকাতার বেলঘরিয়ার বাণী মন্দির ক্লাব থিম করেছে ইলিশ নিয়ে। মণ্ডপজুড়ে গঙ্গা আর পদ্মার ইলিশ। রয়েছে নদী থেকে জাল দিয়ে ইলিশ ধরা ও নৌকায় তোলার দৃশ্য। সঙ্গে ইলিশ ধরা বন্ধেরও বার্তা। নৌকায় থাকছেন দেবী দুর্গা। ফুটে উঠেছে বাংলাদেশ সরকারের ৫০০ টন ইলিশ রপ্তানির ছবিও। কলকাতার সল্টলেকের এফই ব্লকের সর্বজনীন পূজার মণ্ডপ তৈরি করা হয়েছে বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলার জমিদার বাড়ির আদলে। কলকাতার নিউ বারাকপুরের নবপল্লি এভারগ্রিনের মণ্ডপ তৈরি হয়েছে বাংলাদেশের বৈশাখী বা নববর্ষ উৎসবকে থিম করে।
দুই বাংলার এক টুকরো সুন্দরবনও ফুটে উঠেছে কলকাতার কেষ্টপুরে। বর্ধমানের কাটোয়ায় এবার থিম করা হয়েছে এনআরসিকে। এনআরসিকে দেখান হয়েছে অসুররূপে। বাগনানের গোয়ালবেড়িয়া ক্লাব থিম করেছে আমাজান জঙ্গলকে। কলকাতার বোসপুকুর শীতলা মন্দিরের থিম এবার কলম। তৈরি করা হয়েছে ২০ ফুট লম্বা কলম। নাম দেওয়া হয়েছে ‘জ্ঞানবৃক্ষ’। নাকতলা উদয়ন সংঘের থিম জল ও বাতাস ভরা কলস। ১০ হাজার কলস দিয়ে মণ্ডপ তৈরি করেছে নাকতলা সর্বজনীন। হরিদেবপুর সর্বজনীনের থিম ‘আগন্তুক’।

কলকাতাসহ রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় তৈরি করা হয়েছে বিচিত্র সব মণ্ডপ। প্রতিমা তৈরি হয়েছে নানা ভাবনা থেকে। নাকতলা উদয়ন সংঘ, শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাব, সুরুচি সংঘ, ত্রিধারা সর্বজনীন, খিদিরপুর ২৫ পল্লি, হরিদেবপুর ৪১ পল্লি, কালীঘাটের ৬৬ পল্লি, খিদিরপুর ৭৪ পল্লি, বাগবাজার সর্বজনীন, বকুলবাগান সর্বজনীন, দেশপ্রিয় পার্ক, সন্তোষ মিত্র স্কয়ার, হাতিবাগান সর্বজনীন, মহম্মদ আলি পার্ক, কুমারটুলি পার্ক, কলেজ স্ট্রিট সর্বজনীন, বড়িশা ক্লাব, বেহালা নতুন দল—এরা প্রতিমা গড়ায় সুনাম কিনেছে।

বড়িশা ক্লাবের পূজামণ্ডপ। ছবি: ভাস্কর মুখার্জী
নাকতলা সর্বজনীনের পূজামণ্ডপ। ছবি: ভাস্কর মুখার্জী
হরিদেবপুর ৪১ পল্লির দেবী প্রতিমা। ছবি: ভাস্কর মুখার্জী
হাতিবাগান সর্বজনীনের পূজামণ্ডপ। ছবি: ভাস্কর মুখার্জী
খিদিরপুর ২৫ পল্লির মণ্ডপ। ছবি: ভাস্কর মুখার্জী
কুমারটুলি পার্কের পূজামণ্ডপ। ছবি: ভাস্কর মুখার্জী
মহম্মদ আলি পার্কের পূজামণ্ডপ। ছবি: ভাস্কর মুখার্জী
প্রফুল্ল কাননের পূজামণ্ডপ। ছবি: ভাস্কর মুখার্জী
প্রফুল্লকাননের পূজামণ্ডপ। ছবি: ভাস্কর মুখার্জী
শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাবের পূজামণ্ডপ। ছবি: ভাস্কর মুখার্জী