Thank you for trying Sticky AMP!!

মন্ত্রিত্বের পর বিধায়কের পদ ছাড়লেন শুভেন্দু

পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মন্ত্রী ও তৃণমূল নেতা শুভেন্দু অধিকারী

পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনকে ঘিরে এখন চওড়া হচ্ছে তৃণমূলের ভাঙন। বহু নেতা-কর্মী এখন তৃণমূল ছেড়ে পা বাড়িয়েছেন বিজেপির দিকে। জল্পনা চলছে, মমতার ওপর বিক্ষুব্ধ হয়ে এবার তৃণমূলের বহু সাংসদ, বিধায়ক, মন্ত্রী ও নেতা দল ছাড়ার উদ্যোগ নিয়েছেন।

মন্ত্রিত্বের পর এবার বিধায়কের পদও ছেড়ে দিলেন পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল নেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি ছিলেন রাজ্য মন্ত্রিসভার পরিবহন ও সেচমন্ত্রীর দায়িত্বে। রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনকে ঘিরে এখন চওড়া হচ্ছে তৃণমূলের ভাঙন। শুভেন্দুর বিধায়কের পদ ছাড়া সেই ভাঙনের এক বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করা হচ্ছে।

গত ২৭ নভেম্বর মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন শুভেন্দু অধিকারী। আর গতকাল বুধবার তিনি ছেড়েছেন তৃণমূল বিধায়কের পদ। গতকালই শুভেন্দু অধিকারী বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার চিঠি দেন রাজ্য বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বরাবর। বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বিধানসভায় উপস্থিত না থাকায় সেই চিঠি তিনি পৌঁছে দিয়েছেন স্পিকারের সচিবের হাতে।

যে দল ভাঙার খেলা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুরু করেছিলেন, সেই খেলা এবার তাঁর বিরুদ্ধেই শুরু হয়েছে। এটা মমতার ব্যর্থতা।
অধীর চৌধুরী, পশ্চিমবঙ্গ কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি

শুভেন্দু অধিকারীর বিধায়ক পদ ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর বিজেপিতে যোগদানের জল্পনা আরও দৃঢ় হয়েছে। রাজনৈতিক মহলের খবর, আগামী শনিবার পশ্চিমবঙ্গে দুদিনের সফরে আসছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। রাজ্যে তিনি সভা করবেন। সভা হবে মেদিনীপুরে শুভেন্দুর গড়েও। সেই সভায় শুভেন্দু বিজেপিতে যোগদান করবেন বলে খবর বেরিয়েছে। খবর, শুধু তিনিই নন, আরও কয়জন তৃণমূল সাংসদ, বিধায়ক ও নেতা-কর্মী যোগ দিতে পারেন বিজেপিতে।

শুভেন্দুর বিধায়ক পদ ছাড়ার পর তৃণমূল নেতা ও সাংসদ সৌগত রায় বলেছেন, ‘দুষ্টু গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভালো। শুভেন্দুর মতো দুষ্টু গরু যত তাড়াতাড়ি চলে যায়, ততই মঙ্গল দলের জন্য।’

বিরোধী নেতা পশ্চিমবঙ্গ কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেছেন, ‘যে দল ভাঙার খেলা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুরু করেছিলেন, সেই খেলা এবার তাঁর বিরুদ্ধেই শুরু হয়েছে। এটা মমতার ব্যর্থতা।’

রাজ্য বিধানসভার সিপিএমের পরিষদীয় দলের নেতা বিধায়ক সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, ‘দল ভাঙানোর রাজনীতি পশ্চিমবঙ্গে কোনো দিনই ছিল না। এটা তৃণমূল শুরু করেছে। এখন বিজেপিও সেই খেলা খেলছে।’

তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘যাঁরা প্রথম থেকে দলে আছেন, তাঁরা আছেন এখনো। দু-একজন আছেন, যাঁরা জোয়ারে আসেন, ভাটায় চলে যান।’

এদিকে গতকালই বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, ‘গণতন্ত্র নেই বলেই তৃণমূলের এই দশা। তৃণমূলে কারও সম্মান নেই। কাজ করার স্বাধীনতা নেই। তৃণমূল তো পার্টি নয়, ব্যক্তিগত সম্পত্তি। সে জন্যই এখন সবাই বিজেপিতে আসছে।’

শুভেন্দু অধিকারী একসময় ছিলেন মমতার ডান হাত। পশ্চিমবঙ্গের নন্দীগ্রাম আন্দোলনের মূল মুখ তিনি। নন্দীগ্রাম ও সিঙ্গুর আন্দোলনের জেরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আসেন। শুধু তা–ই নয়, শুভেন্দু ছিলেন তৃণমূল যুব কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতিও। শুভেন্দুর বাবা শিশির অধিকারী বর্তমানে একজন সাংসদ ও সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসেবে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার তৃণমূল সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন। তাঁর ছোট ভাই দিব্যেন্দু অধিকারীও সাংসদ। আরেক ভাই স্থানীয় পৌরসভার চেয়ারম্যান। মোটকথা, শুভেন্দু অধিকারীদের অধিকারীবাড়ি একসময় ছিল মমতাকে ক্ষমতায় নেওয়ার একটি দুর্গ।

কিন্তু মমতার ভাইয়ের ছেলে সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় রাজনীতিতে আসার পর থেকে শুভেন্দুর ক্ষমতা হ্রাস পেতে শুরু করে। একপর্যায়ে শুভেন্দুকে সরিয়ে তৃণমূল যুব কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি করা হয় অভিষেককে। এরপর থেকে শুভেন্দুর গুরুত্বও কমতে থাকে তৃণমূলের রাজনীতিতে। শুভেন্দুকে রাজ্যের তিনটি জেলার পর্যবেক্ষকের পদ থেকেও সরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর থেকে রাজ্যে গুঞ্জন শুরু হয় শুভেন্দু তৃণমূল ছাড়ছেন। এমন প্রচারও হয় বিজেপি শুভেন্দুকে পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে প্রচারের মুখ করে নির্বাচনে লড়তে পারে।
শুভেন্দু গতকাল বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পর এক চিঠিতে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়কে বলেছেন, তাঁকে এবার ফাঁসাতে চাইবে পুলিশ। তিনি রাজ্যপালের কাছে এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ চান।