Thank you for trying Sticky AMP!!

ভারতের সেনাপ্রধানের পাশে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী

>
বিপিন রাওয়াত
• রাওয়াতের মন্তব্য ঘিরে বিতর্ক।
• দ্য হিন্দু রাওয়াতের মন্তব্যকে ‘অস্বাভাবিক’ বলেছে।
• বিজয় কুমার ২০১০ সালের ৩১ মার্চ সেনাপ্রধানের দায়িত্ব পান।
• ২০১২ সালের ৩১ মে বিজয় কুমার অবসর নেন।
• অবসরের পরই বিজয় কুমার ভারতীয় জনতা পার্টিতে যোগ দেন।

ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল বিপিন রাওয়াতের পাশে দাঁড়ালেন দেশের সাবেক সেনাপ্রধান ও বর্তমানে দেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বিজয় কুমার সিং। জেনারেল রাওয়াতের ‘রাজনৈতিক’ মন্তব্য ঘিরে গড়ে ওঠা বিতর্ক সম্পর্কে তিনি বলেছেন, ‘সেনা প্রধান যা বলতে চান, তা বলতে পারেন। আমাদের দোষ হলো, সবকিছুর মধ্যেই আমরা রাজনীতি খুঁজি।’

সাবেক সেনাপ্রধান বর্তমান সেনাপ্রধানের বক্তব্য সমর্থন করলেও সর্বভারতীয় ইংরেজি দৈনিক দ্য হিন্দু সম্পাদকীয়তে জেনারেল রাওয়াতের মন্তব্যকে ‘অস্বাভাবিক’ বলে বর্ণনা করা হয়েছে। গতকাল শনিবার পত্রিকার সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, এমন রাজনৈতিক মন্তব্য না করা ভারতীয় সেনাবাহিনী ও গণতন্ত্র উভয়ের পক্ষেই মঙ্গলজনক। এই ঐতিহ্য থেকে জেনারেল রাওয়াতের বেরিয়ে আসা এবং রাজনৈতিক দল ও কূটনীতি নিয়ে ‘আলটপকা মন্তব্য দুর্ভাগ্যজনক’। দ্য হিন্দু লিখেছে, এ ধরনের মন্তব্য খোলা মনে ও বিশ্বাসে বলা হলেও তা অনর্থক বিতর্ক সৃষ্টি করে, যা সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তির পক্ষে ভালো নয়।

বিজয় কুমার সিং ২০১০ সালের ৩১ মার্চ সেনাপ্রধানের দায়িত্ব পান। ২০১২ সালের ৩১ মে তিনি অবসর নেন। অবসরের পরপরই তিনি ভারতীয় জনতা পার্টিতে যোগ দেন এবং ২০১৪ সালে লোকসভার নির্বাচনে জিতে মন্ত্রী হন। গতকাল শনিবার মুম্বাইয়ে এক অনুষ্ঠানে জেনারেল রাওয়াতের মন্তব্য নিয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘আজকাল সবকিছুরই রাজনৈতিকীকরণ করা হচ্ছে। সবকিছুর মধ্যে রাজনীতি খোঁজা আমাদের অভ্যাসও হয়ে গেছে। সেনাপ্রধান যা বলেছেন তা বলেছেন। উনি যা বলতে চান, বলুন না। আপনার পছন্দ না হলে হবে না?’

বিতর্কের শুরু গত বুধবার। দিল্লিতে এক আলোচনা সভায় জেনারেল রাওয়াত বলেন, আসামকে অস্থির করে রাখাটা পাকিস্তানের চক্রান্ত। এটা তাদের কাছে একটা ছায়াযুদ্ধ। বাংলাদেশ থেকে মুসলমানদের তারা আসামে পাঠিয়ে দিচ্ছে। এই কাজে পাকিস্তানকে মদদ দিচ্ছে চীন। জেনারেল রাওয়াত অবশ্য পাকিস্তান ও চীনের নাম করেননি। ওই দুই দেশকে তিনি ভারতের পশ্চিম ও উত্তরের প্রতিবেশী বলে বর্ণনা করেছেন। বাংলাদেশ থেকে মুসলমানদের আসামে চলে আসার প্রমাণ হিসেবে তিনি ওই রাজ্যের রাজনৈতিক দল এআইইউডিএফের উত্থানের প্রসঙ্গ টেনে আনেন। বলেন, বিজেপির চেয়েও এই দলটার বৃদ্ধি দ্রুত ঘটেছে।

