Thank you for trying Sticky AMP!!

পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপির কৌশল

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে এখনো জটিলতা কাটেনি। মনোনয়নপত্র গ্রহণ ও বাছাই হলেও নির্বাচনের তারিখ দিতে পারেনি নির্বাচন কমিশন। তফসিল ঘোষণার সময় রাজ্য নির্বাচন কমিশন আগামী ১, ৩ ও ৫ মে এ নির্বাচন হবে বলে ঘোষণা করে।

বিক্ষুব্ধদের হয় প্রতীক দিয়ে নতুবা নির্দল প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়ে নির্বাচনের ফায়দা লুটতে চাইছে বিজেপি। বিজেপির লক্ষ্য ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচন। যদিও এবার ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে বিজেপি দাঁড় করিয়েছে ৩৫ হাজার প্রার্থী। কেবল ২৩ হাজার আসনে প্রার্থী দাঁড় করাতে পারেনি দলটি।

জরিপে দেখা গেছে, এবার গ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূলের ১১ হাজার ৮৬টি বেশি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে। পঞ্চায়েত সমিতিতে এই সংখ্যা ৩ হাজার ৬৪৩ এবং জেলা পরিষদে অতিরিক্ত ২৬০টি তৃণমূলের মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে। ফলে এই তিন পর্যায়ে তৃণমূলের অতিরিক্ত মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে ১৪ হাজার ৯৮৯টি। এই অতিরিক্ত বিক্ষুব্ধ তৃণমূল প্রার্থীকে বাগিয়ে আনতে নতুনভাবে উদ্যোগ নিয়েছে বিজেপি।

মনোনয়নপত্র জমাকে কেন্দ্র করে শাসক দলের বাধা, তাণ্ডব নিয়ে কলকাতা হাইকোর্ট এবং ভারতের সুপ্রিম কোর্টে বিরোধী দলের মামলার কারণে স্থগিত হয়ে যায় নির্বাচনী কার্যক্রম। পরে অবশ্য হাইকোর্টের নির্দেশে মনোনয়ন পর্ব শেষ হলেও নির্বাচন কমিশন এখনো ঘোষণা করতে পারেনি নির্বাচনের তারিখ।

রাজ্য সরকার এবং সেই লক্ষ্যে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন মুসলিম সংগঠন চাইছে রমজানের আগে নির্বাচন পর্ব সেরে নিতে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন এখনো স্থির করতে পারেনি নির্বাচনের তারিখ। তারা চাইছে তিন দিনে নির্বাচন পর্ব সেরে নিতে। তবে রাজ্য সরকার চাইছে এক দিনে নির্বাচন করতে।

নির্বাচন কমিশন দ্রুত এবং শান্তিপূর্ণভাবে এই নির্বাচন করার লক্ষ্যে ২৬ হাজার কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী নিয়োগের প্রস্তাব দিলেও তা খারিজ করে দিয়েছে রাজ্য সরকার। তারা বলেছে, রাজ্যের পুলিশ দিয়েই করা যাবে নির্বাচন। ফলে এই প্রশ্নে জটিলতা এখনো কাটেনি। আজ বৃহস্পতিবার এই জটিলতা কাটাতে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে এক বৈঠকে বসতে চলেছে রাজ্য সরকার।

মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর্ব চুকে গেলেও এখনো নির্বাচনের মাঠে রয়েছে বিক্ষুব্ধ তৃণমূল প্রার্থীরা। এ বছর ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের প্রথম পর্যায় গ্রাম পঞ্চায়েতের ৪৮ হাজার ৬৫০টি, থানা পর্যায়ের পঞ্চায়েত সমিতির ৯ হাজার ২১৭টি এবং জেলা পর্যায়ের ৮২৫টি জেলা পরিষদের আসনে নির্বাচন হচ্ছে।


জনমত সমীক্ষা
এবিপি-আনন্দ এবং সি-ভোটার এক যৌথ সমীক্ষায় বলেছে, সব জেলা পরিষদই এবার দখল করতে পারে বিজেপি। এই সমীক্ষা চালানো হয় জেলা পরিষদের ৮২৫টি আসনের ভোটারের ওপর। আজ সেই সমীক্ষার ফল প্রকাশ করেছে আনন্দবাজার পত্রিকা। তাতে বলা হয়েছে, জেলা পরিষদের ৮২৫টি আসনের মধ্যে ৫৩৮টি আসন জিততে পারে তৃণমূল। বিজেপি পেতে পারে ১৬৭টি আসন। বাম দল পেতে পারে ৭৩টি আসন আর কংগ্রেস পেতে পারে ৪৩টি আসন। ভোট প্রাপ্তির হার হতে পারে তৃণমূল ৩৪ শতাংশ, বিজেপি ২৬ শতাংশ, বাম দল ১৩ শতাংশ এবং কংগ্রেস ৭ শতাংশ।

এই সমীক্ষা প্রতিবেদনকে গুরুত্ব দেয়নি বিরোধীরা। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, বিজেপি এই নির্বাচনে আরও ভালো ফল করবে। তাঁরা ২০০ থেকে ২৫০টি আসন পাবে জেলা পরিষদে। বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো বলেই দিয়েছেন, তাঁরা ১০০ শতাংশ আসনেই জিতবে। এর পরে যা হওয়ার তা-ই হবে। আর রাজ্য কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তী বলেছেন, এই সমীক্ষা দিয়ে কী হবে? মনোনয়নেই কত কাণ্ড ঘটানো হলো, তারপরে ভোটে কী ঘটবে, তার তো আলামত পড়ে গেছে। তবে নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে কংগ্রেস বহু আসনে জিতবে।

তৃণমূলের গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব এই নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে, তারও ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে এই সমীক্ষায়। ৬১ শতাংশ বলেছে, গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব এই নির্বাচনে তৃণমূলের ওপর প্রভাব ফেলবে। আবার ৪৫ শতাংশ ভোটার বলেছেন, গ্রামীণ এলাকায় কর্মসংস্থানের হাল খারাপ হয়েছে। আবার ৫০ শতাংশ ভোটার এ কথাও বলেছেন, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য এক দিন বাড়তি সময় দেওয়ায় বিরোধীরা লাভবান হয়েছে। আর নির্বাচন নিয়ে নির্বাচন কমিশনের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট ঘটনায় ৬৭ শতাংশ ভোটার মনে করেন, এতে নির্বাচন কমিশনের ভাবমূর্তির ওপর কালির দাগ পড়েছে। সমীক্ষায় বলা হয়েছে, সব জেলা পরিষদেই জয়ী হতে পারে তৃণমূল। দ্বিতীয় স্থানে থাকবে বিজেপি, তৃতীয় স্থানে বাম দল এবং চতুর্থ স্থানে থাকবে কংগ্রেস।