Thank you for trying Sticky AMP!!

ভারতকে মহাকাশ শক্তিধর ঘোষণা, মোদির নির্বাচনী কৌশল?

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ফাইল ছবি

মহাকাশ শক্তিধর রাষ্ট্র হলো ভারত। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বুধবার জাতির প্রতি ভাষণে এই ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, ভারতীয় উপগ্রহ ধ্বংসকারী ক্ষেপণাস্ত্র মহাকাশে ৩০০ কিলোমিটার দূরে স্থাপিত একটি ‘লো অরবিট’ উপগ্রহ ধ্বংস করে মহাকাশ শক্তিধর রাষ্ট্রের মর্যাদা আদায় করেছে। মাত্র ৩ মিনিটের মধ্যে কাজটি সম্পন্ন হয়েছে। পৃথিবীর মাত্র ৩টি দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীন এই ক্ষমতার অধিকারী। 

তবে লোকসভা নির্বাচনের আগে এই ঘোষণাকে নির্বাচনী কৌশল বলে দাবি করেছেন বিরোধীরা।

আজ সকালে হঠাৎই প্রধানমন্ত্রীর টুইটার হ্যান্ডেলে জানানো হয়, দুপুর পৌনে ১২টা থেকে ১২টার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী এক গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা দেবেন। সেই ঘোষণা এল দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ। জাতির প্রতি ভাষণে এই সাফল্যের কথা জানিয়ে মোদি বলেন, ‘আজ দেশের কাছে এ এক দুর্দান্ত মুহূর্ত। আমাদের দেশের বিজ্ঞানীরা গর্ব করার মতো ঘটনা ঘটিয়ে মহাকাশ শক্তিধর রাষ্ট্র হয়েছে। শুধু জল বা স্থলই নয়, এবার থেকে আমরা ভারতের অন্তরিক্ষকেও সুরক্ষিত করলাম।’ ভারতকে শক্তিধর রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য তিনি দেশের মহাকাশবিজ্ঞানীদের অভিনন্দন জানান।

সরকারি ব্যাখ্যায় জানানো হয়, দেশের মহাকাশ-সম্পদ সুরক্ষিত রাখতে ভারত সফল কি না, তার প্রমাণ পেতেই এই পরীক্ষা চালানো হয়েছে। এই মুহূর্তে মহাকাশে ভারত বিভিন্ন ধরনের মোট ১০২টি উপগ্রহ পরিচালনা করছে। প্রধানমন্ত্রী এই ঘোষণার পাশাপাশি স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন, ভারতের এই সাফল্য কোনো বিশেষ দেশের বিরুদ্ধাচরণের জন্য নয়। এই পরীক্ষা কোনো আন্তর্জাতিক আইনও ভাঙেনি।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, যে উপগ্রহটি ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করে সেটিও ভারতীয়। মহাকাশবিজ্ঞানের পরিভাষায় সেটি হলো ‘লো আর্থ অরবিট স্যাটেলাইট’ যা সাধারণত বিভিন্ন ধরনের টেলিযোগাযোগের কাজে ব্যবহৃত হয়। ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের মাত্র তিন মিনিটের মধ্যে উপগ্রহটি ধ্বংস করে ফেলা হয়। এই পরিকল্পনার আনুষ্ঠানিক নাম ছিল ‘মিশন শক্তি’। এই সাফল্যের পর মোদি বলেন, দেশের নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক-প্রযুক্তিগত প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে এই অভিযান এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

লোকসভা ভোট শুরু হওয়ার দুই সপ্তাহ আগে এই ঘোষণা নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করছে কি না, সেই প্রশ্ন ইতিমধ্যেই উঠে গেছে। নির্বাচন কমিশন সূত্রের খবর, বিষয়টি তারা বিবেচনা করছে। কমিশনের এক সূত্রের কথায়, দেশের নিরাপত্তা-সম্পর্কিত কোনো ঘোষণা বা সিদ্ধান্ত নির্বাচন আচরণবিধির অন্তর্গত হয় না। সে জন্য কমিশনের অনুমতি নেওয়ারও প্রয়োজন নেই। তবে এই ক্ষেত্রে বিজ্ঞানীদের সাফল্যের কথা ঘোষণা করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে অন্য কোনোভাবে আচরণবিধি লঙ্ঘিত হয়েছে কি না, কমিশন তা বিবেচনা করবে।

বিরোধীরা কিন্তু মৌন নয়। কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী, সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদবসহ বিরোধী অনেক নেতা সামাজিক মাধ্যম মারফত দেশের বিজ্ঞানীদের অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করেছেন। ‘ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন’ বা ডিআরডিওর বিজ্ঞানীদের ভূয়সী অভিনন্দন ও প্রশংসা করে রাহুল লিখেছেন, ‘আপনারা আমাদের গর্বিত করেছেন।’ কিন্তু পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে বলেছেন, ‘আপনাকে ওয়ার্ল্ড থিয়েটার দিবসের জন্য অনেক শুভেচ্ছা।’ অখিলেশ যাদব, মায়াবতী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়রাও প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করে বলেছেন, প্রকৃত সমস্যা থেকে দেশবাসীর নজর ঘোরাতে এটা আর একটা নাটক। মমতা বলেছেন, যে সরকারের মেয়াদ শেষ তারা এই সাফল্যের কথা জানানোর মধ্য দিয়ে অক্সিজেন পেতে চাইছে। কংগ্রেস নেতা আহমেদ প্যাটেল জানান, ‘মনমোহন সিং প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন এই এ-স্যাট (অ্যান্টি স্যাটেলাইট মিসাইল) ক্ষেপণাস্ত্র প্রকল্প হাতে নিয়েছিলেন। আজ তা ফলপ্রসূ হয়েছে। এ জন্য বিজ্ঞানীদের ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংকে অভিনন্দন।’