Thank you for trying Sticky AMP!!

পরস্পরকে দুষছে বিজেপি-তৃণমূল

তৃণমূল ও বিজেপি

ভারতের সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) এবং জাতীয় নাগরিক নিবন্ধনের (এনআরসি) পক্ষে বিপক্ষের আন্দোলন পশ্চিমবঙ্গে এখনো চলছে। সিএএ এবং এনআরসি বাতিলের দাবিতে রাজ্যজুড়ে আন্দোলন চলছে। এই আইন কার্যকর করার পক্ষেও আন্দোলন ও অভিনন্দন যাত্রা হচ্ছে। এই আন্দোলনের পক্ষে আছে বিজেপি। আর অন্যদিকে তৃণমূল কংগ্রেস, জাতীয় কংগ্রেস এবং বাম দলগুলো।

গতকাল শনিবারও ঐতিহাসিক নন্দীগ্রামে সিএএ এবং এনআরসির পক্ষে বিজেপি অভিনন্দন যাত্রা করেছে। কলকাতায় সিএএ এবং এনআরসি বাতিলের দাবিতে আন্দোলন জোরদার করেছে সর্বস্তরের জনগণ। ফলে গতকাল কলকাতা, নন্দীগ্রামে সিএএ ও এনআরসি বিরোধী আন্দোলন হয়েছে।

সিএএ এবং এনআরসি প্রতিবাদকারীরা বলেছে, বিজেপির অভিনন্দন যাত্রা মানে ‘বিজেপির ধ্বংসযাত্রা’। আর অন্যদিকে বিজেপি দাবি তুলেছে এই রাজ্যে ‘মৃত্যুঘণ্টা’ বেজে গেছে তৃণমূলের।

পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুর জেলার নন্দীগ্রামে বিজেপি সিএএ এবং এনআরসির পক্ষে বের করে অভিনন্দন যাত্রা। নন্দীগ্রাম হলো এক ঐতিহাসিক স্থান। এই নন্দীগ্রামে বামফ্রন্টের আমলে জমি বিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সেই ২০০৭ সালে। একই সঙ্গে মমতা টাটাকে ন্যানো গাড়ির কারখানা গড়ার জন্য হুগলির সিঙ্গুরে বামফ্রন্টের দেওয়া জমির বিরুদ্ধেও আন্দোলন গড়ে তুলেছিল মমতা জমিদাতা কৃষকদের পক্ষে। এই দুই আন্দোলনের জেরে বামফ্রন্টের ৩৪ বছর শাসনের অবসান হয়। এই আন্দোলনের জেরে ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসে মমতা। তাই মমতার কাছে আজও সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রাম ক্ষমতায় আসার পীঠস্থান রূপে পরিগণিত হয়।

সেই নন্দীগ্রামে সিএএ এবং এনআরসির পক্ষে গতকাল শনিবার সকালে অভিনন্দন যাত্রা বের করে বিজেপি। এই অভিনন্দন যাত্রার নেতৃত্ব দেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। কিন্তু নন্দীগ্রামের দিকে যাওয়ার পথে নন্দীগ্রামের কাছে রেয়াপাড়া এলাকায় এই মিছিল আটকে দেয় পুলিশ। পুলিশের অভিযোগ, অনুমতি ছাড়া এই মিছিল বের করেছে বিজেপি। বিজেপি দাবি করে তারা ১৫ দিন আগে নন্দীগ্রামে সভা করার জন্য ই-মেলে আবেদন করেছিল পুলিশের কাছে।

নন্দীগ্রামে বিজেপির সমর্থকেরা মিছিল নিয়ে সামনের দিকে এগোতে চাইলে পুলিশ আর সামনের দিকে বিজেপির মিছিল এগোতে দেয়নি। এ সময় পুলিশের সঙ্গে বিজেপি কর্মীদের ধস্তাধস্তিও হয়। বিজেপির দাবি, তাদের এই মিছিল ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিপেটাও করে। এরপরেই বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ গাড়ির ওপর দাঁড়িয়ে বলেন, ভারতের পার্লামেন্টে পাস হওয়া সিএএ মানতে হবে। অবিলম্বে এই রাজ্যে কার্যকর করতে হবে সিএএ।

এ সময় বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ আরও বলেন, পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের মৃত্যুঘণ্টা বেজে গেছে। আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় ফিরতে পারবে না। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি ক্ষমতায় আসবে। আর তখনই তার কর্মী সমর্থকদের গায়ে হাত দেওয়ার হিসাব বুঝে নেবে। দিলীপ ঘোষ নন্দীগ্রাম বিধানসভা আসনের বর্তমান বিধায়ক রাজ্যের পরিবহন মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর উদ্দেশে বলেন, আর এই আসনে জিততে পারবেন না। কোন আসনে লড়বেন ঠিক করুন। সামনে আসছে বিজেপির দিন।

