Thank you for trying Sticky AMP!!

ভারতে গিয়ে কষ্টে সাবেক ছিটমহলবাসী

সাবেক ছিটমহলবাসীদের সঙ্গে আলোচনায় অপর্ণা সেন। ছবি: মাসুম থেকে পাওয়া

বাংলাদেশ থেকে ভারতে আসা সাবেক ভারতীয় ছিটমহলের বাসিন্দারা সুখে নেই। তাঁরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। কলকাতার মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ (মাসুম) এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানিয়েছে।

সাবেক ছিটমহল–বাসিন্দারা কেমন আছেন, তার খোঁজ নিতে মাসুমের কর্মকর্তা ও মানবাধিকার কর্মীরা ছুটে গিয়েছিলেন বিভিন্ন ক্যাম্পে। তাঁরা কথা বলেন সেখানকার অধিবাসীদের সঙ্গে। পরিদর্শন শেষে গতকাল রোববার মাসুমের উদ্যোগে কোচবিহারে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। এ সময় সাবেক ছিটমহলবাসীরা ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেন, এর চেয়ে তাঁরা বাংলাদেশেই ভালো ছিলেন। এখন তাঁদের মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে।

২০১৫ সালের ৩১ জুলাই ভারত ও বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থাকা উভয় দেশের ১৬২টি ছিটমহল বিনিময় হয়। ভারতের ভূখণ্ডে বাংলাদেশের ৫১টি আর বাংলাদেশের ভূখণ্ডে ভারতের ১১১টি ছিটমহল ছিল। এই ছিটমহল বিনিময়ের জন্য উভয় দেশে তীব্র আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। পরে দুই দেশের সরকার আইন বলে এই ছিটমহল বিনিময় করে। ফলে ভারতের অভ্যন্তরে থাকা ৫১টি বাংলাদেশি ছিটমহল ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়। আর বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থাকা ১১১টি ভারতীয় ছিটমহল অন্তর্ভুক্ত হয় বাংলাদেশের সঙ্গে।

ভারতে থাকা বাংলাদেশের ছিটমহলের ১৪ হাজার ২১৫ জন বাসিন্দা সেদিন বাংলাদেশে ফিরে না গেলেও বাংলাদেশ থেকে ৯২৭ জন ফিরে এসেছিলেন ভারতে। বাংলাদেশে তখন ভারতীয় ছিটমহলের বাসিন্দা ছিল ৩৭ হাজার ৩৩৪ জন। ফিরে আসা ৯২৭ জন ভারতীয়কে ঠাঁই দেওয়া হয় কোচবিহার জেলার দিনহাটা, মেখলিগঞ্জ ও হলদিবাড়ির অস্থায়ী ক্যাম্পে।

মাসুমের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলটি শনি ও রোববার পরিদর্শন করেন কোচবিহারের করলা-২, পশ্চিম বাকালির ছড়া ও ব্যাত্রীগাছি ছিটমহল। তাঁরা পরিদর্শন করেন বাংলাদেশ থেকে আসা ভারতীয় ছিটমহলবাসীদের ঠাঁই দেওয়া দিনহাটা আশ্রয়শিবিরও। প্রতিনিধিদলে ছিলেন মাসুমের সম্পাদক কিরীটি রায়, মানবাধিকার নেত্রী অপর্ণা সেন, বোলান গঙ্গোপাধ্যায়, মুদার পাথেরিয়া প্রমুখ।

সাবেক ছিটমহলবাসীরা প্রতিনিধিদলের কাছে বলেন, তাঁদের মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে। তাঁদের কাজ নেই, চাকরি নেই, পর্যাপ্ত রেশনের ব্যবস্থা নেই। পয়োনিষ্কাশন-ব্যবস্থা শোচনীয়। পানীয় জল ও চিকিৎসার অভাবে তাঁদের কষ্টে বাঁচতে হচ্ছে।

গতকাল সংবাদ সম্মেলনে মাসুমের নেতারা অভিযোগের সুরে বলেন, সাবেক ছিটমহলবাসী সুখে নেই। তাঁরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তাঁদের কাজ নেই। পর্যাপ্ত রেশন নেই। বিদ্যুৎ নেই। চিকিৎসা নেই। শৌচাগার ও পয়ঃপ্রণালির অভাব। সব মিলিয়ে তাঁদের মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে। ইতিমধ্যে বিনা চিকিৎসায় ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।

মাসুমের নেতারা জানান, সম্প্রতি মারা গেছেন পূর্তি বর্মণ নামে ২০ বছরের এক নারী। বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে তাঁর মৃত্যু হয়।

মাসুমের নেতারা আরও জানান, দাসিয়াছড়া ছিটমহলের রশিদুল ইসলাম কাজ না পেয়ে কাজের জন্য দিল্লিতে ছুটে গিয়েছিলেন। কিন্তু দিল্লিতে গিয়ে ধরা পড়েন অবৈধ অনুপ্রবেশকারী হিসেবে।

সাবেক ছিটমহলবাসীর অভিযোগ, তাঁরা যে আশা নিয়ে ভারতে নিজ দেশে ফিরে এসেছিলেন, তাঁদের সেই আশা পূর্ণ হয়নি। তাঁরা চাইছেন তাঁদের বেঁচে থাকার ন্যূনতম ব্যবস্থা গ্রহণ করুক প্রশাসন। কাজ দিক, বেকারত্ব জীবনের অবসান ঘটাক। তাঁদের দেওয়া জমির অধিকার নিশ্চিত করুক প্রশাসন।