নাগরিকত্ব কেড়ে নিতে নাগরিকত্ব আইন নয়: মোদি
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) নিয়ে ভয়ের কিছু নেই। এ আইন নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেছেন মোদি।
আজ রোববার সকালে পশ্চিমবঙ্গের হাওড়ার বেলুড় মঠে জাতীয় যুবসমাবেশে কথাগুলো বলেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত হয় এ সমাবেশ। মোদি গতকাল শনিবার কলকাতা সফরে আসেন। গতকাল তাঁর সফরের বিরোধিতা করে নগড়জুড়ে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। মোদির সফরের বিরোধিতায় নামে কংগ্রেস ও বাম দলগুলো। বিক্ষোভকারীরা সিএএ ও জাতীয় নাগরিক নিবন্ধনের (এনআরসি) বিরোধিতা এ দুইয়ের বাতিল চান।
তবে মোদি আজ বলেন, ‘কিছু মানুষ রাজনৈতিক কারণে সিএএ নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। নাগরিকত্ব আইন নিয়ে অনেক ভুল ধারণা ঢুকিয়ে দিচ্ছে। সরকার রাতারাতি এই আইন আনেনি। সিএএ নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার জন্যও আনা হয়নি। এই আইন আনা হয়েছে নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য।’
গতকাল সন্ধ্যায় মোদি যোগ দেন কলকাতার ওল্ড কারেন্সি ভবনে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে। এরপর তিনি কলকাতার মিলেনিয়াম পার্কে উপস্থিত থেকে উদ্বোধন করেন কলকাতার ঐতিহ্যবাহী হাওড়া সেতুর আলো ও ধ্বনি প্রকল্পের। উদ্বোধনের পর মোদি মিলেনিয়াম পার্ক থেকে সোজা লঞ্চে করে চলে যান ঠাকুর রামকৃষ্ণ দেব ও স্বামী বিবেকানন্দের স্মৃতিবাহী বেলুড় মঠে। রাত কাটান এই বেলুড় মঠের বিদেশিদের জন্য তৈরি গেস্ট হাউসে। রাতেই তিনি শ্রীরামকৃষ্ণ, স্বামী বিবেকানন্দ ও সারদা মাকে নিবেদন করা প্রসাদ গ্রহণ করেন।
আজ ভোরে প্রধানমন্ত্রী বেলুড় মঠের মূল মন্দিরে গিয়ে মঙ্গলারতি দেখেন। তারপর স্বামী বিবেকানন্দের স্মৃতিবাহী কক্ষে গিয়ে স্বামীজিকে শ্রদ্ধা জানান এবং প্রার্থনা করেন। এরপর বেলুড় মঠে স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত জাতীয় যুব অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
আজকের সমাবেশে মোদি আরও বলেন, ‘৭০ বছর ধরে পাকিস্তানে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার চলছে। এর জবাব দিতে হবে পাকিস্তানকে। পাকিস্তানের সেসব মানুষ, যাঁরা এসেছেন, তাঁদের কি আমরা নাগরিকত্ব থেকে ফিরিয়ে দিতে পারি? তাঁদের কি মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে পারি? তাই শরণার্থী আর উদ্বাস্তুদের জন্য আনা হয়েছে এই সিএএ।’
মোদি আরও বলেছেন, উত্তর–পূর্ব ভারতে সিএএর প্রভাব পড়বে না। ছাত্ররা বুঝতে পারছেন সিএএ। কিন্তু রাজনীতিবিদেরা বুঝতে চাইছেন না। বুঝতে দেওয়া হচ্ছে না।
বেলুড় মঠের অনুষ্ঠান শেষ করে মোদি চলে আসেন কলকাতার নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে আয়োজিত কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টের ১৫০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে। এখানে মোদি সিএএ বা এনআরসি নিয়ে কোনো কথা না বললেও কেন্দ্র ও রাজ্য সরকরের নানা প্রকল্প, উন্নয়ন ও অর্থ বরাদ্দ নিয়ে কথা বলেন। তিনি অবশ্য এখানে নতুন করে ঘোষণা দেন কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টের নাম বদলের। বলেন কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টের নাম হবে ‘শ্যামা প্রসাদ মুখার্জি পোর্ট’। এই পোর্টকে নতুন ভারতের প্রতীক হিসেবে গড়ে তোলা হবে।
মোদির সফরের বিরোধিতায় গতকালের মতো আজও কলকাতার বিভিন্ন কলেজ–বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ দেখান। কলকাতার ধর্মতলার ডরিনা ক্রসিংয়ে প্রতিবাদ মিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ করে ধ্বনি দেন ‘গো ব্যাক মোদি।’ দেখান কালো পতাকা। এ সময় বিক্ষোভকারীরা পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান।
যুব কংগ্রেসের সমর্থকেরা মোদির সভাস্থল নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামের গেটের কাছে কালো পতাকা নিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে গেলে পুলিশ কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে আটক করে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। অন্যদিকে, রানি রাসমণি অ্যাভিনিউতে সমাবেশ করে তৃণমূলের ছাত্রসংগঠন তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। সেখানেও দাবি তোলা হয় সিএএ ও এনআরসি বাতিলের।
এদিকে বেলুড় মঠে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের কড়া সমালোচনা করেছে বাম দল, কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেস। তাঁরা অভিযোগ করেন, বেলুড়ের ঐতিহ্যকে মাটিতে মিশিয়ে বেলুড়কে সিএএ রাজনৈতিক মঞ্চ করেছেন মোদি।
কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি সোমেন মিত্র আজ ধর্মতলার সমাবেশ থেকে বলেন, মোদি বেলুড়কে সিএএ মঞ্চ হিসেবে ব্যবহার করেছেন। এটা অবাঞ্ছিত।
অন্যদিকে, বাম নেতা মহম্মদ সেলিম বলেছেন, বেলুড় মঠকে সিএএ মঞ্চ হিসেবে ব্যবহার করেছেন মোদি।