Thank you for trying Sticky AMP!!

কাশ্মীর নিয়ে ভারতে সর্বদলীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত

সীমান্তপারের সন্ত্রাসের মোকাবিলা সারা ভারত একজোট হয়ে করবে। কাশ্মীরের পুলওয়ামায় সন্ত্রাসবাদী হামলায় নিহত জওয়ানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সর্বদলীয় বৈঠকে এক প্রস্তাবে এ অঙ্গীকার করা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের পৌরোহিত্যে আজ শনিবার রাজধানী দিল্লিতে সর্বদলীয় বৈঠকে ওই প্রস্তাব গৃহীত হয়। ওই বৈঠকে অংশ নেওয়া সব রাজনৈতিক দলের নেতারা এই কঠিন পরিস্থিতিতে রাজনীতি ভুলে সরকারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে। প্রস্তাবে পাকিস্তানের নাম উল্লেখ করা হয়নি। তবে তা না হলেও সন্ত্রাসের উৎস যে ওই দেশ, তা স্পষ্ট বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, সীমান্তপার থেকে আসা সন্ত্রাসে ভারত জর্জরিত। ইদানীং প্রতিবেশী দেশ সেই অশুভ শক্তিদের নানাভাবে উৎসাহিত করছে।

সর্বদলীয় এই বৈঠকে যোগ দেন কংগ্রেস নেতা গুলাম নবী আজাদ, আনন্দ শর্মা ও জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া, তৃণমূল কংগ্রেসের সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও ডেরেক ও ব্রায়ান, সিপিআইয়ের ডি রাজা, শিবসেনার সঞ্জয় রাউত, ন্যাশনাল কনফারেন্সের ফারুক আবদুল্লাহ, লোক জনশক্তি পার্টির রামবিলাস পাসোয়ান, আম আদমি পার্টির সঞ্জয় সিং, তেলেঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতির জিতেন্দ্র রেড্ডিসহ আরও অনেকে। বৈঠকে বলা হয়, শুধু জাতীয় দলগুলোই নয়, সরকারের উচিত শক্তিশালী আঞ্চলিক দলের নেতাদের সঙ্গেও এ ধরনের বৈঠক করা।

পুলওয়ামায় ঠিক কী ঘটেছে, সরকারের পক্ষ থেকে বৈঠকের শুরুতেই তার বিবরণ দেওয়া হয়। সন্ত্রাসবাদী আক্রমণের প্রতিবাদে জম্মুতে যেভাবে হিংসা ছড়ায়, যেভাবে সাম্প্রদায়িক অশান্তি ছড়ায়, সর্বদলীয় বৈঠকে উপস্থিত নেতারা তাতে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তাঁদের আশ্বস্ত করে রাজনাথ সিং বলেন, প্রতিবাদের নামে অশান্তি সৃষ্টির চেষ্টা সরকার কড়া হাতে মোকাবিলা করবে। সে জন্য প্রয়োজনীয় সব রকমের নির্দেশ রাজ্য প্রশাসনকে দেওয়া হয়েছে।

সন্ত্রাসের কারণেই পাকিস্তানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা ভারত বন্ধ রেখেছে। ভারতের ঘোষিত নীতি—সন্ত্রাস ও আলোচনা একসঙ্গে চলতে পারে না। কিন্তু আলোচনা বন্ধ থাকলেও সন্ত্রাস অব্যাহত। বিশেষ করে কাশ্মীর উপত্যকায়। পুলওয়ামায় এবার যা ঘটে গেল, উপত্যকায় তা অতীতের সব নজির ছাপিয়ে গেছে। ওই ঘটনার পর পাকিস্তানের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়াতে ভারত উঠেপড়ে লেগেছে। পরমাণু শক্তিধর পি-৫ রাষ্ট্রগুলোর পাশাপাশি ভারতীয় পররাষ্ট্রসচিব বিজয় গোখেল পুলওয়ামা নিয়ে কথা বলেছেন ২৫টি দেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে। কথা বলেছেন জাপান, জার্মানি, দক্ষিণ কোরিয়াসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রের খবর, প্রত্যেক দেশই পাকিস্তানে আশ্রিত জঙ্গিগোষ্ঠী জইশ-ই-মুহাম্মদ ও লস্কর-ই-তাইয়েবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পক্ষে। তারা মনে করে, পাকিস্তানের উচিত অবিলম্বে এই জঙ্গিগোষ্ঠীদের সব রকমের সহায়তা বন্ধ করে দেওয়া।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও জোরালোভাবে ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছে। তারা বলেছে, ভারতের অধিকার আছে আত্মরক্ষার জন্য সক্রিয় হওয়া। ভারতের যেকোনো পদক্ষেপকে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন করবে বলে জানিয়েছেন সে দেশের নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন। বোল্টনের সঙ্গে শুক্রবার কথা বলেন ভারতের নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল। ওই আলাপের পর সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে বোল্টন বলেন, আত্মরক্ষায় ভারত যা করবে, যুক্তরাষ্ট্র তাকে সমর্থন দেবে। তিনি আরও বলেন, পাকিস্তান ‘সন্ত্রাসের আঁতুরঘর’ হয়ে উঠেছে। জঙ্গিদের সব রকম মদদ দিচ্ছে। এখনই মদদ বন্ধ না করলে, তার ফল ভুগতে হবে। হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব সারা স্যান্ডার্সও এক বিবৃতি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সন্ত্রাসবাদ পৃথিবীর নিরাপত্তা নষ্ট করছে। পাকিস্তান এখনই সন্ত্রাসীদের আশ্রয় ও প্রশ্রয় দেওয়া বন্ধ করুক।

বিজেপি একার ক্ষমতায় ভারতের শাসনভার গ্রহণের পর কড়া হাতে জঙ্গি দমনের নীতি গ্রহণ করে। কিন্তু তা সত্ত্বেও গত পাঁচ বছরে উপত্যকায় সেনাবাহিনী ও ঘাঁটির ওপর প্রায় কুড়িটি বড় হামলা হয়েছে। তাতে নিহত হয়েছেন সাড়ে চার শরও বেশি জওয়ান। জঙ্গি মোকাবিলায় ভারত সার্জিক্যাল স্ট্রাইকও করেছে। কিন্তু তাতেও সন্ত্রাসবাদে লাগাম পরানো যায়নি। বরং কাশ্মীর উপত্যকায় দেশি জঙ্গিদের তৎপরতা বেড়েছে। পুলওয়ামার ঘটনার পর ভারতীয় গোয়েন্দারা আজ স্বীকার করতে বাধ্য হচ্ছেন, দক্ষিণ কাশ্মীরের এক বিস্তীর্ণ এলাকা সন্ত্রাসবাদীদের কাছে প্রায় মুক্তাঞ্চল। ফলে বিজেপির দমননীতি কতটা ফলপ্রসূ, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়েই।