Thank you for trying Sticky AMP!!

অবরুদ্ধ কাশ্মীরে গাছেই আপেল পচাচ্ছেন চাষিরা

কাশ্মীরে আপেল থেকেই বড় আয় হয়। ছবি: এএফপি

কাশ্মীরের রপ্তানি পণ্যের মধ্যে সবচেয়ে কদর আপেলের। সেই কদরের চিন্তা করেই অনেক আগ্রহ নিয়ে আপেল চাষ করেন সেখানের চাষিরা। কাশ্মীরের স্থানীয় অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সেই আপেল এখন চাষিরা গাছে পচাচ্ছেন।

১ মাস ২৪ দিন ধরে কাশ্মীর অবরুদ্ধ। কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা রদ করার পর থেকেই অস্থিতিশীলতার আশঙ্কায় সেখানে সেনা প্রহরা বাড়ানো হয়েছে। যোগাযোগব্যবস্থা অবরুদ্ধ করে দেওয়ায় কাশ্মীর কার্যত এখন বাইরের জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন। আর বিচ্ছিন্ন কাশ্মীরে এখন গাছেই পচে যাচ্ছে আপেল।

আজ রোববার বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়, এই পরিস্থিতিতে হয় রাগে না হয় সরকারবিরোধীদের সঙ্গে যোগ দিয়ে ইচ্ছে করেই আপেল পচাচ্ছেন চাষিরা।

প্রতিবছর অঞ্চলটিতে শত শত মিলিয়ন ডলার আয় হয় আপেল বিক্রি থেকে। কাশ্মীরের প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আপেল চাষে জড়িত।

অবরুদ্ধ কাশ্মীরে গাছে ফেলে রাখা আপেল পচে যাচ্ছে। ছবি: এএফপি

কাশ্মীরের শোপিয়ান জেলার কেন্দ্রের একটি আপেলবাগানের মালিক গোলাম নবী এবং তাঁর ভাই প্রতিবছর সাত হাজার বাক্স আপেল বিক্রি করে ৭০ লাখ রুপির মতো আয় করেন। তাঁর বাগানটি এখন অলস পড়ে রয়েছে। গাছ থেকে আপেল তোলা হচ্ছে না। পাকা আপেলের ভারে গাছের ডাল নুইয়ে পড়ছে।
মালিক বললেন, ‘ওগুলো গাছেই পচুক।’ তিনি বলেন, ফসল উৎপাদন হলে ভারতীয় সরকার বিশ্বকে বলতে পারবে কাশ্মীরে সবকিছু ঠিকঠাক চলছে। অথচ এই ‘সবকিছু ঠিকঠাক চলা’ থেকে অনেক দূরে রয়েছে।

কাশ্মীরে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ফলের বাগানের মালিকদের চাষ না করে ‘প্রতিরোধে’ যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রচারপত্র বিলি করেছে।

ইচ্ছে করেই আপেল গাছ থেকে তুলছেন না চাষিরা, আপেলের খালি বাক্স পড়ে রয়েছে। ছবি: এএফপি

কোনো কোনো চাষি জানিয়েছেন, ঝুঁকি থাকলেও তাঁরা এমন অভিযানে অংশ নিতে ইচ্ছুক। তবে সেখানে উভয়সংকটও রয়েছে। কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ এক বাগানমালিকের ওপর হামলা হয়েছিল।

তবে স্থানীয় লোকজন জানান, বিদ্রোহীদের কারণে আপেল না তুলে গাছে ফেলে রাখেননি তাঁরা।
মালিক বললেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে তাঁদের একমাত্র প্রতিবাদ জানানোর ভাষাই হচ্ছে গাছে পাকা আপেল ফেলে রাখা।

অনেকে বলছিলেন, তাঁরা বেশি ভয়ে রয়েছেন ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর। রাতে গ্রাম থেকে তরুণদের তুলে নিয়ে যাচ্ছেন সেনারা।
সে ক্ষেত্রেও ভিন্নমত রয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন গ্রামবাসী বলেন, বিদ্রোহীদের ভয় আছে তাঁদের, তবে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর ভয়ে নেই তাঁরা।

সরকার পরিচালিত ফলের বাজার শূন্য পড়ে রয়েছে, পাহারা দিচ্ছেন এক সেনা। ছবি: এএফপি

নয়াদিল্লি বলছে, বিশেষ মর্যাদা রদ করে জম্মু ও কাশ্মীরকে পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণার সরকারি পদক্ষেপকে অনেক কাশ্মীরি সমর্থন করছে। তবে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তান সমর্থিত ‘জঙ্গিদের’ কারণে তারা প্রকাশ্যে তা বলতে ভয় পাচ্ছে।

এদিকে ভারত সরকার আপেল সমস্যার সমাধান করতে চাইছে। আপেলচাষিদের কাছ থেকে সরাসরি আপেল কিনে নেওয়ার প্রকল্প নিচ্ছে। সরকার আপেলচাষিদের যথাযথ নিরাপত্তা দেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
এএফপির সঙ্গে কথা বলা চাষিরা সরকারের এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। ফলে শোপিয়ান ও কাশ্মীরের অন্যান্য এলাকায় ফলের বাজার শূন্য। যদিও কিছু ব্যবসায়ী অভিযোগ করেছেন, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ স্বাভাবিক সময়ের মতো দোকান খোলা রাখতে বলে শাসিয়েছে।
স্থানীয় ফল উৎপাদনকারীদের সংগঠনের প্রধান আহমাদ বশির বলেছেন, ‘কর্তৃপক্ষ হুমকি দিয়েছে, যদি আমরা বাজারে দোকান খোলা না রাখি, তাহলে দোকান গুঁড়িয়ে দেবে। অথচ বাজার পুরো জনশূন্য।’

নয়াদিল্লিভিত্তিক কাশ্মীর আপেল মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের মেথারাম ক্রিপলানি জানিয়েছেন, বাজারে আপেল সরবরাহ ২৫ শতাংশ কমেছে। কাশ্মীরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় ফোন সংযোগের অভাবে ক্রেতারা বড় সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে।