Thank you for trying Sticky AMP!!

করোনাকে তাড়া করে মডেল হচ্ছে ধারাবি

সবার আশঙ্কা ছিল, ধারাবিতে করোনার সংক্রমণের বিস্ফোরণ ঘটবে। কিন্তু যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ায় ঘটেছে উল্টোটা। ছবি: রয়টার্স

ভারতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আর মৃত্যু কিছুতেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা মহারাষ্ট্র রাজ্যে। ওই রাজ্যের রাজধানী মুম্বাইয়ে রোগীর সংখ্যা লাখ ছুঁয়ে যেতে পারে আগামী কয়েক দিনে। অথচ সেই শহরেরই ঘনবসতিপূর্ণ বিশাল এক বস্তি করোনা মোকাবিলায় দেখাচ্ছে দারুণ সাফল্য। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধারাবি বস্তি শুধু ভারতের জন্যই নয়, ঘনবসতিপূর্ণ যেকোনো দেশের জন্য করোনা মোকাবিলার রোলমডেল হতে পারে।

মুম্বাইয়ের সংশ্লিষ্ট পৌরসভার সহকারী কমিশনার কিরণ দিগাভকর ধারাবি বস্তিতে করোনা মোকাবিলার লড়াইয়ে কর্তৃপক্ষের নেতৃত্বে রয়েছেন। তিনি টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেছেন, ‘ধারাবি বস্তিতে জনঘনত্ব এতটাই যে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা অসম্ভব। কাজেই আমাদের সামনে একটাই বিকল্প ছিল, রোগীর সংখ্যা বাড়ার জন্য অপেক্ষা না করে ভাইরাসকে তাড়া করা। আমরা (ধারাবিতে) বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই রোগীদের প্রাথমিক অবস্থায়ই আলাদা করে ফেলতে পেরেছি। অথচ খোদ মুম্বাইয়ের অন্য এলাকাগুলোয় রোগীরা জটিলতা বাড়ার পর হাসপাতালে যাচ্ছেন।’

করোনা মহামারির সার্বক্ষণিক তথ্য প্রকাশকারী ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারস ডট ইনফোর তথ্যমতে, ভারতে গতকাল বুধবার শনাক্ত হওয়া সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা সাড়ে সাত লাখ ছাড়িয়েছে। মৃত্যু ২০ হাজার ৫০০ ছাড়িয়েছে মঙ্গলবারই। ওই দিন দেশটিতে মারা গেছেন ৪৭৯ জন করোনা সংক্রমিত রোগী। নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন ২৩ হাজারের বেশি। সংক্রমিত রোগীর সংখ্যায় ভারত এখন বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ দেশ। আর করোনায় মোট মৃত্যুতে অষ্টম শীর্ষ দেশ।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর তথ্যমতে, মহারাষ্ট্রে গতকাল পর্যন্ত ২ লাখ ১৭ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে। এখানে মৃত্যু ৯ হাজার ছাড়িয়েছে। মহারাষ্ট্রের রাজধানী এবং দেশের সবচেয়ে বড় শহর মুম্বাইয়ে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৮৬ হাজারের বেশি। এই শহরেরই ধারাবি বস্তিতে রোগী শনাক্ত হয়েছে ২ হাজার ৩৩৫ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১ হাজার ৭৩৪ জন। এখনো চিকিৎসাধীন ৫০০ জনের কিছু বেশি। মারা গেছেন ৮৬ জন। গত মঙ্গলবার এই বস্তিতে একজন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। আর গতকাল তিনজন।

এশিয়ার সবচেয়ে বড় বস্তি ধারাবির আয়তন আড়াই বর্গকিলোমিটার। এই বস্তিতে সাড়ে ছয় লাখ মানুষের বসবাস। ২০০৮ সালে অস্কারজয়ী চলচ্চিত্র স্লামডগ মিলিয়নিয়ার এই বস্তিতেই নির্মাণ করা হয়েছিল। গত এপ্রিলের প্রথম দিকে ধারাবি বস্তিতে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ এই এলাকা নিয়ে এরপর কর্তৃপক্ষের মাথাব্যথা শুরু হয়। কারণ, সবার আশঙ্কা ছিল, ধারাবিতে করোনার সংক্রমণের বিস্ফোরণ ঘটবে। কিন্তু যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ায় ঘটেছে উল্টোটা।

এনডিটিভি, টাইমস অব ইন্ডিয়া, হিন্দুস্তান টাইমসসহ ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, ধারাবি বস্তিতে করোনা মোকাবিলায় শুরুতেই কঠোর লকডাউন করে কর্তৃপক্ষ। চলাচলের ওপর আরোপ করা হয় বিধিনিষেধ। প্রথম রোগী শনাক্ত হওয়ার পর চিকিৎসাকর্মীরা এ পর্যন্ত বস্তির ৪৭ হাজার ৫০০ পরিবারের দরজায় কড়া নেড়েছেন। তাঁরা ওই সব পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের শরীরের তাপমাত্রা ও অক্সিজেনের মাত্রা পরিমাপ করেছেন। কারও মধ্যে সামান্য উপসর্গ পেলেই করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এতেই থেমে থাকেনি কর্তৃপক্ষ। বস্তির ভেতর পাঁচটি ফিভার ক্লিনিক স্থাপন করা হয়েছে। নিকটবর্তী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আর স্পোর্টস ক্লাবগুলোকে পরিণত করা হয়েছে কোয়ারেন্টিন সেন্টারে। বস্তির কারও শরীরে করোনার উপসর্গ দেখা দিলেই তাঁকে ওই সব কোয়ারেন্টিন সেন্টারে নেওয়া হচ্ছে।

কিরণ দিগাভকর জানান, ধারাবি বস্তিতে ব্যাপক হারে পরীক্ষা শুরুর পর রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়তে দেখে তাঁরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু পরে পরীক্ষা কর্মসূচি বাড়ানোর সুফলও পেয়েছেন তাঁরা। কারণ, উপসর্গ দেখা দেওয়ার আগেই সিংহভাগ রোগী শনাক্ত হয়েছে। ফলে ধারাবিতে করোনায় মৃত্যু ভারতেরই অন্যান্য অংশের চেয়ে তুলনামূলক অনেক কম।

ধারাবির সাফল্যের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনভিত্তিক স্বাস্থ্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ডিজিজ ডাইনামিকস অ্যান্ড পলিসির প্রতিষ্ঠাতা রামানান লক্ষ্মীনারায়ণ লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমসকে বলেছেন, ধারাবি বস্তিতে কর্তৃপক্ষ দারুণভাবে করোনা রোগী শনাক্ত ও চিকিৎসা এবং রোগীর সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের শনাক্ত করে কোয়ারেন্টিন করার পদক্ষেপ নিয়েছে। ঘনবসতিপূর্ণ এই এলাকায় সর্বোচ্চ সমন্বয় ছাড়া এটা সম্ভব ছিল না। তবে এখনই বিজয় নিশ্চিত হয়েছে তা বলা যাবে না।