সেনাপ্রধান অবশ্য আলোচনা সভায় এ কথাও বলেন, এই জনবিন্যাসের বদল ঘটানো সম্ভব নয়। আগে যেখানে সীমান্তবর্তী চার–পাঁচটি জেলায় মুসলমানের আধিক্য ছিল, এখন তা বেড়ে আট-নয় জেলা হয়ে গেছে। রাজ্যের সব মানুষের একীকরণ ও উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, সরকার ঠিক পথেই হাঁটছে।

তিন দিন কেটে গেলেও ভারতের রাজনৈতিক মহলে বিপিন রাওয়াত এখনো সমালোচিত। সামাজিকসহ কোনো কোনো মহলে সমর্থিতও। অটল বিহারি বাজপেয়ি ও লালকৃষ্ণ আদভানির ঘনিষ্ঠ বিজেপি নেতা সুধীন্দ্র কুলকার্নি বর্তমান সেনাপ্রধানের সমালোচনা করে এক নিবন্ধ লিখেছেন। তাতে তিনি বলেছেন, জঘন্যতম মন্তব্য করে বিপিন রাওয়াত লক্ষ্মণরেখা অতিক্রম করেছেন। তিনি লিখেছেন, সেনাবাহিনী দেশের সবচেয়ে বড় ধর্মনিরপেক্ষ ও অরাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। ভারতের রাষ্ট্রপতি ও বিচার বিভাগও ধর্মনিরপেক্ষ ও অরাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। কিন্তু তাদের চেয়েও সেনাবাহিনী বেশি ধর্মনিরপেক্ষ ও অরাজনৈতিক। এই বাহিনী এমনভাবে তৈরি যে ওই দুই বৈশিষ্ট্য নষ্ট হওয়ার নয়। ভারতের গর্বও সেটা।

কুলকার্নি প্রশ্ন তুলেছেন বিজেপি ও আরএসএস ওই চরিত্র বদলানোর চেষ্টা করছে কি না, তা নিয়ে। বিজেপি ও সংঘ পরিবারের ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে অসহিষ্ণুতার প্রসঙ্গ টেনে রাওয়াতের মন্তব্য উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন, রাজনীতি ও ধর্মীয় দুটিরই লক্ষ্মণরেখা তিনি অতিক্রম করেছেন। কুলকার্নি বলেছেন, এটাই প্রথম বিতর্ক নয়। এর আগে তিনি ‘আড়াই ফ্রন্টে’ যুদ্ধের কথা বলেছিলেন। চীন, পাকিস্তান দুটি ফ্রন্ট, অর্ধেক ফ্রন্ট হলো কাশ্মীর। তিনি এ কথাও বলেছিলেন, দেশের মুসলমান–অধ্যুষিত সীমান্ত এলাকা নিরাপত্তার পক্ষে ঝুঁকিপূর্ণ ও বিপজ্জনক। প্রকাশ্যে এমন ধরনের কথাবার্তা ভয়াবহ। দেশের একতা, সংহতি ও নিরাপত্তার পক্ষেও ক্ষতিকর।

এই বিতর্ক প্রসঙ্গে অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল দীপংকর ব্যানার্জি গতকাল শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, দুটি বিষয় মনে রাখতে হবে। প্রথম কথা, জেনারেল রাওয়াত চার দেয়ালের মধ্যে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এ ধরনের মন্তব্য করেছেন। তা খবরের কাগজে প্রকাশিত হয়েছে। আগে সংবাদমাধ্যমের এত রমরমা ছিল না। তাই অনেক কিছুই প্রকাশ্যে আসত না। দ্বিতীয়ত, উনি যা বলেছেন, তা পুরোপুরি নিরাপত্তাসংক্রান্ত। ওটা রাজনৈতিক নয়। তা ছাড়া দিন পাল্টাচ্ছে। পরিস্থিতির বদল ঘটছে। আজ নিরাপত্তা ও রাজনীতির পার্থক্য সেভাবে করা যায় না।

পক্ষে বিপক্ষে বিতর্ক অব্যাহতই। এই অবস্থায় নতুনভাবে উঠে এসেছে ভারতের পূর্ব ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘অবৈধ অনুপ্রবেশের’ প্রসঙ্গ। এবং তা সেই সময়ে, যখন আসামে নাগরিক–পরিচয়পঞ্জীকরণের কাজ চলছে দ্রুত লয়ে। আসামের শাসক দল বিজেপির দাবি, রাজ্যে প্রায় ৩০ লাখ অবৈধ অনুপ্রবেশকারী আছে, যারা বাংলাদেশ থেকে এসেছে।