Thank you for trying Sticky AMP!!

দিল্লির আদালতকক্ষে অস্ত্রধারীদের হামলা, নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন

আদালতে হামলাকারীরা।

জনপ্রিয় হিন্দি সিনেমা শুট আউট অ্যাট লোখান্ডওয়ালার ধাঁচে এ খবরের শিরোনাম হতে পারে ‘শুট আউট অ্যাট রোহিনী’। শুক্রবার বেলা দুইটার দিকে ভারতের দিল্লির রোহিনী আদালতের একটি এজলাসে সিনেমার মতোই রোমহর্ষ গোলাগুলির ঘটনা ঘটে গেল। বিচারপতি গগনদীপ সিংয়ের সামনেই অতর্কিত এই গুলি চালানোর ঘটনায় তিনজন নিহত হয়েছেন, আহত একাধিক।

আহত ব্যক্তিদের মধ্যে আছেন এক নারী আইনজীবী। তবে নিরাপত্তাবেষ্টনী ফাঁকি দিয়ে আততায়ীরা কীভাবে আদালতকক্ষে ঢুকল, সেই প্রশ্ন বড় হয়ে উঠেছে। প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছেন দিল্লির নবনিযুক্ত পুলিশ কমিশনার রাকেশ আস্তানাও। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অমান্য করে সম্প্রতি তাঁকে এই পদে বসানো হয়।

নিহত তিনজনের একজন দিল্লির দাগি অপরাধী জিতেন্দ্র মান গোগী। অন্য দুজন ভাড়াটে খুনি। খুন, জখম, চাঁদাবাজি, অপহরণসহ একাধিক অপরাধের সঙ্গে যুক্ত গোগীকে গত বছর এপ্রিলে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। সেই থেকে দিল্লির তিহার জেলে তিনি বন্দী ছিলেন। শুক্রবার বেলা পৌনে দুইটা নাগাদ পুলিশি প্রহরায় তাঁকে আদালতে নিয়ে আসা হয়। গোগীকে মারতে আগে থেকেই অস্ত্রসহ আদালতকক্ষে হাজির ছিল প্রতিপক্ষ শিবিরের দুই আততায়ী। তাদের পরনে ছিল আইনজীবীর পোশাক।

গোগীর বিরুদ্ধে মামলার সওয়াল–জবাব শুরু হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা গোগীর দিকে এগিয়ে যায় ও তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে থাকে। এ ঘটনায় হতচকিত পুলিশ কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই সক্রিয় হয়ে ওঠে। আততায়ীদের লক্ষ্য করে তারাও পাল্টা গুলি ছোড়ে। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, দুপক্ষের মধ্যে প্রায় ৪০টি গুলিবিনিময় হয়। গুলির শব্দে আদালত চত্বরে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক ও উত্তেজনা। আদালতকক্ষের ভেতর ও বাইরে প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে যায়। মিনিট কয়েক ধরে এ রকম চলার পর স্তব্ধ হয় গুলির শব্দ। ততক্ষণে তিনজন নিথর। আদালত চত্বরে রক্তের ছোপ। আহত ব্যক্তিদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার তোড়জোড় শুরু হয়। বন্ধ হয়ে যায় আদালতের স্বাভাবিক কাজ।

দিল্লির পুলিশ কমিশনার রাকেশ আস্তানা সংবাদমাধ্যমকে জানান, গোগীর বিরুদ্ধ পক্ষ ‘টিল্লু গোষ্ঠী’ এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত বলে অনুমান। টিল্লুও দিল্লির দাগি অপরাধী। পুলিশের নজর রয়েছে তাঁর দিকেও। টিল্লুর লোকজনই গোগীকে আক্রমণ করেছে। পুলিশের পাল্টা গুলিতে আততায়ীরা মারা গেছে বলে পুলিশ কমিশনার জানান।

এই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বিবাদ বহু বছরের। পুলিশের হিসাবমতে, দুই দলের রেষারেষিতে এ পর্যন্ত দুই পক্ষের অন্তত ২৫ জন নিহত হয়েছে। এক দশকের বেশি সময় ধরে নানা ধরনের অপরাধের সঙ্গে তারা যুক্ত। দিল্লি পুলিশ একটা সময় গোগীর মাথার দাম ধার্য করেছিল ৫০ হাজার রুপি। এক বছর ধরে বিভিন্ন অপরাধের মামলায় দিল্লির তিহার জেলে বন্দী গোগীকে শুক্রবার এক মামলার শুনানিতে রোহিনী আদালতে হাজির করা হয়। তার পরেই এই ঘটনা।

ঘটনার কিছু সময়ের পর একাধিক ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায়। সেসব ভিডিও থেকে স্পষ্ট, আদালত চত্বরে নিরাপত্তার ‘বজ্র আঁটুনি’ কতটা ‘ফস্কা গেরো’ হয়ে গিয়েছে।
এ ঘটনায় নিরাপত্তার ঢিলেঢালা ভাব প্রকট হয়ে উঠেছে। প্রতিটি আদালত চত্বর নিরাপত্তায় মোড়া থাকার কথা। থাকার কথা এজলাসে ঢোকার আগে একাধিক মেটাল ডিটেক্টর। সেসব ছিল কি না, প্রথম প্রশ্ন। দ্বিতীয় প্রশ্ন, মেটাল ডিটেক্টর থাকলে কী করে অস্ত্রসহ কেউ এজলাসে ঢুকতে পারে? তৃতীয় প্রশ্ন, এত বড় একটা দুঃসাহসিক কাণ্ড ঘটতে চলেছে, তার কোনো আঁচ দিল্লি পুলিশের গোয়েন্দারা কেন পায়নি?

‘শুট আউট অ্যাট রোহিনী’ নিয়ে দিল্লি পুলিশ ও তার কমিশনারকে অনেক প্রশ্নের মুখে দাঁড় করাল। সবচেয়ে বড় হয়ে উঠেছে রাজধানী দিল্লির আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। দিল্লির আম আদমি পার্টির নেতা সঞ্জয় সিং সরাসরি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর প্রতি প্রশ্ন তুলে টুইট করে জানতে চেয়েছেন, ‘ন্যায়ালয়ে গুলির শব্দ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কী করছেন?’ আম আদমি পার্টি প্রশ্ন তুলেছে পুলিশ কমিশনার রাকেশ আস্তানার নিয়োগ নিয়েও। দলীয় নেতারা বলেছেন, কেন্দ্রীয় সরকার সব নির্দেশ অবজ্ঞা করে রাকেশ আস্তানাকে কমিশনার করেছে। হাইকোর্টের উচিত নিজে থেকে কমিশনারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।

আস্তানার অবসর গ্রহণের ঠিক আগে তাঁকে দিল্লির পুলিশ কমিশনার পদে নিযুক্ত করে মোদি সরকার। তা করতে গিয়ে সরকার সুপ্রিম কোর্টের স্পষ্ট নির্দেশ অমান্য করেছে বলে অভিযোগ। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ, ছয় মাসের কম চাকরির মেয়াদ থাকা কাউকে দিল্লি পুলিশের কমিশনারের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ করা যাবে না। এই নিযুক্তিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টে মামলা করা হয়েছে। হাইকোর্টে এ নিয়ে শুনানিও চলছে। শুক্রবার রোহিনী আদালতের রোমহর্ষ ঘটনা নিরাপত্তার পাশাপাশি এই নিযুক্তিকেও নতুন বিতর্কের মধ্যে দাঁড় করাল।