Thank you for trying Sticky AMP!!

পশ্চিমবঙ্গে করোনায় মৃতকে শেষ দেখার সুযোগ

ধাপার শ্মশানঘাটে পুলিশের সহযোগিতায় করোনার মৃতকে দাহ করার ব্যবস্থা। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গ সরকার এই রাজ্যে করোনায় সংক্রমিত হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিকে পরিবারের সদস্যদের শেষ দেখার সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গতকাল শুক্রবার রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে প্রকাশিত এক নির্দেশে বলা হয়েছে, এখন থেকে এই রাজ্যে করোনায় সংক্রমিত হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিকে তাঁর স্বজনদের শেষ দেখার সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে।

এ ক্ষেত্রে স্বজনেরা আপনজনের মৃতদেহ দূর থেকে দেখতে পারবেন। কাছে যেতে বা স্পর্শ করতে পারবেন না। যে হাসপাতালে করোনারোগীর মৃত্যু হবে, সেখানেই মৃতদেহকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন মেনে প্লাস্টিকে মুড়ে রাখতে হবে। তবে মুখমণ্ডল থাকবে স্বচ্ছ প্লাস্টিকে মোড়ানো।


আগে করোনারোগীর মৃত্যুর হলে হাসপাতাল থেকে পরিবারকে শুধু মৃত্যু সংবাদ জানানো হতো । এরপর পৌর কর্মচারীরা নিজেদের এলাকার শ্মশানঘাটে দাহ ও কবরস্থানে দাফন করতেন। কলকাতার করোনায় মৃতদের কলকাতার বাইপাসের কাছে থাকা বেওয়ারিশ মানুষদের শ্মশানঘাটের চুল্লিতে দাহ করা হয়। আর মুসলিমদের কলকাতার বাগমারীর পুরোনো কবরস্থানে দাফন করা হয়।
করোনা রোগীদের মৃত্যুর পর তাঁদের দেখতে না পেরে অভিযোগ ওঠে নানা প্রান্ত থেকে। দাবি তোলা হয়, মৃত্যুর পর অন্তত একনজর তাদের দেখার সুযোগ করে দেওয়া হোক। এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল রাজ্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশ জারি করা হয়, স্বজনদের এই মৃতদেহ শেষবারের মতো দেখার সুযোগ থাকবে শুধু হাসপাতালের চৌহদ্দির ভেতরে থাকা মর্গের সামনে। এখানে একটি জায়গায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন মেনে প্লাস্টিকের বিশেষ ব্যাগে পুরে এবং মুখমণ্ডলকে স্বচ্ছ প্লাস্টিকের আবরণে ঢেকে তা শায়িত রাখা হবে মর্গের সামনের একটি বিশেষ স্থানে। সেখানেই মৃতের পবিারের ৪ জনকে ওই মৃতদেহ দেখার সুযোগ দেওয়া হবে। এরপর এখান থেকে মৃতদেহ নেওয়া হবে কলকাতার বাইপাসের বেওয়ারিশ সৎকারের শ্মশানঘাট বা বাগমারি কবরস্থানে। সেখানেই পৌরকর্মীরা শেষকৃত্য সম্পাদন করবেন। তবে যাঁরা মৃতদেহ দেখার সুযোগ পাবেন, তাঁদের ত্রিস্তরীয় মাস্ক ও গ্লাভস পরে যেতে হবে । দূর থেকে দেখবেন মৃতদেহ। স্পর্শ করতে পারবেন না।
এর আগে কলকাতায় করোনায় মৃত প্রথম ব্যক্তির সৎকার নিয়ে তুলকালাম কাণ্ড ঘটেছিল। গত ২৩ মার্চ পশ্চিমবঙ্গে করোনায় প্রথম সংক্রমিত হয়ে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা যান দমদম এলাকার ৫৭ বছর বয়সী এক ব্যক্তি। করোনায় সংক্রমিত হওয়ার আগে মধ্যপ্রদেশের বিলাসপুরে বন্ধুর এক ছেলের বিয়েতে গিয়েছিলেন তিনি। সেখান থেকে ফেরার পর তাঁর করোনার সংক্রমণ ধরা পড়ে। এরপর তাঁকে ভর্তি করা হয় কলকাতার বেসরকারি হাসপাতাল আমরিতে।

কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা
করোনারোগীদের মৃতদেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়ার দাবিতে শুক্রবারই কলকাতা হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা করেন ভিনিথ রুইয়া নামের এক ব্যক্তি। তিনি দাবি করেন, করোনারোগীর মৃত্যুর পর তাঁর দেহ যেভাবে সৎকার করা হয়, তা ভারতের সংবিধানবিরোধী। পরিবারের কাছেও কাছে বিষয়টি খুবই বেদনাদায়ক। পরিবারের সদস্যরাও মৃতদেহ দেখার সুযোগ পাচ্ছেন না । তাই তিনি মৃতদেহ শেষকৃত্যের জন্য পরিবারের হাতে তুলে দেওয়ার আবেদন জানান।

কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি থোট্টাথিল ভাস্করণ রাধাকৃষ্ণণ ও বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ ১১ জুন মামলার শুনানির তারিখ ধার্য করেন। কিন্তু বিকেলেই রাজ্য সরকার এক নির্দেশিকায় জানিয়ে দেয়, করোনায় মৃতদের এবার থেকে শেষ দেখার সুযোগ পাবেন মৃতের পরিবারের সদস্যরা।