Thank you for trying Sticky AMP!!

তৃণমূল-বিজেপি একই পথের পথিক?

ভারতে বিভিন্ন রাজ্যে যে দল শক্তিশালী, তাদের মধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ করে ক্ষমতা দখলের একটা প্রবণতা তৈরি হয়েছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করা, মনোনয়নপত্র জমা দিতে বাধা সৃষ্টি করা—এমন বিষয়গুলো গণতন্ত্রের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। অবশ্য সরকার গঠনের পর শাসকেরা দাবি করছেন, বিরোধী শক্তিগুলোর নির্বাচন করার ক্ষমতা নেই, তাই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতছেন তাঁরা।

চলতি বছরে পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত নির্বাচনে ৩৪ শতাংশ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে রেকর্ড গড়েছে শাসক দল তৃণমূল। ত্রিপুরায় ৯৬ শতাংশ আসনে জিতে বিজেপিও পাল্টা রেকর্ড গড়েছে। জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের পঞ্চায়েত নির্বাচনেও বিজেপি জিতেছে অধিকাংশ আসনে।

পশ্চিমবঙ্গে তিন স্তরবিশিষ্ট পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থীরা ৩৪ শতাংশ আসনে জয়লাভ করার পর প্রতিবাদ জানায় বিজেপি, কংগ্রেস ও বাম দল। বিজেপি ও বাম দল ভারতের উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হয়। ওই নির্বাচনে বীরভূমের জেলা পরিষদের ৪২টি আসনেই জিতেছিল তৃণমূল। কারণ, বিরোধীরা একটি আসনেও প্রার্থী দিতে পারেনি। এ ধরনের চিত্র ছিল পশ্চিমবঙ্গজুড়ে।

একই চিত্র দেখা গিয়েছিল জম্মু ও কাশ্মীরের পঞ্চায়েত নির্বাচনেও। অধিকাংশ আসনে জয়ী হয় বিজেপি। অবশ্য ওই নির্বাচন বয়কট করেছিল রাজ্যের দুই শক্তিশালী রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল কনফারেন্স এবং পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টি বা পিডিপি। ফলে বিজেপির জয়ের পথ প্রশস্ত হয়।

জম্মু কাশ্মীরের এই ফলাফলের পর তৃণমূল কংগ্রেসের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, ‘কিছু না জেনে আমাদের বিরুদ্ধে হামলা আর মামলা করতেই ব্যস্ত থাকে বিজেপি। আর নিজেদের পালা এলে ওরা বুঝতে পারে ব্যাপাটি নতুন নয়।’

গত শুক্রবার এই বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংকে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকেরা। জবাবে রাজনাথ সিং বলেন, ‘এটা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। পশ্চিমবঙ্গেও ৩৪ শতাংশ আসনে লড়াই হয়নি।’

বিজেপির পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, ‘জম্মু কাশ্মীর আর পশ্চিমবঙ্গের অবস্থা এক নয়। জম্মু কাশ্মীরে রাজ্যের সবচেয়ে বড় দুটি দল নির্বাচন বয়কট করেছে। তাই বিনা লড়াইয়ে বহু আসনে জিতেছে বিজেপি। আর পশ্চিমবঙ্গে তো লড়াই করতেই দেওয়া হয়নি। নির্বাচনও বয়কট করেনি কেউ। আর পশ্চিমবঙ্গে ছিল শাসক দলের শাসানি, ভয়ভীতি প্রদর্শন, মনোনয়নপত্র জমা দিতে বাধা দেওয়ার ঘটনা সঙ্গে গুলি, বোমার লড়াই। তাই পশ্চিমবঙ্গ ও জম্মু কাশ্মীরের প্রেক্ষাপট এক নয়।’

দিলীপ ঘোষ বলেছেন, ‘ত্রিপুরায় আমরা ৯৬ শতাংশ আসনে জিতলেও আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল না। বহু আসনেই বিরোধীরা নির্বাচন না করায় আমরা জিতেছি।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের বক্তব্য নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিধানসভার বামদলীয় পরিষদীয় দলের নেতা বিধায়ক সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, ‘জম্মু কাশ্মীরে বিনা লড়াইয়ে বিজেপির জয়ের যুক্তি দাঁড় করতে গিয়ে বাংলার পঞ্চায়েত ভোট লুটপাটকে অনুমোদন দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং। বিজেপি-তৃণমূলের বিরোধিতা যে ছায়াযুদ্ধ, তা ফের স্পষ্ট হয়ে গেল রাজনাথের বক্তব্যে। ঝুলি থেকে বিড়াল বেরিয়ে পড়েছে। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ের প্রশ্নে তৃণমূল-বিজেপি যে একই পথের পথিক, তা আবার প্রমাণিত হলো।’