Thank you for trying Sticky AMP!!

বিজেপির রথের চাকা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি

আসাম গণহত্যার বিরুদ্ধে কলকাতায় অনুষ্ঠিত তৃণমূলের প্রতিবাদ মিছিল। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের ন্যক্কারজনক ভূমিকার প্রতিবাদে গত ২৯ অক্টোবর কলকাতার সল্টলেকের সিবিআইয়ের কার্যালয়ের কাছে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছিল বাম দল সিপিএম। ওই সমাবেশ থেকে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র ঘোষণা দিয়েছিলেন, রাজ্যের মেহনতি ও শান্তিপ্রিয় মানুষ রাস্তায় নেমে বিজেপির রথযাত্রা আটকে দেবে।

প্রয়োজনে রাস্তায় মানুষের পাঁচিল তুলে দিতে হবে, যাতে বিজেপির রাস্তা স্তব্ধ হয়ে যায়, রথযাত্রা যেন কোনো পথ খুঁজে না পায়। মূলত ভারতের আসন্ন লোকসভা নির্বাচনকে ঘিরে প্রচার আরও জোরদার করতে পশ্চিমবঙ্গে তিন প্রান্ত থেকে তিনটি প্রচার–রথ নামানোর ঘোষণা দিয়েছে বিজেপি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সিপিএমের এই ঘোষণা।

বিজেপি বলেছে, আগামী ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তারা রাজ্যব্যাপী তিনটি সুসজ্জিত প্রচার–রথ বের করবে। প্রথম রথ ৩ ডিসেম্বর বের হবে বীরভূম জেলার তারাপীঠ থেকে। দ্বিতীয় রথ বের হবে ৫ ডিসেম্বর কোচবিহার থেকে আর তৃতীয় রথ বের হবে ৭ ডিসেম্বর দক্ষিণ ২৪ পরগনার গঙ্গাসাগর থেকে। আর এই তিন রথ কলকাতায় এসে পৌঁছাবে আগামী ২২ জানুয়ারি। এরপরই ২৩ জানুয়ারি কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে বিজেপির। এই সমাবেশে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এই মহাসমাবেশকে সফল করার জন্য প্রচার চালানো শুরু করেছে বিজেপি।

গত বৃহস্পতিবার রাতে আসামের তিনসুকিয়া জেলায় পাঁচ নিরীহ বাঙালিকে হত্যার ঘটনায় তেলেবেগুনে জ্বলে উঠেছে পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেস। গতকাল শুক্রবার এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে রাজ্যব্যাপী তৃণমূলের ডাকে অনুষ্ঠিত হয় প্রতিবাদ মিছিল এবং প্রতিবাদ সমাবেশ। দুপুরে দক্ষিণ কলকাতার ৮-বি বাসস্ট্যান্ড থেকে এ প্রতিবাদ মিছিল শুরু হয়ে শেষ হয় হাজরামোড়ে। সেখানে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপিকে একহাত নিয়ে বলেছেন, আসামের গণহত্যার পেছনে জঙ্গি সংগঠন নয়, বরং দায়ী বিজেপি। আলফা এই ঘটনার পর সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে, তারা এই গণহত্যার সঙ্গে জড়িত নয়।

সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী, রাজ্য মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমসহ তৃণমূলের নেতারা। সেখানেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীর উদ্দেশে বলেন, ‘আমি হাতজোড় করে অনুরোধ করছি, আমাদের নেত্রী আজ ফিরছেন। দরকার হলে তাঁর পায়ে গিয়ে পড়ব। অনুরোধ করব আমাদের আর আটকে রাখবেন না। আসামে এই গণহত্যার জন্য বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, কেন্দ্রীয় নেতা রাহুল সিনহারা যদি বাঙালিদের কাছে হাতজোড় করে ক্ষমা না চান, তবে আমরা এই রাজ্যে বিজেপির রথের চাকা নড়তে দেব না।’

পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল যুব কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় মমতার প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘একবার অনুমতি দিন, রথের “র”ও থাকবে না। দড়িও থাকবে না, চাকাও থাকবে না।’ অভিষেক এদিন বিজেপির উদ্দেশে বলেন, ‘আমাদের সৌজন্যকে দুর্বলতা ভাববেন না। অনেক হয়েছে, আর সহ্য করা হবে না।’

এই রাজ্যে বিজেপির হেভিওয়েট নেতারা লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন—এই প্রসঙ্গ টেনে অভিষেক চ্যালেঞ্জের সুরে বলেন, ‘যাকে খুশি নিয়ে আসুক ওরা। আনুক নরেন্দ্র মোদিকে, অমিত শাহকে, রাজনাথকে, জেটলিকে। চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি, ওদের জামানত যদি জব্দ করতে না পারি, তবে রাজনীতিতে আর থাকব না।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘এখন আলফার দিকে আঙুল তোলা হচ্ছে। কিন্তু তারা গতকাল প্রেস বিবৃতি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে, বর্বরোচিত ঘটনার সঙ্গে তাদের যোগ নেই। তাই আমি মনে করছি, এ ঘটনার পেছনে বিজেপির হাত আছে। কারা এই ঘটনা করেছে, তার তদন্ত হোক। সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে তদন্ত হোক।’ এদিন প্রতিবাদ সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়, রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী, সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন প্রমুখ।

ভারতের লোকসভার নির্বাচন দ্বারপ্রান্তে। আগামী বছরের মার্চ-এপ্রিলে এ নির্বাচন হওয়ার কথা। নির্বাচনকে ঘিরে ইতিমধ্যে রাজ্যের রাজনৈতিক তৎপরতা তুঙ্গে। প্রতিটি রাজনৈতিক দলই মাঠে নেমে পড়েছে প্রচারে। সবারই দাবি, জিততে হবে পশ্চিমবঙ্গের লোকসভা নির্বাচনে। কিন্তু কে জিতবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়। তবে বেশি আসন যে তৃণমূলের ঝুলিতে যাবে, তা নিশ্চিত। যদিও তৃণমূল দাবি করেছে, তারা এবার রাজ্যের ৪২টি আসনের সব কটিতেই জিতবে। ২০১৪ সালের সর্বশেষ লোকসভা নির্বাচনে ৪২ আসনের মধ্যে ৩৬টি আসনে জিতেছিল তৃণমূল। কংগ্রেস জিতেছিল ৪টি, সিপিএম ২টি এবং বিজেপি ২টি আসনে জয় পেয়েছিল।

পঞ্চায়েত নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে বাম দল এবং কংগ্রেসকে পরাস্ত করে রাজনৈতিক শক্তিতে দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসায় এখন চাঙা হয়েছে রাজ্য বিজেপি। তারাও ঘোষণা দিয়েছে, ৪২ আসনের মধ্যে তারা ২৬টি আসনে জিততে চলেছে। এবিপি আনন্দ-সি ভোটারের জনমত সমীক্ষায় বলা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের লোকসভার ৪২ আসনের মধ্যে মমতা পেতে পারেন ৩২টি আসন। ৯টি পেতে পারে বিজেপি আর একটি কংগ্রেস। তবে সিপিএম এবার একটি আসনও না পেতে পারে।