Thank you for trying Sticky AMP!!

পঞ্চায়েত নিয়ে ধাক্কা খেল মমতা সরকার

অনেক জায়গায় এমন মুখোশ পরা ব্যক্তিদের বাধায় বিরোধী দলগুলো মনোনয়ন পত্র জমা দিতে পারেনি। প্রথম আলো ফাইল ছবি

পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস জোর ধাক্কা খেল হাইকোর্টে। আজ সোমবার পঞ্চায়েত নির্বাচনে একক বেঞ্চের দেওয়া স্থগিতাদেশকে চ্যালেঞ্জ করে যে আবেদন ডিভিশন বেঞ্চে করা হয়েছিল, তা খারিজ করে দিলেন কোর্ট। আগামীকাল মঙ্গলবার একক বেঞ্চে এই মামলার শুনানি।

পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের বিরোধী দলের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে বাধাদান এবং সন্ত্রাসের আশ্রয় নেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে কলকাতা হাইকোর্টে বিজেপি, বামদল ও কংগ্রেসের দায়ের করা মামলার আজ সোমবার ছিল শুনানির দিন। গত বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সুব্রত তালুকদারের একক বেঞ্চ বিরোধীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পঞ্চায়েত নির্বাচনের যাবতীয় কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ জারি করেন ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত। সেই মোতাবেক আজ ১৬ এপ্রিল সোমবার ছিল শুনানির দিন।

কিন্তু হাইকোর্টের একক বেঞ্চের এ আদেশে সন্তুষ্ট হতে না পেরে তৃণমূল কংগ্রেস বিচারপতির ওপর পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনে এ আদেশের বিরুদ্ধে ন্যায়বিচার পাওয়ার লক্ষ্যে ডিভিশন বেঞ্চে মামলার শুনানি গ্রহণের আবেদন করে। সেই আবেদন গ্রহণ করে হাইকোর্ট মামলাটির শুনানি গ্রহণের জন্য হাইকোর্টের বিচারপতি বিশ্বনাথ সমদ্দার ও বিচারপতি অরিন্দম মুখোপাধ্যায়ের সমন্বয়ে গঠন করে ডিভিশন বেঞ্চ। আজ এই ডিভিশন বেঞ্চের শুনানির আগেই একক বেঞ্চের বিচারপতি সুব্রত তালুকদার জানিয়ে দেন, তাঁর আদালতে থাকা আজকের মামলার শুনানি হবে আগামীকাল মঙ্গলবার তাঁরই এজলাসে। একই সঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচনের ওপর আরোপিত স্থগিতাদেশের মেয়াদও আগামীকাল পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।

ডিভিশন বেঞ্চে আজ সকালে এই পঞ্চায়েত মামলার শুনানি হওয়ার পর বিকেলে সময় রাখে রায়ের জন্য। বিকেলে ডিভিশন বেঞ্চ তৃণমূলের আবেদন খারিজ করে দিয়ে মামলাটি পাঠিয়ে দেন হাইকোর্টের বিচারপতি সুব্রত তালুকদারের একক বেঞ্চেই। পাশাপাশি এই নির্দেশও দেন, এই মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি করে দেওয়ার। তাতে যদি একক বেঞ্চের প্রতিদিন শুনানি করতে হয়, তা করেও মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে। হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের এই নির্দেশ প্রকারান্তরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর দলকে জোর ধাক্কা দেয়। ফলে এই নির্দেশে অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে গেল যে নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে।

পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয় ২ এপ্রিল। শেষ হওয়ার কথা ছিল ৯ এপ্রিল। কিন্তু মনোনয়নপত্র জমার দিন থেকে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্যব্যাপী সন্ত্রাসের আশ্রয় নেয়। বিরোধী দলের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে বাধা, মনোনয়নপত্র ছিঁড়ে ফেলা, মনোনয়নপত্র জমা না দেওয়ার জন্য প্রার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি, মারপিট, বোমা হামলা, অস্ত্র নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় মিছিল করে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। বিরোধী দলকে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার কার্যক্রমে বাধা দেওয়ায় বহু জায়গায় বিরোধী দলের প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেননি। এরপরেই রাজ্য নির্বাচন কমিশনার অমরেন্দ্র কুমার সিং ৯ এপ্রিল মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য আরও এক দিন বাড়িয়ে দেন। কিন্তু রাজ্যের সরকারি দলের নেতা-মন্ত্রীদের চাপে পরের দিন সকালেই নির্বাচন কমিশনার আরেকটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য এক দিন বাড়ানোর বিজ্ঞপ্তিটি বাতিল করে দেন। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে বিজেপি সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়। একই দাবি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যায় ১৭টি বামদল ও কংগ্রেসও।

সুপ্রিম কোর্ট অবশ্য শুনানি শেষে গত বুধবার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার বিষয়টি নিষ্পত্তি করার জন্য আবেদনকারীদের কলকাতা হাইকোর্টে যাওয়ার পরামর্শ দেন। সেই লক্ষ্যে মামলা ওঠে কলকাতা হাইকোর্টে গত বৃহস্পতিবার। সেই মামলায় বিচারপতি সুব্রত তালুকদারের একক বেঞ্চ নির্বাচন কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ দিয়ে আজ ১৬ এপ্রিল পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন। সেই মামলার শুনানিও আগামীকাল পর্যন্ত এক দিনের জন্য পিছিয়ে দেন বিচারপতি। আগামীকাল বেলা দুইটায় সেই মামলার শুনানি হবে।

আগামী ১, ৩ ও ৫ মে পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত নির্বাচন হওয়ার কথা। সেই নির্বাচন ওই তারিখে হবে কি না, আজকে হাইকোর্টে মামলার শুনানির পর তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে রাজনৈতিক মহলে।

এবার পশ্চিমবঙ্গে গ্রাম পঞ্চায়েতের ৪৮ হাজার ৬৫০টি আসন, পঞ্চায়েত সমিতির ৯ হাজার ২১৭টি আসন এবং জেলা পরিষদের ৮২৫টি আসনে নির্বাচন হচ্ছে।