Thank you for trying Sticky AMP!!

এ কোন ভারত!

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: এএফপি

‘স্বচ্ছ ভারত’ অভিযানের মাধ্যমে পরিচ্ছন্ন ভারত গড়ার ডাক দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ২ অক্টোবর ‘বাপুজি’ মহাত্মা গান্ধীর জন্মদিনে স্বচ্ছ ভারত গড়ার অভিযান শুরু করা হয়। ২০১৯ সালে পালিত হবে মহাত্মা গান্ধীর ১৫০তম জন্মদিন। সেই জন্মদিনে বাপুজিকে এক পরিচ্ছন্ন ভারত উপহার দিতে চান মোদি।
কিন্তু মোদি কি আসলেই এক পরিচ্ছন্ন ভারত উপহার দিতে পারবেন? নাকি এ সবই রাজনীতির মাঠ দখলের ফাঁকা বুলি? এর আগে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ জোট সরকার নির্মল ভারত অভিযানের মাধ্যমে ভারতের প্রতিটি পরিবারের জন্য শৌচাগারের ব্যবস্থা করে দেওয়ার প্রকল্প হাতে নিয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওই প্রকল্প ফলপ্রসূ হয়নি। ইউপিএ জোট সরকারের মতো মোদির এ অভিযান কি ভেস্তে যাবে, নাকি সত্যিই তিনি সফল হবেন, তা দেখতে অন্তত ২০১৯ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
কিন্তু মোদির কাঙ্ক্ষিত স্বচ্ছ ভারতের অভিযানে চ্যালেঞ্জ কম নেই। স্বচ্ছ ভারতের সফল করতে মোদি যেসব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে পারেন তা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতের ইন্ডিয়া টুডে নামের একটি সাময়িকী।
‘ক্যান ইন্ডিয়া ডেলিভার অ্যা ক্লিন ইন্ডিয়া?’ শিরোনামের ওই প্রতিবেদনে মোদির যেসব চ্যালেঞ্জ তুলে ধরা হয়েছে তা এখানে সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরা হলো:
ভারতের শহরগুলো থেকে প্রতিবছর গড়ে ৬৮৮ লাখ টন আবর্জনা তৈরি হয়। এর মধ্যে ছয় হাজার টন কেবল প্লাস্টিক আবর্জনা রয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে ২০৪৭ সালে প্রায় এক হাজার ৪০০ বর্গকিলোমিটার বা রাজধানী দিল্লির সমান আয়তনের এলাকা দরকার হবে কেবল আবর্জনা ফেলার জন্য।
এখনো ভারতের ৭৮ শতাংশ নালার ময়লা পানি অপরিশোধিত অবস্থায় নদী ও খালে গিয়ে পড়ছে। এ নোংরা পানি আবার ভূগর্ভস্থ পানিতে মিশে খাবার পানিকে দূষিত করছে।
গড়ে প্রায় ৬০ কোটি ভারতীয় খোলা জায়গায় মলত্যাগ করে। এ ক্ষেত্রে ভারতের অবস্থা দক্ষিণ এশিয়া এবং আফ্রিকার অনেক দারিদ্র্যপীড়িত দেশের চেয়েও খারাপ। যেখানে বাংলাদেশে ৩ শতাংশ, আফগানিস্তানের ১৫ শতাংশ ও আফ্রিকার কঙ্গোর ৮ শতাংশ লোক খোলা জায়গায় মলত্যাগ করে, সেখানে ভারতের হার ৪৮ শতাংশ!
খোলা জায়গায় মলত্যাগ করার কারণে ভারতের অধিকাংশ শিশু কৃমিজনিত রোগে ভুগছে, যা অপুষ্টি সমস্যার আরেক কারণ। অন্যদিকে এসব ময়লা খাবার পানির সঙ্গে মিশে খাবার পানিকে দূষিত করছে। এ কারণে প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষ ডায়রিয়া ও মস্তিষ্ক প্রদাহজনিত রোগে মারা যাচ্ছে।
ইন্ডিয়া টুডের প্রতিবেদনে বলা হয়, শৌচাগার না ব্যবহার করার সঙ্গে অপুষ্টির অঙ্গাঙ্গি সম্পর্ক রয়েছে। যেমন ওডিশায় ৮৫ দশমিক ৯ ও বিহারে ৮২ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ শৌচাগার ব্যবহার করেন না। ফলে এ দুটি রাজ্যে অপুষ্টির হার অনেক বেশি। অন্যদিকে, শৌচাগার ব্যবহার না করার হার কেরালায় ৬ দশমিক ৮ ও সিকিমের ১৫ দশমিক ৯ শতাংশ। গবেষণায় দেখা গেছে, এ দুটি রাজ্যে অপুষ্টিতে ভোগার হার কম।
স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থা না থাকায় ভারতের আর্থিক ক্ষতি কম নয়। ভারতের প্রায় ৬ দশমিক ৪ শতাংশ জিডিপি (মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন) কেবল চিকিৎসা-ব্যবস্থায় খরচ করতে হচ্ছে। এক বছরে ছয় হাজার রুপি মাথাপিছু আয় বাড়াতে পারলেই কেবল সবার জন্য স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। কিন্তু এত মাথাপিছু আয় এক বছরে মোদির পক্ষে বাড়ানো সম্ভব কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে। এ ছাড়া মোদিকে তাঁর লক্ষ্য অর্জনের জন্য স্যানিটেশনে ব্যাপক ভর্তুকি বাড়াতে হবে। বর্তমানে খাদ্যে ভর্তুকির জন্য সরকার দুই হাজার ৬০০ কোটি ডলার ব্যয় করছে, পক্ষান্তরে শৌচাগারের জন্য ব্যয় মাত্র ২০ কোটি ডলার।
শুধু ব্যয় বাড়ালেই হবে না সঙ্গে অভ্যাসের পরিবর্তন করতে হবে। বাড়িতে শৌচাগার থাকার পরও খোলা জায়গায় মলত্যাগ করার অভ্যাস রয়েছে অনেক ভারতীয় নাগরিকের। এ জন্য অভ্যাসের পরিবর্তন করতে হবে।
২০১৯ সালে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ভারতের প্রতিটি পরিবারের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার নিশ্চিত করতে প্রতিদিন ৬৬ হাজার ৫৭৫টি শৌচাগার নির্মাণ করতে হবে।
কেবলমাত্র ভারতের শহরের বিদ্যালয়গুলোতে ছেলেমেয়েদের জন্য পৃথক সুবিধাসহ আরও ৫৬ হাজার ৯২৮টি শৌচাগার নির্মাণের প্রয়োজন পড়বে। শৌচাগার ছাড়া নতুন কোনো স্কুল, কলেজ, বাসস্ট্যান্ড কিংবা চিকিৎসাকেন্দ্র অনুমোদন বন্ধ করতে হবে।
এসব চ্যালেঞ্জ উতরে মোদি ২০১৯ সালে বাপুজি মহাত্মা গান্ধীর জন্মদিনে স্বচ্ছ ভারত উপহার দিতে পারবেন কি না, সেটি হয়তো সময়ই বলে দেবে।