শেষ পর্যন্ত পুলিশের রাস্তাজুড়ে ব্যারিকেড করায় বিজেপির কর্মী সমর্থকেরা তাদের মিছিলের ট্যাবলো নিয়ে সেখান থেকে চন্ডীপুরের দিকে রওনা হয়। আর পুলিশও ছুটে যায় সেদিকে। কিন্তু এই চন্ডীপুরের নিমচৌরিতে আটকে দেয় বিজেপির ট্যাবলো পুলিশ। বিজেপির অভিযোগ, সেই ট্যাবলো ভাঙচুরও করা হয়। বিজেপির অভিযোগ, এই ট্যাবলো ভাঙচুর করে তৃণমূল। যদিও তৃণমূল বিজেপির এই দাবি অস্বীকার করেছে।

দিলীপ ঘোষের এই মন্তব্যের পর পূর্ব মেদিনীপুরের তৃণমূলের জেলা সভাপতি সাংসদ শিশির অধিকারি পাল্টা বলেন, এত বিজেপির ‘অভিনন্দন যাত্রা নয়, ধ্বংস যাত্রা’। মানুষ আজ বিজেপির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। বিজেপিকে এই বাংলার মানুষ চায় না। তার ফল দেখতে পারবে সামনের ২০২১ সালের রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে। এই রাজ্যের মানুষ ফের ক্ষমতায় আনবেন মমতাকেই।

এই সিএএ এবং এনআরসি বিরোধী আন্দোলন কীভাবে পরিচালিত করতে হবে, আর সেই আন্দোলনের রণকৌশলই বা কী হবে সেই লক্ষ্যে গতকাল শনিবার সকালে কলকাতার প্রদেশ কংগ্রেস দপ্তরে এক সভায় বসেন এই রাজ্যের বিভিন্ন জেলা, থানা পর্যায়ের ১৮০ জন কংগ্রেস নেতা। এই সভায় সিএএ এবং এনআরসি বিরোধী আন্দোলনের দিক নির্দেশনা দেন কংগ্রেস নেতা ও ভারতের সাবেক অর্থমন্ত্রী পি চিদাম্বরম। তিনি জোর দিয়ে বলেন, এই সিএএ এবং এনআরসির বিরুদ্ধে জোর আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে প্রতিটি কংগ্রেস নেতা-কর্মীকে।

গতকাল শনিবার বিকেলে কলকাতায় সর্বস্তরের মানুষ এই সিএএ এবং এনআরসি বাতিলের দাবিতে এক প্রতিবাদ মিছিল বের করে। মিছিল শুরু হয় দক্ষিণ কলকাতার দেশপ্রিয় পার্ক থেকে। শেষ হয় মেনকা সিনেমা হলের সামনে। মিছিলেবিভিন্ন শিক্ষায়তনের ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক, সুধীজন, কবি-সাহিত্যিক-সাংবাদিক থেকে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, চলচ্চিত্র ও নাট্যাঙ্গনের তারকা সহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষজন যান। এঁদের মধ্যে ছিলেন চলচ্চিত্র পরিচালক অনীক দত্ত, নাট্যব্যক্তিত্ব চন্দন সেন, অভিনেতা সৌরভ চক্রবর্তী, অনির্বাণ ভট্টাচার্য, পদ্মনাভ দাসগুপ্ত, অভিনেত্রী সায়নী ঘোষ, কবি মন্দাক্রান্তা সেন, অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্র, বাম নেতা শতরূপ ঘোষ, লেখক-সাংবাদিক শমীক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ। তাঁরা সিএএ ও এনআরসি অবিলম্বে বাতিলের দাবি তোলেন। বলেন, এই বাংলায় কার্যকর করতে দেওয়া হবে না সিএএ এবং এনআরসি। বাংলার মানুষ তা রোধ করবে। বাংলার মানুষের যুগ যুগ ধরে লালন করা ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শকে বিসর্জন দেবে না এই বাংলা থেকে। বিজেপি সিএএ ও এনআরসির নামে ধর্মীয় বিভাজনকে মানবে না। এখানে সবাই ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শে লালিত হয়েছে, ভবিষ্যতেও হবে। বিসর্জন দেবে ধর্মান্ধতাকে।